ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো বিপর্যয়ের জেরে দীপাবলির আলোর রোশনাইও যেন ফিকে বউবাজার চত্বরে
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো বিপর্যয়ের জেরে দীপাবলির আলোর রোশনাইও যেন ফিকে বউবাজার চত্বরে
দীপাবলি উপলক্ষে একদিকে যখন আলোর উৎসবে সেজে উঠছে মহানগর সেই সময়েই পাদপ্রদীপের নীচে জমাট বাঁধা অন্ধকারের সাক্ষী কলকাতার বউবাজার এলাকা বাসিন্দারা। প্রতিবছর যেখানে মহা-ধূমধামের সঙ্গে দীপাবলির অনুষ্ঠান করা হয়, সেই বিবি গাঙ্গুলী স্ট্রিট, স্যাকরা পাড়া লেন চত্বরেই যেন এই বছর এসেই পৌঁছানো না দীপাবলির আলোর রোশনাই।
গত মাসেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ চলাকালীন কলকাতা বউবাজার সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি পুরনো বাড়িকে হঠাৎ ভেঙে পড়তে দেখা যায়। যার জেরে ইতিমধ্যেই গৃহহীন হয়েছেন বিবি গাঙ্গুলী স্ট্রীট, দুর্গা পিথুরী লেনের একাধিক পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি গৌর দে লেনের একাধিক বাড়িও সম্পূর্ণ ভাবে ধসে পড়েছে। কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের তরফে ওই ঘটনার পরই দ্রুত প্রায় ৬০০ পরিবারকে নিকটবর্তী হোটেল বা লজে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই আকস্মিক বিপর্যয়ের পরও ওই এলাকার মানুষদের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে কতদিন সময় লাগবে তা সময় বলবে। কিন্তু উৎসবের রেশ যাতে হারিয়ে না যায় তাই কালীপূজোর উপলক্ষে ওই এলাকায় একটি কম বাজেটের ছোট পূজা মণ্ডপও তৈরি করা হয়েছে ব্যবসায়িক সমিতি ও পাড়ার বাসিন্দাদের উদ্যোগে। স্যাকরা পাড়া লেনের সোনার দোকানের এক কর্মী বলেন ' অন্য বছরের মতো না হলেও এবার আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা মা কালীর পূজার আয়োজন করেছি। রবিবারই মণ্ডপে আমারা মাতৃ প্রতিমা নিয়ে আসবো।’
অন্যদিকে মেট্রো বিপর্যয়ের পর গত ২৫শে অক্টোবর হোটেল থেকে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন ৯৪ বিবি গাঙ্গুলী স্ট্রিটের বাসিন্দা রিম্পা দাস। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে তিনি বলেন, 'প্রকৃত অর্থে বলতে গেলে আমরা এই বছর কালীপূজোর উদযাপন করছি না। আমাদের বেশিরভাগ প্রতিবেশীই এখনও বাস্তুহারা। তারা হোটেলগুলিতে থাকলেও তাদের অধিকাংশই এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। আমরা শুধুমাত্র মা কালীর সামনে আনুষঙ্গিক আচার অনুষ্ঠানগুলিই করব।’
সদ্য ঘর ফিরে পাওয়া গৌর দে লেনের অপর এক বাসিন্দা সোমনাথ ব্যানার্জী বলেন, 'আমরা এই বছর কোনও উৎসবে সামিল হচ্ছি না। কালীপূজোর জন্য প্রাথমিক আচার অনুষ্ঠান গুলিই শুধুমাত্র করা হবে। আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করবো যাতে শীঘ্রই আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধবেরা ঘরে ফিরে আসতে পারেন।’
অন্যদিকে এই বিপর্যয়ের পর নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসনও। ইতিমধ্যেই শহরের সমস্ত বিপজ্জনক বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে আরও কড়া অবস্থান নিতে চলেছে কলকাতা পৌরসভা। বউবাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি চিহ্নিতকরণের জন্য একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয় কেএমআরসিএলের তরফ থেকে। তারপরই তারা প্রায় ৫৪টি বাড়িকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করে। তার মধ্যে ২৭টি বাড়িকে দ্রুত বিনষ্ট করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।