মুকুল-দিলীপ 'অঙ্ক' মেলানোর চেষ্টায়, তাই রাম ছেড়ে বাম আর মুসলিম-প্রীতি বিজেপির
এবার উত্তর ভারতে আর মোদী হাওয়া ঝড় হয়ে বইছে না। তাই গেরুয়া শিবির শূন্যস্থান পূরণ করতে নজর দিয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যে। বিশেষ করে বিজেপির পাখির চোখ এবার বাংলা।
এবার উত্তর ভারতে আর মোদী হাওয়া ঝড় হয়ে বইছে না। তাই গেরুয়া শিবির শূন্যস্থান পূরণ করতে নজর দিয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যে। বিশেষ করে বিজেপির পাখির চোখ এবার বাংলা। মমতার বাংলায় ২২ আসনের টার্গেট ফিক্সড করেছেন অমিত শাহ। মুকুল-দিলীপরা এখন থেকেই বসে পড়েছেন অঙ্ক মেলাতে। কোন অঙ্কে মোক্ষলাভ হবে, তা স্থির করতে বঙ্গ বিজেপি স্থির করেছে এক নয়া লক্ষ্য।
তৃণমূলকে পাল্লা দিতে প্ল্যান
গো-বলয়ে যাই হোক, বঙ্গে রাম-নামে অভীষ্ট পূরণ হবে না। তাই রাম ছেড়ে বামে মজেছে বিজেপি। তাই শুধু কি বামকে সঙ্গে নিয়ে আর তৃণমূলের মতো বৃহৎ শক্তির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যায়। তাই হিন্দুত্ব ছেড়ে মুসলিম ভোটের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে বিজেপি। মুকুল রায় আসার পর সংখ্যালঘুরা ঝুঁকেছে বিজেপির দিকে। দিলীপ ঘোষও এখন মুসলিমপ্রীতিতে মজেছেন।
কৌটিল্যের ভূমিকায় মুকুল
বঙ্গ বিজেপির ভোট ম্যানেজার এখন মুকুল রায়। তিনিই লোকসভার দায়িত্বে। আবার ভোট-যুদ্ধে কৌটিল্যের ভূমিকা পালন করার ব্যাপারে তাঁর আবার বিশেষ সুনাম রয়েছে। সেই মুকুল রায় খাতা-কলম নিয়ে বসার পর অঙ্ক মেলানার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন বঙ্গের গেরুয়া ভোটের সঙ্গে লাল-ভোট মিশিয়ে কতটা দূরত্ব ঘোচানো যায়।
ভোট-সমীকরণ বিজেপির
বিজেপি এখন অঙ্ক কষেই চলছে। সমীকরণ মিলছে না। বামেদের বাক্সে ভোট আছে ১৫ শতাংশ। উল্টোদিকে কংগ্রেস ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পাবেই। এই অবস্থায় তৃণমূলকে ছুঁতে কোথা থেকে আসবে ভোট। অতএব ভোট ভাঙাতে হবে তৃণমূলের। হিন্দু ভোট যা আসার এমনিই চলে আসবে। সেইসঙ্গে আনতে হবে মুসলিম ভোটও। তার সঙ্গে বামভোটও ভাঙাতে হবে আরও। তবেই অমিত-লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব বঙ্গ বিজেপির।
রাম ছেড়ে বামে
বিজেপি পরিকল্পনা করেছে, কংগ্রেস যতদূর কমার কমে গিয়েছে। বামফ্রন্টকে কমাতে হবে ৭-৮ শতাংশে। তবেই বিজেপির নিশানা ঠিক দিকে এগোতে পারবে। নতুবা স্বপ্নই থেকে যাবে বিজেপির আশা। কেননা বিগত নির্বাচনগুলিতে দেখা গিয়েছে বিজেপি তৃণমূলকে সেভাবে ভাঙতে পারেনি। দ্বিতীয় শক্তি হয়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু প্রথম শক্তি তৃণমূলের থেকে তৈরি হয়েছে বিস্তর ব্যবধান।
হিন্দুত্ব ছেড়ে মুসলিমপ্রীতি
বামেদের শক্তিক্ষয় করিয়ে নিজেদের দিকে ভোটকে বইয়ে দিতে হবে, সেইসঙ্গে মুসলিম ভোটও বেশি পেতে হবে। তৃণমূলের একচেটিয়া সংখ্যালঘু ভোটপ্রাপ্তি আটকাতে হবে বিজেপিকে। তা আটকাতে না পারলে, বিজেপির পক্ষে অসম্ভব হবে লক্ষ্যপূরণ। তাই এখন রাম ছেড়ে যেমন মতে হবে বামে, তেমনই একইভাবে হিন্দুত্ব ছেড়ে আপন বাড়াতে হবে মুসলিমপ্রীতি।
মুকুলে সংখ্যালঘু লাভ
মুকুল রায় আসার পর অবশ্য ধীরে ধীরে সেই কাজ শুরু করেছে বিজেপি। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানোর কাজ করে চলেছে। একইসঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে মৌলবী, মৌলানা, ইমামদের সঙ্গে। মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক থেকে শুরু করে মুসলিমদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করে বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার এই কাজ এমনভাবেই করতে হচ্ছে, যেন মুসলিম ভোট ভাঙাতে গিয়ে না হিন্দু ভোট চলে যায়।
মতুয়া-ভোটও লক্ষ্যে
শুধু সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটই টার্গেট করেই এগোচ্ছে না বিজেপি, মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষরা চাইছেন মতুয়া ভোটও নিজেদের দিকে টানতে। মুকুল রায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ছুঁচ হয়ে ঢুকতে চাইছেন। তারপর তৃণমূলের ভোট বাক্স ফাল করে দেওয়াই হবে তাঁর উদ্দেশ্য। তা করতে যে মতুয়া কোনও নেতাকে দরকার, সেই চেষ্টাই করে চলেছেন মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষরা।