বাংলা শিখতে রাজ্যপালের হাতেখড়ি কি রাজনৈতিক স্টান্ট, জেরক্স মেশিন তকমা বিজেপি নেতার
রাজ্যপালকে বিঁধে স্বপন দাশগুপ্ত বলছেন, আপনি এত ঘনিষ্ঠতা দেখাচ্ছেন যে রাজভবন ও তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসটা যে আলাদা, সেই তফাতটা মাঝে মাঝে চলে যাচ্ছে।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বাংলা শেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। তাই তিনি স্বরস্বতী পুজোয় হাতেখড়ি দিতে চান। রাজভবনে সরস্বতী পুজো করে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে হাতখড়ি দেবেন বলে মনস্থ করেছেন। আর তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক উঠেছে চরমে।
রাজ্যপালের এই হাতেখড়ি দিয়ে বাংলা শেখার ইচ্ছাপ্রকাশকে রাজনৈতিক স্টান্ট বলে অভিহিত করেছেন বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত। তিনি এ বিষয়ে রাজ্যপালকে রাজ্য সরকারের জেরক্স মেশিন বলে কটাক্ষ করেছেন। রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিজেপি নেতা।
এতদিন দেখা গিয়েছে রাজ্যপাল ও বিজেপির সখ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসেছে তৃণমূল। রাজভবনকে বিজেপির পার্টি অফিস ও রাজ্যপালকে বিজেপির মুখপা্ত্র বলতেও কুণ্ঠা করেনি তারা। এবার অভিযোগের তির একেবারে ঘুরে গেল। এবার বিজেপি তির ছুড়ল রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দিকে।
রাজ্য-রাজভবন ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যপালকে বিঁধেছেন স্বপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, আপনি এত ঘনিষ্ঠতা দেখাচ্ছেন যে রাজভবন ও তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসটা যে আলাদা, সেই তফাতটা কি মাঝে মাঝে চলে যাচ্ছে। রাজ্যপালকে সরাসরি রাজ্য সরকারের জেরক্স মেশিন বলতেও পিছপা হননি স্বপনবাবু।
অর্থাৎ মাত্র দিন কয়েকের ব্যবধানে রাজভবন নিয়ে স্টান্ট বদলে গেল। রাজ্যপাল সিভ আনন্দ বোসের বাংলায় হাতেখড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপি নেতা। বহুদিন থেকেই তিনি বাংলা শিখতে আগ্রহী বলে সরস্বতী পুজোর হাতেখড়ি দিতে চেয়েছেন। তা নিয়ে যে রাজ্য রাজনীতি এভাবে মাথাচাড়া দেবে, তা ভাবা যায়নি।
আসলে রাজ্যপালের সরস্বতী পুজোয় অনু্ষ্ঠানে আমন্ত্রিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্যোছেপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই তিনি হাতেখড়ি দেবেন। আর এই বিষয়কেই সামনে এনে রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেছেন, রাজভবনে এভাবে হাতেখড়ির অনুষ্ঠান দেখে আমার যেমন কেমন কেমন লাগছে।
প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাতের জমানা শেষ। বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সুসম্পর্কের বাতাবরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজ্য ও রাজ্যপালের এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্পর্ক নিয়ে আদৌ খুশি নয় বিজেপি।
বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত বলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের সঙ্গে রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর একটি সম্পর্ক থাকা উচিত। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রধানের একটি নিরপেক্ষতাও থাকা উচিত। কিন্তু সেই নিরপেক্ষতা কি আদৌ রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রাজ্যপাল বাংলা শিখতে চাইছেন, সেখানে এত আপত্তি কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি নেতা বলেন, একজন বয়স্ক মানুষ বাংলা শিখছেন তা খুবই ভালো কথা। কিন্তু এটার মধ্যে একটা রাজনৈতিক স্টান্ট রয়েছে। রাজনৈতিক স্টান্টের মধ্যে একজন রাজ্যপালের পড়া উচিত নয়। এখান থেকে বার্তা দেওয়া হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রটা ঠিক রয়েছে। কিন্ত তা আদৌ ঠিক নেই।
স্বপনবাবু এদিন এমন কথা বলেন যে, রাজ্যের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে গিয়ে মনে হয় অতি ভালো সম্পর্ক রেখে ফেলেছেন রাজ্যপাল। এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পার করে যাচ্ছেন রাজ্যপাল। শোনা যাচ্ছে, রাজ্যপালের লেখা অনুবাদ করে বইমেলা না কোথায় একটা ছাড়বে। এটা কি রাজ্যপালের কাজের মধ্যে পড়ে? নাকি এটা সংবিধান বহির্ভূত কাজ? প্রশ্ন থেকেই যায়।
স্বপন দাশগুপ্ত আরও বলেন, রাজ্যপালের নিরপেক্ষ থাকা উচিত। রাজ্যপালের একটা দূরত্ব থাকা উচিত যাতে মানুষ তাঁর নিরপেক্ষতা বুঝতে পারে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এককালে আমলা ছিলেন। উনি জানেন নিরপেক্ষতা কাকে বলে। উনিই ভেবে দেখুন, উনি যা করছেন, তা রাজ্যপালের ভূমিকার ব্যতিক্রমী কি না!