অন্তরার নিজের লেখা একটি ডায়েরির সন্ধান পেলেন তদন্তকারীরা। সেই ডায়েরি থেকে বহু তথ্য জানতে পেরেছে
অন্তরার নিজের হাতের লেখা একটি ডায়েরির সন্ধান পেলেন তদন্তকারীরা। সেই ডায়েরি থেকে বহু তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। এই ডায়েরিই মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে অন্তরা হত্যাকাণ্ডে।
কলকাতা, ২৬ ডিসেম্বর : বেহালার তরুণী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অন্তরা দাস খুনের তদন্তে নেমে তাঁর নিজের হাতের লেখা একটি ডায়েরির সন্ধান পেলেন তদন্তকারীরা। সেই ডায়েরি থেকে বহু তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। এই ডায়েরিই মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে অন্তরা হত্যাকাণ্ডে। অন্তরার বন্ধু-বান্ধবীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের কাছে সন্তোষ ছাড়াও আরও এক যুবকের নাম উঠে এসেছে। সজল নামে ওই যুবককে আটক করে জেরা করছে পুলিশ। সজল ফুড ডেলিভারির কাজ করত।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার দিন অফিস থেকে বেরিয়ে অন্তরা দাস হাঁটাপথে এক বান্ধবীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। তখনই অফিস থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে ঘটে যায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড। এমনিতেই অফিসের গাড়িতেই বাসায় ফিরতেন অন্তরা। এদিন হেঁটে ফেরার ঘটনা পুলিশকে অন্য ভাবনা ভাবতে বাধ্য করেছিল।
যে বান্ধবীর বাড়িতে অন্তরার যাওয়ার কথা ছিল, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এছাড়া অন্তরার অন্যান্য বন্ধু ও বান্ধবীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই সজলের নাম পায় পুলিশ। শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও উত্যক্ত করার যে তত্ত্ব উঠে আসছে এই তদন্ত, তার সঙ্গে সজলের কোনও যোগ রয়েছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এতদিন প্রাক্তন সহপাঠী সন্তোষকুমার যাদবের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার তত্ত্বই এই খুনের কারণ বলে জোর দেওয়া হয়েছিল পুলিশ তদন্তে। কিন্তু ডায়েরি উদ্ধারের পর, পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ জানতে অন্য সূত্র পাচ্ছে।
অন্তরার পরিবার তাঁর একসময়ের সহপাঠী সন্তোষের দিকেই অভিযোগের তির ছুড়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সন্তোষ কুমারকে তলব করেছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যে তাঁর খোঁজও মিলেছে। তবে এখনও তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারেনি পুলিশ। তবে শীঘ্রই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। এদিকে আজই পুনে পুলিশ কলকাতায় আসতে পারে অন্তরা-হতাকাণ্ডের তদন্তে। সুপারি কিলার লাগিয়েই এই খুন করা হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।
অন্তরা দাস খুনে তাঁর বোন অঙ্কিতার বয়ানে অনেক ক্লু পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেইসবই খতিয়ে দেখতে কলকাতায় আসছে তদন্তকারী দল। সন্তোষ সম্বন্ধে অনেক কিছুই বাড়িতে জানিয়েছিলেন অন্তরা। বিশেষ করে যমজ বোন অঙ্কিতার সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেক কথাই আদানপ্রদান করেছেন অন্তরা। সন্তোষের যে প্রথম দর্শনেই অন্তরাকে ভালো লেগে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছিল, কেনই বা বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন অন্তরা, সেগুলি খতিয়ে দেখলে অনেক কিছুই উঠে আসতে পারে, যা এই তদন্ত সহায়তা করবে বলে মনে করছে পুলিশ।
অন্তরাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তাতে প্রতিহিংসার তত্ত্বই জোরালো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিহিংসা ঘটাল কে? পুলিশ সন্তোষকে হেফাজতে নেওয়ার পাশাপাশি অন্য সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি। তাঁদের নজরে রয়েছে কিছুদিন ধরেই অন্তরাকে উত্যক্ত করার ঘটনা। কে বা কারা ফোন করে উত্যক্ত করত, কারা তাঁর শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্তরার মোবাইল কললিস্ট পরীক্ষা করে এই রহস্যের কিনারা করতে চাইছে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে সজলের কোনও যোগ ছিল কি না তদন্তকারীরা তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পড়াশোনা শেষ করেই তিনি পুনেতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি পেয়ে যান। রকেটের গতিতে তাঁর কেরিয়ার এগিয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় তাঁর খুন। অন্তরার পরিবারের দাবি, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই খুন করা হয়েছে। যে খুন করেছে, সে ভালোমতোই জানত কোন পথে যাতায়াত করে অন্তরা, কোন সময়ে তিনি অফিস থেকে বের হন। সেইমতো পরিকল্পনা করেই অফিস থেকে বেরনোর ১০০ মিটারের মধ্যে খুন করা হয় অন্তরাকে। এমনই জয়গা নির্বাচন করা হয়েছে, যেখানে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। একাই হাঁটছিল অন্তরা। নির্জন সেই পথেই তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।