রাজ্য বাজেটে সংখ্যালঘুদের বরাদ্দ তো বাড়ল, তবু সুফল মিলছে কই?
সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৩১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি! সদ্য পেশ হওয়া রাজ্য বাজেটে তা তাক করার মতোই খবর। সংখ্যালঘুদের জন্য সুখবর তো বটেই।
কলকাতা, ৬ ফেব্রুয়ারি : সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৩১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি! সদ্য পেশ হওয়া রাজ্য বাজেটে তা তাক করার মতোই খবর। সংখ্যালঘুদের জন্য সুখবর তো বটেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সংখ্যালঘুদের প্রতি দরদী, তার প্রমাণ মেলে এই বরাদ্দ বৃদ্ধিতে। তারপরও সংশয় থাকে, বরাদ্দের পুরো টাকা সংখ্যালঘু উন্নয়নে খরচ হবে তো? সংখ্যালঘু সমাজের তৃণমূল স্তরে এর সুফল পৌঁছবে তো?
সম্প্রতি বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এবার বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে ৩১৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত আর্থিক বছরে বরাদ্দ ছিল ২,৫০০ কোটি। এবার তা বেড়ে হল ২,৮১৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। সংখ্যালঘু সমাজ এরজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বলা হয়েছে, বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সেই প্রগতি ত্বরান্বিত হবে।
সংখ্যালঘু সমাজের আশা, এতে সংখ্যালঘু বৃত্তি, হজ ভবন, ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে হস্টেল নির্মাণে গতি আসবে। বাজেট পেশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছেন, গত ছ'বছরে ১৭ লক্ষ ৪০ হাজার সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী ছাত্রবৃত্তি পেয়েছে ২,৩৫০ কোটি টাকা। এবারে সুবিধাভোগী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে হবে ২৬ লক্ষ। ১৫১টি ব্লকে গড়া হবে কমিউনিটি হল।
রাজ্য সরকার এ পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার বেকার যুবক-যুবতীকে ৮৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে স্বনিযুক্ত প্রকল্পে। এবার তাতে যুক্ত করা হবে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার যুবক-যুবতীকে। ৪০৭ টি হোস্টেল নির্মাণ হবে, যাতে ২৮ হাজার ছাত্রছাত্রী থাকার সুযোগ পাবে। কৃষক ও কারিগরদের পণ্য বিক্রির জন্য ১৯২ টাকা কর্মতীর্থ তথা মার্কেটিং হাব গড়া হবে।
এছাড়াও রাজ্যের ৩ হাজার কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এ বছর ওই খাতে আরও ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় সংখ্যালঘু পর্ষদ গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এর থেকে এই বার্তা যায় যে মমতা সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে বিমুখ নয়। বিরোধীদের দাবি, গত দু'বছর ছাত্রবৃত্তি ও স্বনিযুক্ত প্রকল্পে উপকৃতের সংখ্যা অনেক কমেছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে নৈরাজ্য চলছে।
বিরোধী বাম ও কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, ডিজিটাল রেশন কার্ড. ছাত্রবৃত্তি, স্বনিযুক্ত, ঋণদান সহ নানা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রং বিচার করা হচ্ছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে অনেক জায়গায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, অনেক জায়গায় ঢিমেতালে চলছে কাজ। একশ্রেণির দালাল মাঝপথে বরাদ্দের টাকা নয়ছয় বা আত্মসাৎ করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা।
আরও একটা অভিযোগ, বাজেট ঘোষণার সময় সংখ্যালঘু বরাদ্দ বেশি দেখানো হলেও, পরে সেই বরাদ্দ কেটে অন্য খাতে ব্যয় করা হয়। নানা উৎসব ও অনুদানে কোপ পড়ে সংখ্যালঘু বরাদ্দে। ফলে সংখ্যালঘু সমাজের নিচুতলায় সুফল তুলনামূলক কম পৌঁছয় এর জন্য সরকারকে এই বরাদ্দ থেকে কাটছাঁট করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মাঝপথে অর্থ বিভিন্ন হাত ঘুরে ব্যক্তি হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে কাঙ্খিত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বরাদ্দের পুরো টাকা যাতে সঠিক প্রকল্পে খরচ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সেইজন্যই নজরদারি চালানো দরকার।