বিচ্ছেদ চাই না, সিউড়ির দৃষ্টান্ত টেনে ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাতে আদালতে আর্জি স্বামীর
ডিভোর্সের মামলায় হেরে গেলেও স্ত্রী ও পুত্রের কাছেই ফিরে যেতে চান হাওড়ার বিকাশ জয়সওয়াল। স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গেই আলাদা করে জীবন শুরু করতে চান তিনি।
ডিভোর্সের মামলায় হেরে গেলেও স্ত্রী ও পুত্রের কাছেই ফিরে যেতে চান হাওড়ার বিকাশ জয়সওয়াল। স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গেই আলাদা করে জীবন শুরু করতে চান তিনি।
সিউড়ির গৌতম-অহনা
কিছুদিন আগে ডিভোর্স মামলায় সম্পর্ক জোড়া লাগাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন সিউড়ি আদালতের বিচারক পার্থসারথি সেন। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী গৌতম-অহনাকে তিনদিন হোটেলে রাখার বন্দোবস্ত করেন। তিনদিন হোটেলে কাটানোর পর সম্পর্ক জোড়া লাগানোর ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাঁরা। স্বামী গৌতমের হাত ধরে সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ার বাড়িতে ফিরেছিলেন স্ত্রী অহনা দাস।
স্ত্রীর সঙ্গে বিকাশ
তবে হাওড়া বিকাশ জয়সওয়ালের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা গড়িয়েছে খোরপোষ পর্যন্ত। ২০১০-এর ২১ জুন হাওড়ার ৯/১৮ কিংস রোডের ভাড়া বাড়িতে থাকা বিকাশের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শহরের নামকরা ব্যবসায়ী ১৫৩, এপিসি রোডের রামলগন জয়সওয়ালের মেয়ের সঙ্গে। ব্যাটারির ব্যবসা, হন্ডার শোরুম ছাড়াও শহরের একাধিক ঠিকানায় ব্যবসা রয়েছে রামলগন জয়সওয়ালের। কোনও এক অজানা কারণে তাঁর সমপর্যায়ের নয়, একেবারে নিম্নবর্গের বিকাশকেই বেছে নিয়েছিলেন রামলগন। ছেলের মাকে তিনি বলেছিলেন ছেলে ঘরজামাই থাকবে। নিজেদের অবস্থা ফিরবে এই আশায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন বিকাশের মা-ও। সেইসময় বিকাশ সেলসম্যানের কাজ করতেন। স্বভূমিতে এই বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। আর অতিথি আপ্যায়ন হয়েছিল যমুনা বাঙ্কোয়েটে। আমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় ৪০ হাজার। বিয়ের সব খরচই বহন করেছিলেন রামলগন জয়সওয়াল।
বিয়ের পর তাঁদের একটি সন্তানও হয়। কিন্তু বছর তিনেক যাওয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় অশান্তি। বিকাশের বয়ান অনুসারে, সম্পত্তি নিয়ে তাঁর এক শালা সন্দেহ করতেন। মেয়ে-জামাইকে রামলগন বেশি সম্পত্তি দিয়ে দিতে পারেন, সেই বিষয়ে সন্দেহ করতেন ওই শালা। সন্দেহ থেকেই খারাপ ব্যবহারের শুরু। শ্বশুর বাড়িতে থাকতে না পেরে হাওড়ার ভাড়া বাড়িতে ফেরত আসেন বিকাশ। ছোটখাট কাজ জুটিয়ে দিন গুজরান শুরু হয়। বিকাশের বয়ান অনুসারে এই সময় তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগও কমে আসে।
বিকাশের স্ত্রী
এরই মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন বিকাশের স্ত্রী। তিন-চারটি নির্দিষ্ট দিনে আদালতের শুনানিতে হাজিরা দিতে পারেননি বিকাশ। তবে আদালতের রায়ে ডিভোর্স হয়ে যায় ২০১৬-র ২০ মে। বিকাশের দাবি, তিনি খবর পান অনেক পরে। এদিকে, ডিভোর্সের মামলায় জিতে যাওয়ার পরে খোরপোষের মামলাও দায়ের করা হয় মেয়ের পরিবারের তরফে।
হাওড়ার কিংস রোডে বিকাশ জয়সওয়ালের ভাড়া বাড়ি
এই মুহূর্তে ডেলিভারি বয়ের কাজ করা বিকাশের দাবি, সেই মামলাতেও একতরফা জিতে যায় রামলগন জয়সওয়ালের পরিবার। স্ত্রী ও সন্তানের জন্য মাসে আট হাজার করে ১৬ হাজার টাকা খোরপোষের নোটিশ পেয়ে বিপাকে পড়েন প্রায় দিন আনা-দিন খাওয়া বিকাশ জয়সওয়ালের পরিবার। ঘট ভেঙে, যেখানে যা আছে, তা একসঙ্গে করে প্রথম মাসের টাকাও জোগার করে ফেলেন বিকাশের মা।
পাড়া প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, যে মেয়ের নিজের নামেই ৩০-৩৫ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে, সে ওই টাকা নিয়ে করবে কী । এটা কি যার টাকা আছে তাঁর আইন আছে, আর যার টাকা নেই তাঁর আইন নেই, এমন ঘটনা? সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা।
খোরপোষ নিয়ে ইতিমধ্যেই ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে বিকাশ জয়সওয়ালের বিরুদ্ধে। স্ত্রী রাজি থাকলে ঘর করতেও রাজি বলে জানিয়েছেন বিকাশ। শিয়ালদহ আদালতে চলা এই মামলায় বিকাশ জওসওয়ালকে সাহায্য করছেন আইনজীবী কমল চৌধুরী। তবে কি ফিরবে সিউড়ির সেই চিত্র। অপেক্ষায় বিকাশের পরিবার এবং কিংস রোডের প্রতিবেশীরা।