জীবনসুধার আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কালীপুজোর দিনে তৈরি হল অনিশ্চয়তা, যা অফিসবাবুদের চিন্তায় ফেলবে
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা২০মিনিটে মধ্য কলকাতার ঐতিহ্যশালী বহুতল জীবনসুধার ষোল তলায় আগুন লাগে। এইখানে একটি রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্কের সার্ভার রুমে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এরপরই গলগল করে ধোঁয়া বের হতে থাকে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা২০মিনিটে আগুন লেগেছিল কলকাতার জওহরলাল নেহরু রোডের উপরে থাকা জীবনসুধা বিল্ডিং-এ। এরপর থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছিল। অবশেষে বিকাল ৩টা৩০ মিনিট নাগাদ আগুন নিয়য়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানায় দমকল। বলতে গেলে পাঁচ ঘণ্টা ধরে বিধ্বংসী আগুনের সঙ্গে সমানে সমানে লড়াই করে গিয়েছেন দমকলকর্মীরা। এমনিতেই শুরুতে দমকলের ইঞ্জিন দাঁড়ানোর জায়গা না পাওয়ায় আগুন নেভানোর কাজে বিলম্ব হয়ে গিয়েছিল। এই জটিলতা কাটিয়ে যখন দমকলকর্মীরা কাজে নেমেছিলেন ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখার গ্রাসে এসে গিয়েছিল জীবনসুধা বিল্ডিং-এর তিনটি ফ্লোর।
[আরও পড়ুন:এই কারণের জন্য কি ভয়াবহ আকার নিল জীবনসুধা বিল্ডিং-এর আগুন, জানুন কী সেই কারণ ]
এই পরিস্থিতির মধ্যে দমকলকর্মীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আগুন যাতে আর অন্য কোনও ফ্লোরে ছড়িয়ে না পড়ে তা দেখা। দমকল কর্মীদের কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছিল গঙ্গার হাওয়া। এই হাওয়ার জেরে আগুন দ্রুত গতিতে ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছিল।
জলেরও একটা বড় সমস্যা ছিল বলে জানিয়েছে দমকল। ষোল তলায় রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্কের যে সার্ভার রুমে আগুন লেগেছিল সেখানে এমন সব জিনিস ছিল যাতে খুব সহজেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সার্ভার রুম থেকে আগুন পৌঁছয় ব্যাঙ্কের অন্যান্য ঘরেও। সেখানেও প্রচুর পরিমাণে কাগজপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট এবং কাপড়ের পর্দা ছিল। ফলে আগুন ভয়ঙ্কর আকার নিতে অসুবিধা হয়নি।
সাধারণত এই ধরনের পরিস্থিতিতে দমকলের একটিমাত্র লক্ষ থাকে যাতে আগুন অন্য কোথাও ছড়িয়ে না পড়ে। তাই দমকল কর্মীদের নজরে এই বিষয়টিও রাখতে হচ্ছিল। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দমকল যখন জানায় আগুন কার্যত নিয়ন্ত্রণে তখন অগ্নিবিধ্বস্ত ফ্লোরগুলির অফিসের কর্মীরা হাফ ছাড়েন। কিন্তু, দমকল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পুরো বিল্ডিং আগে ভালো করে পরিদর্শন করা হবে, তারপরই তাতে প্রবেশের অনুমতি পাবেন সাধারণ মানুষ। ষোল তলা সহ যে তিনটি ফ্লোরে আগুন লেগেছিল তা তো এই পরিদর্শনে যেমন থাকবে তেমনি অন্যান্য ফ্লোরগুলিতেও হবে কড়া পর্যবেক্ষণ। বিন্দুমাত্র বিপদের আশঙ্কা থাকলে বিল্ডিং-কে নিরাপদ বলে ঘোষণা করবে না দমকল। এই পরিদর্শন প্রয়োজন পড়লে দফায় দফায় হতে পারে। এই পর্যবেক্ষণ যতক্ষণ চলবে ততক্ষণ জীবনসুধা বিল্ডিং-এর সমস্ত তলের অফিস তালাবন্ধই থাকবে। সুতরাং, এই অবস্থা দিন কয়েক স্থায়ী হলে কালীপুজোর ছুটি কাটিয়ে অফিসগুলির কাজ শুরু হওয়াটা সমস্যায় পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগুন লাগার পরই প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি ছিল, ষোলতলায় রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্কের সার্ভার রুমে এক বিকট শব্দের পরই গলগল করে ধোঁয়া বেরিয়ে এসেছিল। এবং মুহর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নিয়েছিল সার্ভার রুমকে। দমকলের মতে, ওই বিকট শব্দ হয়েছিল সার্ভারে কোনওভাবে শর্ট-সার্কিটের ফলে। যদিও, এখনই আগুন লাগার কারণ নিয়ে সরকারিভাবে কিছু জানায়নি দমকল। আগুন লাগার কারণের বিস্তারিত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার পরই তা জানানো সম্ভব বলে জানিয়েছে তারা। যদিও, জীবনসুধা বিল্ডিং-এর অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না বলেও মনে করছে দমকলবাহিনী। এই নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্টও দেওয়া হবে। এমনকী, রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্কের দফতরেও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দমকল।