মিথ্যার ফাঁসেই পুলিশের জালে বিক্রম, এক নজরে সনিকা মৃত্যুকাণ্ড
মডেল-বান্ধবী সনিকা চৌহানের মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে পুলিশের জালে বাংলা টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। মিথ্যার জালেই ফাঁসলেন?
২৯ এপ্রিল থেকে ৬ জুলাই। কেটে গিয়েছে ৬৯ দিন। তবু শেষ রক্ষা হল না। সনিকাকাণ্ডে গ্রেফতার হতে হল বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে। মডেল-বান্ধবী সনিকা চৌহানের মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে পুলিশের জালে বাংলা টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় এই অভিনেতা। বান্ধবী সনিকা তো প্রাণ হারালেনই, টানাপোড়েনে বিক্রমের নাজেহাল অবস্থা। মিথ্যার জালেই গ্রেফতার হতে হল তাঁকে।[আরও পড়ুন:কোন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অভিনেতাকে বিক্রম গ্রেফতার করল পুলিশ]
প্রথমে মদ্যপ ছিলেন না বলে অস্বীকার। তারপর সনিকার বান্ধবীদের বয়ানে উঠে আসে বিক্রম মিথ্যাচার। পরে, বিক্রম মদ খাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, মদ খেলেও তিনি বেসামাল ছিলেন না। অল্পমাত্রায় পান করেছিলেন হালকা পানীয়। এরপর পুলিশি তদন্তে উঠে আসে অনেক মিসিং লিঙ্ক।[আরও পড়ুন:বৃহস্পতিবার মাঝরাতে বিক্রমের গ্রেফতারির পর ঠিক যা যা হয়েছে]
এই ৬৯ দিনে জল কোথা থেকে কোথায় গড়াল দেখুন ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার টাইমলাইনে।
২৯ এপ্রিল : ভোররাতে পার্টি থেকে বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মডেল সনিকা সিং চৌহানের। টেলি সিরিয়ালের জনপ্রিয় নায়ক বিক্রম চট্টোপাধ্যায় দুর্ঘটনায় জখম হন। ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় বিক্রমের টয়োটা করলা অলটিস। পাঁচটি এয়ার ব্যাগের একটিও কাজ করেনি বলে জানায় পুলিশ। বিক্রমই ড্রাইভিং করছিলেন। তাঁর পাশের সিটে বসেছিলেন সনিকা।
২৯ এপ্রিল : অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গাফিলতিতেই তাঁর বান্ধবী জনপ্রিয় মডেল সনিকা সিং চৌহানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। টালিগঞ্জ পুলিশ বিক্রমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ এই দুর্ঘটনার তদন্ত নেমে জানতে পেরেছে ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছিল গাড়িটি। বিক্রমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
৪ মে : মডেল সনিকা চৌহানের মৃত্যুর ঘটনায় অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে সাত দিনের মধ্যে টালিগঞ্জ থানায় তলব করল পুলিশ। হাসপাতালে গিয়ে বিক্রমকে হাজিরার নোটিশ দিয়ে এল টালিগঞ্জ থানার পুলিশ। হাসপাতাল থেকে এদিনই ছেড়ে দেওয়া হয় অভিনেতা বিক্রমকে। মাথায় তাঁর ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল।
৫ মে : আলিপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন বিক্রম। বাংলা টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় এই অভিনেতা এদিন জামিন পেয়ে যান। বিক্রমের তরফে আইনজীবী আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। যে ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সবকটিই জামিনযোগ্য। সেই কারণে তাঁর জামিন পেতে অসুবিধা হয়নি।
৯ মে : সনিকা মৃত্যুকাণ্ডে গোটা টলিউড দু'ভাগ। প্রতিদিনই নানা মত ভেসে আসছে। এর মধ্যেই উত্তেজনা বাড়িয়ে থানায় হাজির হন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। রাত পৌনে দশটা থেকে সওয়া একটা পর্যন্ত দীর্ঘ জেরা করা হয় বিক্রমকে। মডেল সনিকার মৃত্যু নিয়ে জটিল ধাঁধা কাটাতে পুলিশের কাছ থেকে নানা প্রশ্নবাণ উঠে আসে বিক্রমের দিকে। ২৯ এপ্রিল দুর্ঘটনার রাতে কী ঘটেছিল? কী করে এই দুর্ঘটনা? গাড়ির গতি কত ছিল? রাতের পার্টিতে বিক্রম মদ্যপান করেছিলেন কি না? প্রশ্নবাণ জর্জরিত করে দেওয়া হয় বিক্রমকে।
১০ মে : পুলিশি জেরার মুখে উল্টো সুর বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। পুলিশের কাছে বিক্রমের স্বীকারোক্তি, 'তিনি মদ্যপান করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু মত্ত ছিলেন না। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। গাড়ি চালানোর মতো অবস্থাতেই ছিলেন। মোট কথা তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মদ খাওয়ার কারণে বেসামাল হয়ে এই দুর্ঘটনা নয়।'
১১ মে : সনিকার চার বান্ধবী গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়ে আবেদন করল পুলিশের কাছে। সেইমতো পুলিশ আলিপুর কোর্টে আবেদন জানায়। আলিপুর আদালতে গিয়ে চার বান্ধবী বিচারকের সামনে ১৬৪ ধারায় গোপন জবানবন্দি দেন। অবিলম্বে যাতে সত্য সামনে আসে সেই দাবিও জানান সনিকার এই চার বান্ধবী। সিরিন আসফাক, অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃথা গুহ ও নাজিয়া পারভিন নামে চার বান্ধবী সেই রাতে পার্টিতে ছিলেন বলে দাবি।
১২ মে : গাড়ি দুর্ঘটনায় মডেল সনিকা সিং চৌহানের মৃ্ত্যুতে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি 'ধারা' বদলের ভাবনা। এবার ভারতীয় দণ্ডবিধির জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হতে পারে বিক্রমের বিরুদ্ধে। অনিচ্ছকৃত খুনের অভিযোগে যুক্ত হতে পারে ৩০৪-এর বি ধারা। ফলে তদন্ত যতই এগোচ্ছে ততই চাপে বিক্রম। সিটের তদন্তে স্পষ্ট হচ্ছে বিক্রমের গাফিলতি।
১৩
মে
:
বিক্রমের
গাড়ি
থেকে
বোতল
উদ্ধার
করে।
চলন্ত
গাড়িতেই
কি
মদ্যপান
করেছিলেন
অভিনেতা
বিক্রম?
সেই
প্রশ্নই
ঘুরপাক
খেতে
শুরু
করে
সিটের
তদন্তকারী
দলের
কাছে।
ফরেনসিক
তদন্তের
সময়
উদ্ধার
হয়
বোতলটি
বোতল।
উদ্ধার
হওয়া
বোতলটিও
ফরেনসিক
তদন্তের
জন্য
পাঠানো
হয়েছে।
১৫
মে
:
সনিকা
সিং
চৌহানের
চার
বান্ধবীর
গোপন
জবানবন্দির
প্রতিলিপি
চেয়ে
আদালতে
আবেদন
জানাল
পুলিশ।
টালিগঞ্জ
থানার
পুলিশ
ওই
গোপন
জবানবন্দির
প্রতিলিপি
খতিয়ে
দেখার
পরই
বিক্রমের
বিরুদ্ধে
আইনানুগ
ব্যবস্থা
নেবে।
তাঁর
বিরুদ্ধে
ধারা
বদল
করা
হবে।
৩০
মে
:
মডেল
সনিকা
সিং
চৌহানের
মৃত্যুকাণ্ডে
অভিনেতা
বিক্রমের
বিরুদ্ধে
অনিচ্ছাকৃত
খুনের
মামলা
দায়ের।
পুলিশ
বিক্রমের
বিরুদ্ধে
৩০৪
বি
ধারায়
জামিন
অযোগ্য
ধারা
যুক্ত
করার
আবেদন
জানায়
আদালতে।
আদালত
তা
মঞ্জুর
করে।
৫
জুন
:
সনিকা
মৃত্যুকাণ্ডে
আগাম
জামিন
চেয়ে
হাইকোর্টে
আবেদন
করেন
অভিনেতা
বিক্রম
চট্টোপাধ্যায়।
সনিকা
মৃত্যু
মামলায়
তাঁর
বিরুদ্ধে
অনিচ্ছাকৃত
খুনের
ধারা
যুক্ত
হয়েছে।
ঘটনার
একমাস
পরে
৩০৪এ
ধারা
বদল
করে
৩০৪
বি
ধারা
যুক্ত
হওয়ায়
হাইকোর্টে
আগাম
জামিনের
আবেদন
করেন
তিনি।
৬ জুলাই : অবশেষে গ্রেফতার অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কসবার একটি শপিং মলের কাছ থেকে বিক্রমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রথমে তাঁকে থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর গ্রেফতার করা হয় বিক্রমকে।