মুকুল-দিলীপের তুমুল ঝগড়া মিটিংয়ের মাঝে! লোকসভার আগে ‘মহাবিপদে’ বিজেপি
লোকসভার আগে বঙ্গ বিজেপিতে বেধে গেল বেনজির তরজা। সর্বভারতীয় নেতৃত্বর সামনেই দলের দুই মুখ দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায় জড়িয়ে পড়লেন তুমুল কাজিয়ায়।
লোকসভার আগে বঙ্গ বিজেপিতে বেধে গেল বেনজির তরজা। সর্বভারতীয় নেতৃত্বর সামনেই দলের দুই মুখ দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায় জড়িয়ে পড়লেন তুমুল কাজিয়ায়। মুকুল রায়কে তৃণমূলের খোঁটা দিতেও ছাড়লেন না বিজেপি রাজ্য সভাপতি। যাঁকে 'ক্যাপ্টেন' আখ্যা দিয়ে দলের দরজা পেরিয়েছিলেন সেই দিলীপ ঘোষই কটাক্ষ করলেন তাঁর 'ধোনি'কে।
কেন কাজিয়া দুই ‘মহারথী’র
সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বাম সাংসদ নরহরি মাহাতো। সেই কৃতিত্ব কার তা নিয়েই দুই নেতার দ্বন্দ্ব বাধে। নরহরি মাহাতোকে বিজেপিতে আনারা ব্যাপারে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দাবি করেন মুকুল রায়। তাতেই রেগে আগুন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। দিলীপ ঘোষ সরাসরি অভিযোগ করেন মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে।
তৃণমূল খোঁটা মুকুলকে
দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, মুকুল রায় তৃণমূলে থাকাকালীনও এই কাজ করেছেন। তিনি সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছেন সমস্ত কিছুতেই। এখন বিজেপিতে এসেও একই কাজ করে যাচ্ছেন। তারপরই দুই নেতার মধ্যে শুরু হয়ে যায় তীব্র কাজিয়া। সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সামনেই এই কাজিয়া বাধে। এই ঘটনায় বিপাকে বিজেপি।
গোপন রিপোর্টে বিতর্ক
একই সঙ্গে দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, মুকুল রায় সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাঠছে গোপন রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতেই মুকুল রায় এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ দিলীপ ঘোষের। শুধু তাই নয়, তিনি ঘুরিয়ে বলেন মুকুল রায় বাংলার বিজেপিতে বিভাজন করতে চাইছেন।
সংগঠনকে ডি-মরালাইজ করছেন মুকুল
কাজিয়া চলাকালীন মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, নীচুতলার সংগঠনকে ডিমারাইলজ করছেন আপনি। বিজেপি রাজ্য সভাপতির কথায় হতভম্ব হয়ে যান মুকুল রায়। দলের কোর কমিটির বৈঠকে দুই নেতার বাদানুবাদে নীচুতলার কর্মীদের মনোবলে চির ধরতে পারে। লোকসভায় যখন তৃণমূলকে পাল্টা দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি, তখন রাজ্যের দুই শীর্ষনেতার বাদানুবাদ ভালো লক্ষ্মণ নয়।
বিজেপির মুখ কে? দ্বন্দ্ব প্রথম থেকেই
কে হবেন বঙ্গ বিজেপির মুখ? তা নিয়ে দ্বন্দ্ব মুকুল রায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই। একপক্ষ চাইছিলেন দিলীপ ঘোষই হন বঙ্গ বিজেপির মুখ। আর একটি পক্ষ চাইছিলেন মুকুল রায়কে। সেই লড়াই যাতে প্রকাশ্যে না আসে মুকুল রায় যোগ দিয়েই দিলীপ ঘোষকে ক্যাপ্টেন বলে সম্বোধন করেছিলেন। দিলীপ ঘোষও বলেছিলেন তাঁর টিমের ধোনি হলেন মুকুল রায়।
মুকুলের দুই ক্যাপ্টেন তত্ত্ব
দলে যোগ দেওয়ার পর বঙ্গ বিজেপির অফিসে বসে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে মুকুল রায় বলেছিন, আমার দুই ক্যাপ্টেন। একজন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। আর বাংলায় আমার ক্যাপ্টেন দিলীপ ঘোষ। সেই দিলীপ ঘোষই প্রতিদ্বন্দ্বী মুকুল রায়কে চরম বার্তা দিলেন। তীব্র কাজিয়ায় বিজেপিতে শুরু বিভাজন-পর্বের।
পঞ্চায়েতের পর লোকসভাতেও মুখ মুকুল
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পঞ্চায়েত ভোটে মুকুল রায়কে দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই নির্বাচনে সাফল্য এসেছে। সেই কৃতিত্ব নিয়েও মুকুল-দিলীপের মধ্যে লড়াই ছিল, তেমনই বিজেপির সংগঠনে কে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারছে, তা নিয়েও অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল। তার মধ্যেই লোকসভায় মুকুল রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দিলীপ ঘোষ মুকুল রায়ের পিছনে পড়ে যান। অন্তত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে।
দিলীপ ঘোষই কিন্তু বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বে
দিলীপ ঘোষের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেলেও বিগত জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে তাঁকেই এখনও এক বছর দলের সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নিরিখে খাতায়-কলমে বঙ্গ বিজেপির মুখ দিলীপ ঘোষই। মুকুল রায়কে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনের দায়িত্ব। এমতাবস্থায় কার কৃতিত্বে দল ভারী হচ্ছে, তা নিয়েই বিবাদ চরমে।
দুই নেতার অনুগামীদের সোশাল-যুদ্ধ
এক আগে পঞ্চায়েতে জঙ্গলমহলে বিজেপির সাফল্যে কৃতিত্ব কার, মুকুল রায় না দিলীপ ঘোষের- তা নিয়ে বিবাদ চরমে উঠেছিল। বঙ্গ বিজেপির দুই নেতার অনুগামীরা নিজেদের মতো করে যুক্তি সাজিয়েছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতেও লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তখনও দুই নেতা সরাসরি বাকবিতন্ডায় জড়ায়নি, এবার সেটাই ঘটে গেল।
বিজেপির বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে কে
বিজেপি পঞ্চায়েতে বেড়েছে। এই বৃদ্ধি কার জন্য, তা নিয়ে বিজেপিতে বিতর্ক রয়েছে। এক শ্রেণি মনে করে মুকুল রায় আসাতেই বিজেপির এই বাড়বাড়ন্ত। অন্য এক শ্রেণির মতে, দিলীপ ঘোষই এর নেপথ্যে। তার কারণ দিলীপ ঘোষ জঙ্গলমহলের মানুষ, তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন এই জঙ্গলমহলকে। আদিবাসীদের মনের ভাষা বোঝেন। তাতে মুকুল অনুগামীদের প্রশ্ন, তাহলে এতদিন সেখানে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়নি কেন?