শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কড়া হুঁশিয়ারি, বন্ধের নোটিস সরিয়ে খুলল চারুচন্দ্র কলেজ
অনির্দিষ্টকালের জন্য চারুচন্দ্র কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজ বন্ধ করা যায় না।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কড়া অবস্থানে কলেজ খুলতে বাধ্য হলেন চারুচন্দ্রের অধ্যক্ষ। বুধবার বিকেলে কলেজের গেট থেকে নোটিস খুলে নেওয়া হয়। এদিন সকালেই ওই নোটিসে কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন চারুচন্দ্রের অধ্যক্ষ। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকেই স্বাভাবিক নিয়মেই কলেজের পঠন-পাঠন শুরু হবে।
অনির্দিষ্টকালের জন্য চারুচন্দ্র কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজ বন্ধ করা যায় না। এর জন্য শিক্ষা দফতরকে জানাতে হয়। কলেজ বন্ধ করা হবে কি হবে না তা শিক্ষা দফতর আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গোটা ঘটনাতে যে প্রবলভাবে তিনি ক্ষুব্ধ তো বুঝিয়েও দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তিনি বলেন, চারুচন্দ্রের কলেজের অধ্যাপকদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেও নাকি শিক্ষামন্ত্রী খোঁজ নিয়ে জেনেছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, কলজে চালায় সরকার। সুতরাং, তেমন কোনও ঘটনা হলে সরকারকে জানানো উচিত বলেই মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। বারবার চারুচন্দ্র কলেজে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অধ্যাপকদের ঝামেলা হচ্ছে কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কলেজের অশিক্ষককর্মীরাও যে এই সব ঘটনার পিছনে ইদ্ধন জোগাচ্ছেন তাও শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন।
মঙ্গলবার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলার জেরে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ করে দেন চারুচন্দ্রের অধ্যক্ষ। কলেজের গেটেও এই মর্মে নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, চারুচন্দ্রের ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনার কোনও খবর তাঁর কাছে ছিল না। এমনকী এর জেরে যে চারুচন্দ্র কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সে খবরও তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই পান বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
বুধবার বিকেলে, চারুচন্দ্র কলেজের পরিচালন কমিটির এক সদস্য জানান, বিষয়টি তিনি বুধবার সকালে জানতে পেরেই অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নাকি এমনটাও বলেছিলেন যে কলেজ বন্ধের এমন কোনও সিদ্ধান্ত অধ্যক্ষ একক মতে নিতে পারেন না। এরপরই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন বলেও জানান পরিচালন কমিটির ওই সদস্য। শিক্ষামন্ত্রীও নাকি তাঁকে জানিয়ে দেন কোনওভাবে কলেজ যেন বন্ধ না থাকে। পরে অধ্যক্ষের সঙ্গে ফের কথা বলে কলেজ বন্ধের নোটিস তুলে নেওয়ার কথা বলেন। চারুচন্দ্র কলেজের পরিচালন কমিটির ওই সদস্য জানিয়েছেন, খুব শিগগিরি কলেজের অচলাবস্থা নিয়ে বৈঠক হবে শিক্ষা দফতরে। সেখানে কলেজের অধ্যক্ষ, অধ্যাপক এবং পরিচালন কমিটির প্রতিনিধিরা ছাড়াও ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা চারুচন্দ্রের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তাঁদের অভিযোগ, কলেজের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকরা নিজেদের মতো চলেন। তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থের দিকে ঘুরেও তাকান না। এরপরও কথায় কথায় ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দেওয়া হয়। কোনও অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকদের খাম-খেয়ায়লি আচরণে তারা বারবার হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে।
নিরাপত্তারক্ষীকে সরানো নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চারুচন্দ্র কলেজ। মঙ্গলবার বেলা দু'টো থেকে কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে পড়ুয়া। রাত ৯টা পর্যন্ত এই অবস্থান চলে। পরিস্থিতি চরম অশান্তিতে পৌঁছয় রাতে। সে সময় কিছু উত্তেজিত ছাত্র বেশকিছু অধ্যাপককে শারীরিকভাবে হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। এরপর ছাত্ররা অবস্থান তুলে নিলেও অধ্যাপকরা পাল্টা আন্দোলন শুরু করেন।
চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যাপকরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের শরণাপন্ন হন। পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে অধ্যক্ষও জানান, আন্দোলনরত পড়ুয়াদের হাতে কলেজের অধ্যাপক শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। এমনকী, এই ঘটনায় কিছু বহিরাগত জড়িত বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীকে সরানো নিয়ে যে সব পড়ুয়া আন্দোলনে নেমেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র হলেও তাঁর কলেজের সঙ্গে এদের কোনও যোগ নেই।
চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, ছাত্ররা প্রায়সই এমনইভাবে ঘেরাও শুরু করছে। অধ্যক্ষকের ঘরের মধ্যে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকে। ছাত্রদের উত্তেজনায় সে সব নথিপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে। এরসঙ্গে যেভাবে বহিরাগত ছাত্ররা অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকে পড়ছে তা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথেষ্টই উদ্বেগের বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি। অধ্যক্ষের আরও অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহকারী সংস্থার মালিকের সঙ্গে কথা বলেই পুরনো এক নিরাপত্তাকর্মীকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, ওই নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়ছিল। এরপরই নিরাপত্তা দেওয়া সংস্থার মালিকের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মীকে সরিয়ে নতুন একজনকে স্থালাভিষিক্ত করা হয়। অধ্যক্ষের অভিযোগ, এই সামান্য ঘটনা নিয়েই কিছু ছাত্র অযথা কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাজ্য শিক্ষা দফতরের আনা ছাত্র বিল অনুযায়ী কলেজে ছাত্র সংসদ গঠিত না হলে এই সমস্যা থেকে যাবে বলেই মনে করছেন চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ।