নার্সিং ছাত্রীর আত্মহত্যা, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে গঠন হচ্ছে চার সদস্যের নয়া প্যানেল
নার্সিং ছাত্রীর আত্মহত্যা, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে গঠন হচ্ছে চার সদস্যের প্যানেল
ইংরেজি লেকচার বুঝতে না পারায় আত্মঘাতী হন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের (এনএমসি) প্রথম বর্ষের নার্সিং ছাত্রী। এমনই অভিযোগ। এরপরই নড়েচড়ে বসে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলেজে চার সদস্যের প্যানেল গঠন করা হবে। যারা গ্রাম থেকে আসা পড়ুয়াদের জীবনধারা নিয়ে আলোচনা করবে এবং তাঁদের জীবনের ইতিবাচক দিক তুলে ধরবে।
নার্সিং ছাত্রীর আত্মহত্যার কারণ
ইংলিশে লেকচার বুঝতে না পারায় গত ১৬ নভেম্বর সমাপ্তি তাঁর হস্টেলের ঘরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহতআ করেন। সুইসাইড নোট পাওয়া যায় তাঁর ঘর থেকে। সেখান থেকে জানা যায় যে ইংলিশে নার্সিংয়ের পড়াশোনা ও লেকচার বুঝতে না পারায় তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। ইংলিশের চেয়ে বাংলাতেই সমাপ্তি বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সুইসাইড নোটে লেখা পাঁচ লক্ষ টাকার উল্লেখও ভাবিয়েছে তদন্তকারীদের। তবে সমাপ্তির বাবা জানিয়েছেন যে মেয়ে যখন পুজোর সময় বাড়ি এসেছিল তখন জানিয়েছিল যে সে নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ ছাড়তে চায়। কিন্তু কোনও এক শিক্ষিকা জানিয়েছিল তাকে যে মাঝরাস্তায় পড়াশোনা ছাড়লে তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই ব্যাপারটা মাথায় ঘুরছিল সমাপ্তির। সেখান থেকেই হয়ত তাঁর এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ। এনএমসির নার্সিং বিভাগের শীর্ষ এক অধ্যাপক বলেন, ‘এটা খুব গুরুতর বিষয়। একজন ছাত্রী তাঁর জীবনধারা, ভাষা এবং পরিবারের ভিতের কারণে এ ধরনের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিল। ফের এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটার আগে কলেজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে চারজন সদস্যের কমিটি তৈরি করা হবে, যাঁরা সমস্যার শিকড়ে পৌঁছে সেটাকে বুঝবে।'
চার সদস্যের প্যানেল কিভাবে কাজ করবে
কলেজ প্রত্যেকটি পড়ুয়ার সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলবে। এর পাশাপাশি তাঁর বন্ধু, পরিবার এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। যাতে লেকচাররে সময় তাঁর আদৌও কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। এছাড়াও এনএমসি শহরের কিছু নামকরা মনোবিদদেরও পড়ুয়াদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য নিয়ে আসবে। এই মনোবিদরা পড়ুয়াদের হীনমন্যতা সহ মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটাও খতিয়ে দেখবে।
কি ভাবছেন মনোবিদরা
কলকাতার জনপ্রিয় মনোবিদ ডাঃ তন্ময় মিত্র, যিনি শহরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বিহেভিয়ার সায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত, তিনি বলেন, ‘আমরা এটাকে বলি আবেগ নিয়ন্ত্রণ। এটা এক ধরনের রোগ, যেখানে ব্যক্তি তাঁর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় এবং তাড়াহুড়ো করে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন।' তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় কলেজের অধ্যাপকদের আরও বেশি স্পর্শকাতর হওয়া উচিত এবং পড়ুয়াদের আশ্বাস দেওয়া উচিত যে কোনও সমস্যায় তাদের পাশে রয়েছেন তাঁরা। শিক্ষাকর্মীরা পড়ুয়াদের মধ্যে এমন আত্মবিশ্বাস এবং আবহাওয়া তৈরি করবেন যে পড়ুয়ারা সমস্যা বলতে কোনও দ্বিধাবোধ না করেন। বিশেষ করে ভাষাগত যদি কোনও সমস্যা হয়ে থাকে।'
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজেও। এ বছরের আগস্টে হৃষিক কোলে নামে রসায়নের এক ছাত্রকে উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটর স্টেশনের মাঝে রেললাইনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুগলির সিঙ্গুরের বাসিন্দা হৃষিক এজেসি বোস রোডের হস্টেল থেকে বন্ধুদের বালতি কিনতে যাচ্ছেন বলে বেড়িয়ে যান। এরপর পুলিশ তাঁর সুইসাইড নোট থেকে জানতে পারেন যে শহুরে জীবনধারা ও ইংলিশে লেকচার বুঝতে না পারায় আত্মহত্যা করেছে সে।