২৩০ তম বর্ষে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো,এ বাড়ির তরোয়াল পুজো থেকে কনকাঞ্জলির বিশেষ উপাচার জেনে নিন
কলকাতার ঐতিহ্যের বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম উত্তরের শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো(ছোটবাড়ি, রাজা রাজকৃষ্ণ দেবের পুজো)। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের এই পুজো এবার পা দিল ২৩০ তম বর্ষে
কলকাতার ঐতিহ্যের বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম উত্তরের শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো(ছোটবাড়ি, রাজা রাজকৃষ্ণ দেবের পুজো)। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের এই পুজো এবার পা দিল ২৩০ তম বর্ষে
এবাড়ির দুর্গা পুজোর ইতিহাস
রাজা নবকৃষ্ণ দেবের ছেলে না হওয়ার জন্য পরবর্তী কালে ভাইপো গোপীমোহন দেবকে তিনি দত্তক নিয়েছিলেন। এরপর রাজার নিজের সন্তান হয়। নিজের ছেলে রাজা রাজকৃষ্ণ দেবের জন্মের খুশিতে আদি বাড়ির দক্ষিণ দিকে একটি ভবন তৈরি করে সেখানে আরও একটি পুজো শুরু করেন। এই পুজো শুরু হয় ১৭৯০ সাল থেকে। এবার এই পুজো ২৩০ বছরে পা রাখল।
শোভাবাজার অঞ্চলে এই পুজোটি রাজা রাজকৃষ্ণ দেবের পুজো নামে বিখ্যাত। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর পর শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো বড় ও ছোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। পরিবারের রাজকৃষ্ণ দেবের বাড়ির পুজোটি ছোট বাড়ির পুজো নামে পরিচিত।
ভারতের প্রথম ডাকের সাজের পুজো শুরু এখানে, প্রতিমার বৈশিষ্ট্য
পরিবারের সদস্যের থেকে জানা গেল, ২৩০ বছর আগে যে রীতি-নিয়ম মেনে পুজো শুরু হয়েছিল। সেই সব রীতি ধরে রেখে আজও পুজো এগিয়ে চলেছে। প্রতিমার ছাচ থেকে শুরু করে দেবীর আরাধনার নিয়ম একই রয়েছে। তবে সরকারের তৈরি কিছু নিয়মের বেড়াজালে কয়েকটি রীতি বদলে গিয়েছে। প্রতি বছর নতুন কাটামোয় পুজো হয়। বিসর্জনে সেবছরের কাটামো বিসর্জন হয়ে যায়। পরের বছর নতুন কাটামোয় পুজো হয়। এবাড়িতে ডাকের সাজের পুজো। একচালার প্রতিমা। পরিবারের সূত্রে জানা গেল, আগে জার্মান থেকে ডাকের মাধ্যমে রুপোর রাংতা আনা হত। ভারতের প্রথম ডাকের সাজের পুজো শুরু এখানে।
পুজোকে কেন্দ্র করে আগে গান বাজনার অনুষ্ঠান হত, নিমন্ত্রণপত্র লেখা হত হাতির দাঁতে
এই রাজবাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে আগে গান বাজনার অনুষ্ঠান হত। আগে পুজোর দিনগুলিতে এই রাজবাড়িতে যাত্রা, থিয়েটার, কবির লড়াই, বাই নাচ হত। রাজা নবকৃষ্ণ দেবই প্রথম পুজোর সময় এই বাড়িতে বাই নাচের আসর বসিয়েছিলেন। লখনউ, বেনারস থেকে বাই এসে দুর্গা পুজোর উৎসবের দিনগুলোর রাজবাড়ির নাচের আসর জমাতেন। পুজোর এই নাচের অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ কার্ডের রীতি করা হয়। সেই কার্ড দিয়েই অতিথিদের নিমন্ত্রণ করা হত। ১৯৪০ সালে এই বাড়ির পুজোর অনু্ষ্ঠানে নেচে গিয়েছিলেন গওহর জান। পরিবার সূত্রে জানা যায়,এই বাড়িতে একসময় নাকি হাতির দাঁতে নিমন্ত্রণ পত্র লেখা হত। সময়ের সাথে সাথে এখন এসব অবশ্য ফিঁকে হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এবাড়িতে এখনও জাঁকজমকের সঙ্গে দুর্গা পুজো হয়।
বলিদান প্রথা
এবাড়িতে বলিদান প্রথা রয়েছে। আখ, ছাঁচি কুমড়ো ও মাগুর মাছ বলি দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোয় শুরু ও শেষটা জানানোর জন্য আগে কামানের শব্দ করা হত। ব্রিটিশ আমলে সেই রীতি অবশ্য বন্ধ হয়ে যায়। এখন শূন্যে গুলি ছুঁড়ে সন্ধি পুজোর শুরু ও শেষটা জানানো হয়।
দশমীতে তরোয়াল পুজো
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। দশমীতে এবাড়িতে এই বিশেষ নিয়ম রয়েছে। উমার বিসর্জনের আগে তরোয়াল পুজো হয়। মর্ত্য থেকে দেবীকে বিসর্জনের দিন একা পাঠানো হয় না। উমার নিরাপত্তার জন্যই বিসর্জনের পর দশমীতে এবাড়িতে তরোয়াল পুজো করার নিয়ম। সকালে দেবীর দশমী পুজোর পর এই পুজো করা হয়।
বিসর্জনে কনকাঞ্জলি নিয়ম রয়েছে
বিসর্জনে কনকাঞ্জলির নিয়ম রয়েছে। বিসর্জনের দিন বাড়ির সবচেয়ে প্রবীণ মহিলা প্রতিমার পিছনে আঁচল পেতে দাঁড়াবেন। প্রতিমার প্রতিনিধি হিসেবে পুরোহিত এরপর উমার সামনে থেকে কনকাঞ্জলি হিসেবে ধান-দুর্ব্বা পিছনের দিকে ছুঁড়ে দেন। এবাড়িতে উমাকে বাড়ির মেয়ে হিসেবে দেখা হয়।
নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো
বিসর্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হত। উমাকে বাড়ি থেকে বিসর্জনের জন্য কাঁধে তোলা হলে একটি পাখি ও বিসর্জনের সময় আরেকটি পাখি ছাড়া হত। এখন খড়-মাটির একজোড়া নীলকণ্ঠ পাখি তৈরি করে তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে সেটিই বিসর্জন দেওয়া হয়।
[বাবু বাগানে পটের কাজে পরিবেশ রক্ষার মহান বার্তা]
[ দুর্গাপুজো ২০১৯ : 'আর নয় প্লাস্টিক', বল্লভপুরের থিম ভাবাচ্ছে সকলকে]