বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশকে বুড়ো আঙুল, রক্তদান করলেই মিলছে সোনার দুল
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশকে বুড়ো আঙুল, রক্তদান করলেই সোনার দুল। রবিবার এমনই একটি রক্তদান শিবির হয়ে গেল উল্টোডাঙার জওহরলাল দত্ত লেনে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় সোনার দুল সামনে আনা হয়নি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নির্দেশিকা অনুযায়ী, রক্তদান শিবিরে উপহার দেওয়া নিষিদ্ধ। একই নির্দেশিকা রয়েছে ন্যাশনাল এডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (ন্যাকো)-এরও।
কিন্তু তার পরেও সেই নির্দেশিকাকে অগ্রাহ্য করে উপহারের বিনিময়ে রক্ত সংগ্রহ চলছে অবাধেই।
মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দিয়ে রবিবার এমনই একটি রক্তদান শিবির হল উল্টোডাঙার জওহরলাল দত্ত লেনের মহিলা সেবা সংঘের পরিচালনায়। রক্তদান শিবির উপলক্ষ্যে দেওয়া পোস্টারে ছিল, লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত একজনকে সোনার কানের দুল উপহার দেওয়া হবে। পোস্টারে মুখ্য়মন্ত্রীর ছবির সঙ্গে ছিল কন্যাশ্রীর ছবিও। শিবিরে প্রায় ৫০ জনের মতো মহিলা রক্তও দেন। তবে, বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় সোনার দুল দেওয়ার বিষয়টিকে আর সামনে আনা হয়নি।
উল্টোডাঙার এই শিবিরে উপহারের বিনিময়ে রক্তদানকারীদের শিবিরে টানার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রাজ্যের রক্তদানে সুরক্ষায় বড়সড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে একই ধরনের ঘটনায় এর আগে বিভিন্ন ব্ল্যাড ব্যাঙ্কের কর্তারা স্বাস্থ্য ভবনে চিঠিও দেন।
কিন্তু চিঠি দেওয়ার পরও যে স্বাস্থ্য কর্তা কিংবা আয়োজকদের টনক নড়েনি তা বলাই যায়। রবিবারের ঘটনার ক্ষেত্রে আয়োজকরা অবশ্য সাফাই দিয়েছিলেন শিবির শুরুর আগে। তারা বলেছিলেন, মহিলা রক্তদানকারীদের উৎসাহিত করতেই লটারির মাধ্যমে ওই কানের দুল দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
বড় ব্যাগ, নন স্টিক ফ্রাইং প্যান, মোবাইল ফোনের পর সোনার কানের দুল। রক্তদান শিবিরের আয়োজকরা রক্তদাতাদের উৎসাহিত করতে আরও কতদূর যাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুরনো দিনের রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আয়োজকদের যোগাযোগ কতটা তা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন করছেন। তাঁরা বলছেন, আয়োজকদের এই ধরনের লোভনীয় "অফার"-এর ফলে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান না রেখেই রক্ত দেন। আবার অনেকে নিজেদের কোনও অসুখ থাকলে সেটা গোপনও করেন। ফলে রক্তদানে সুরক্ষা আদৌ বজায় থাকে কি? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এরাজ্যে রক্তদান আন্দোলনে জোয়ার আসে মূলত আশির দশকে। ১৯৮৭-৮৮ সাল নাগাদ বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার সময়ে যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর উদ্যোগে তা আরও বড় আকার নেয়। কারণ স্লোগানই ছিল রক্ত দিয়েই গড়া হবে বক্রেশ্বর। সেই সময়ের পর থেকেই রক্তদান শিবিরে আস্তে আস্তে উপহারের চল আসে। আর ২০০৯-এর পর থেকে রাজ্যে বামপন্থী সংগঠনগুলি দুর্বল হওয়ার পর থেকেই কমতে থাকে রক্তদান শিবিরের সংখ্য়া। সেই সময় থেকেই রক্তদাতাদের উৎসাহিত করতে ভারী উপহারের ওপর নির্ভর করতে শুরু করেন আয়োজকরা।