উত্তরপ্রদেশে জিতেছে ঠিকই, তা বলে বিজেপি ভারতে জিতবে না, বললেন মমতা
‘উত্তরপ্রদেশে জিতেছে ঠিকই, তা বলে বিজেপি ভারতে জিতবে না।’ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের দু’বছর আগে থেকে বিজেপিকে বার্তা দিয়ে রাখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা, ২৩ মার্চ : 'উত্তরপ্রদেশে জিতেছে ঠিকই, তা বলে বিজেপি ভারতে জিতবে না।' ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের দু'বছর আগে থেকে বিজেপিকে বার্তা দিয়ে রাখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে এসে বলেন, উত্তর প্রদেশের জয় বিজেপির একতরফা জয় ঠিকই। এই ভোটে বিরোধীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। তাই একতরফা জয় পেয়েছে। তা বলে ভারতেও যে জিতবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাব।
বিজেপি-র এই জয়ের জন্য কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির দিকে আঙুল তোলেন মমতা। তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশ ভোটে নতুন নোটে ১৮৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এত কালো টাকা এল কোথা থেকে? নোট বাতিল করে তাহলে লাভ কী হল? কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি কেন নির্বাচন কমিশনে সেই অভিযোগ তুলে ধরেনি। আসলে লড়াইয়ে খামতি ছিল। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর উদ্দেশ্যে বার্তা দেন, ইভিএম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামুন।
মমতা বলেন, বিজেপিকে হারানো সম্ভব। দিল্লি, বাংলা ও তামিলনাড়ুতে হেরেছে বিজেপি। সঠিক পথে লড়লেই বিজেপি হারবে। হিমাচলে কংগ্রেস শক্তিশালী তাই হিমাচলে আমি প্রার্থী দিলে তো ভোট ভাগাভাগি হবে। তেমনই উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতী এক হলে বিজেপি জিতত না। একসঙ্গে দাঁড়ালে আসন বাড়ত। তা বলে বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস জোট নিয়ে ভেবে লাভ নেই।
বিহারে লালুর জন্যই নীতীশ কুমার ক্ষমতায় এসেছে বলে দাবি মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মহারাষ্ট্রে বিজেপি পুরো পাবে না বলে তাঁর মত। শিবসেনা ভালো ফল করবে বলে বিশ্বাস মমতার। রাজস্থানে কংগ্রেস ব্যাকআপ দেবে বলে মনে করেন তিনি।
শুধু উত্তরপ্রদেশ ভোটই নয়, নারদ থেকে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতাল, শিশুপাচার, কোনও কিছুতেই তিনি রেয়াত করলেন না। বিজেপি থেকে শুরু করে সিপিএম, কংগ্রেস সবাইকেই নিশানা করলেন। এমনকি নিজের ভুলও তিনি তুলে ধরলেন। এদিন মমতা বলেন, কেডি সিং-কে সাংসদ করে ব্লান্ডার করেছি। কেডি-র সঙ্গে বিজেপি-র যোগ আছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, কেডি-কে ভালো লোক বলে জানতাম। এটা আমাদের ভুল। পাশাপাশি তিনি বলেন, বিজেপি স্টিংয়ের দায় এড়াতে পারে না। তাঁর প্রশ্ন, ২০১৪ সালে স্টিং করে ২০১৬ সালে প্রকাশ কেন? এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক চক্রান্ত। প্ল্যান করে এসব করা হয়েছিল।
বেসরকারি হাসপাতাল প্রসঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নতুন আইন এনেছেন। এ প্রসঙ্গে এদিন মমতা বলেন, গুলি করে মারা আর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যু- দু'টোই অপরাধ। এই আইন হঠাৎ করিনি। ৮-১০ বছর ধরে নজর রাখছি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, তাই আজ আইন করতে হয়েছে। টেস্ট করতেই সব টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে গরিব মানুষের, তাহলে তাঁরা চিকিৎসা করাবে কীভাবে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সাফ জানান, টাকার জন্য কোনওভাবেই দেহ আটাকানো যাবে না। সেইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন মিথ্য অভিযোগ করলেও কিন্তু শাস্তির মুখে পড়তে হবে। অভিযোগ জানানোর জায়গা রয়েছে, সেখানেই অভিযোগ জানাতে হবে। ভাঙচুরের রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না। ইদানিং ভাঙচুর অনেক বেড়ে গিয়েছে। তা বন্ধ করতে হবে।
মমতা এদিন বলেন, আমি কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে নই। তাই ডাক্তারবাবুদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আইন আইনের পথে চলবে। যে বিল হয়েছে তাতে খুশি সৎ চিকিৎসকরা। যারা অন্যায় করেছে, তাঁরাই আশঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বেসরকারি হাসপাতালের কিছু অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সবাই কিন্তু একই দোষে দুষ্ট নয়। তিনি বলেন, মনে রাখা উচিত, চিকিৎসা আর প্রোমোটিং এক হতে পারে না। আট কোটি মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পান। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা জীবনপাত করেন।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধেও বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দুর্ঘটনায় রাশ টানতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কালিকাপ্রসাদের গাড়ির টাকা ওখানে স্কিড করেছিল। ওখানে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এইসঙ্গে বাইক আরোহীদের বেপরোয়া ড্রাইভিং বন্ধ করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।স্পিড লিমিটের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কবি শ্রীজাত-র পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, কবির কবিতা বন্ধ করা যাবে না। কিচ্ছু হবে না শ্রীজাত-র। একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল এসব করছে। প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার আস্ফালন দেখাচ্ছে। শ্রীজাত নিয়ে পুলিশকে রিপোর্ট দিতে বলেছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, বিজেপি ও আরএসএস বাংলাকে টার্গেট করছে। আমাকে নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। ওরা আমাকে চ্যালেঞ্জ করলে আমিও তার যোগ্য জবাব দেব। ছাত্র ভোট প্রসঙ্গে মমতা বলেন, সেন্ট জেভিয়ার্স মডেল ভালো। এই মডেল নিয়ে আলোচনা করব।
রাষ্ট্রপতি
নির্বাচন
প্রসঙ্গে
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়
বলেন,
প্রণব
মুখোপাধ্যায়,
লালকৃষ্ণ
আদবানী,
সুষমা
স্বরাজ
কিংবা
সুমিত্রা
মহাজনের
মধ্যে
থেকে
কেউ
রাষ্ট্রপতি
হতে
পারেন।
তবে
এখনও
এ
প্রসঙ্গে
কিছু
বলা
ঠিক
হবে
না।
সময়
এলেই
বলব।
মমতা
তাঁর
দল
প্রসঙ্গে
বললেন,
তাঁর
টিম
তৈরি
রয়েছে।
সময়
হলেই
জানতে
পারবেন।
সব
রেডি
করা
আছে।
আমি
মরে
গেলেও
পার্টি
শেষ
নয়।
নবীন-প্রবীণ
কম্বিনেশনেই
টিম
তৈরি
করেছি।
তিনি
বলেন,
আমাকেও
দল
থেকে
সরানোর
চেষ্টা
হয়েছে।
দল
ভাঙার
খেলা
চলেছে।
অন্য
কাউকে
মুখ্যমন্ত্রী
করার
টোপ
দেওয়া
হয়েছিল।
তারা
রাজি
হয়নি।
সারা
দেশেই
বিস্তার
লাভ
করবে
তৃণমূল।
দিল্লিতে
রং
বদালেই
অন্য
রাজ্যে
রং
বদলাবে।
ইন্দিরা গান্ধী ৭৭ সালে হেরে গিয়েও ৮০ তে কামব্যাক করেছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২৩৫ নিয়ে ক্ষমতায় এসেও পরে হেরেছেন। যোগী আদিত্যনাথ পরে বলতেই পারেন মোদী কেন আমিই হব প্রধানমন্ত্রী। এদিন অবশ্য প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রসঙ্গে সে অর্থে কিছুই বলেননি।
মমতা বলেন, বিমন তাঁকে মেরে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তিস্তা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি। রাজ্যকে না জানিয়ে যা ইচ্ছা তাই মানব না। এ বিষয়ে রাজ্যের স্বার্থ জড়িত। তাই রাজ্যকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। শুনছি ২৫ মে চুক্তি, অথচ আমি কিছু জানি না। রাজ্যকে বাঁচিয়ে বাংলাদেশকে যতটা সাহায্য করা যায়, করব।
এদিন সারদা প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন মমতা। সুদীপকে আজও আটকে রাখা হয়েছে। এখনও কেন সারদার তদন্ত শেষ করা হল না? প্রশ্ন তোলেন তিনি। চক্রান্তকারীদের জয় হবে না। জিতব আমরাই, মিলিয়ে নেবেন। আজ নয় কাল সত্য সামনে আসবেই।