For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

এই ছবি দেখে অনুশোচনায় বিদ্ধ তৃণমূলকর্মী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিলেন বার্তা, এক বিবেকের 'ডায়েরি'

১৭ মে রাত ১০টার সময় আচমকাই অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোনটা বেজে উঠেছিল। গোটা দিন ধরে পঞ্চায়েত ভোট গণনার ক্লান্তি গ্রাস করেছিল শরীর ও মনকে। কিন্তু উপায় নেই তখনও গণনা চলছে।

  • By Oneindia Staff
  • |
Google Oneindia Bengali News

১৭ মে রাত ১০টার সময় আচমকাই অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোনটা বেজে উঠেছিল। গোটা দিন ধরে পঞ্চায়েত ভোট গণনার ক্লান্তি গ্রাস করেছিল শরীর ও মনকে। কিন্তু উপায় নেই তখনও গণনা চলছে। মুহূর্তে মুহূর্তে ঢুকছে আপডেট, আর তুলে ধরতে হচ্ছিল ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার লাইভ পঞ্চায়েতে পেজে।

মাত্রাতিরিক্ত সন্ত্রাসে কি বিধ্বস্ত খোদ তৃণমূলের লোকজন

বলতে গেলে কিছুটা বিরিক্তি সহকারেই ফোনটা ধরেছিলাম। কিন্তু, কল রিসিভ করতেই ভেসে এল এক অতি পরিচিত কন্ঠস্বর। প্রায় দু'দশক ধরে চেনা একটি গলা। খানিকটা অসহায়, মনক্ষুন্ন এবং অবশ্য এক তীব্র হতাশা যেন বেরিয়ে আসছিল। এই ব্যক্তিটিকে পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই একজন প্রভাবশালী তৃণমূলকর্মী বলেই জানি। নিজেকে সবসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক বলতেই পছন্দ করেন তিনি। কিন্তু, ১৭ তারিখ রাতে যেন তাঁর গলাটা ছিল চরম আশাহত হওয়া ভেঙে পড়া একজনের মতো। ফোনেই জানালেন নদিয়ার মাজদিয়ায় কৃষ্ণগঞ্জে গণনাকেন্দ্রে ঢুকে যে ভাবে একজন দেদার ছাপ্পা ভোট দিল তাতে তিনি আর স্থীর থাকতে পারছেন না। পঞ্চায়েত ভোট করানোর জন্য গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন এলাকায় তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন। তাঁর কথাতে- 'শাসক দলের কর্মী হয়ে সন্ত্রাসের যে ছবিটা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছিলাম তা মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু, দলের প্রতি ভালোবাসায় কোথাও একটা বাকরুদ্ধতা গ্রাস করেছিল।' গণনার দিন নদিয়ার মাজদিয়ার ঘটনায় নাকি তিনি আর স্থীর থাকতে পারেননি। তাই প্রতিবাদ হিসাবে 'উন্নয়ন' নিয়ে একটি বার্তা তিনি আমাদের মাধ্যমে তৃণমূলনেত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে চান। তাঁর সেই লেখার কিছু অংশ আমারা নিচের অংশে প্রকাশ করেছি। সঠিক বাক্যের দায়বদ্ধতায় কিছু আ-কার-ইকার-এর ও ক্রিয়ার অবস্থান ঠিক করা ছাড়া হুবহু একই লেখা প্রকাশ করা হয়েছে এবং অবশ্যই এই তৃণমূল কর্মীর পরিচয় আমরা গোপন রেখেছি, কারণ সোর্স ডিসক্লোজ না করাটা সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। এছাড়াও অন্যকিছু অসুবিধাও রয়েছে, তা নিশ্চয়ই পাঠকরা বুঝতে পারবেন-

মাত্রাতিরিক্ত সন্ত্রাসে কি বিধ্বস্ত খোদ তৃণমূলের লোকজন

'উন্নয়ন'- এক তৃণমূল কর্মীর বিবেকের ডায়েরি-
'রাস্তা থেকে সরাসরি বুথ হয়ে এবার এক্কেবারে তাক লাগিয়ে দিয়ে গণনাতেও হাজির হল 'উন্নয়ন'। এই উন্নয়ন আগে দেখেছে কি বাংলা? কস্মিনকালেও মনে করতে পারছি না। গণনাকেন্দ্রেও রক্ত চক্ষু দেখিয়ে ব্যালটে দেদার ছাপ্পা মারছে এক যুবক। যে নিজেকে আবার তৃণমূলকর্মী বলে পরিচয় দেয়। তাঁর এতটাই প্রতাপ যে পুলিশও হতভম্ব। নিজের চোখ কচলাচ্ছি! সত্যি কি ঘটছে এমন ঘটনা! মিডিয়ার কল্যাণে এই ছবি দেখেছে বাংলা, গোটা ভারত এবং ডিজিটাল মিডিয়ার দৌলতে গোটা বিশ্ব।

[আরও পড়ুন:কাকদ্বীপে সিপিএম নেতা ও তাঁর স্ত্রীর জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য][আরও পড়ুন:কাকদ্বীপে সিপিএম নেতা ও তাঁর স্ত্রীর জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য]

মনে প্রশ্নের ভীড়। এরকমটা কি হওয়ার কথা ছিল? সত্যি কি বিরোধীদের দাপটে পঞ্চায়েত নির্বাচনেই ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা বাংলা শাসককুলের! পরিসংখ্যান ও রাজনৈতিক বিশ্লষণ তো সে উত্তর দেয় না। এটা সত্যি কথা যে কংগ্রেস ও সিপিএম-এর ভোটব্য়াঙ্কে দ্রুত ধস নামায়, মূল বিরোধী শক্তি হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপি। কিন্তু, সেটা কখনই তৃণমূলের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রাস করার মতো নয়। তাহলে পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে এতকাণ্ড কেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার মানুষের জন্য নিরলস উন্নয়নের কর্মকাণ্ড করে চললেও দলের রাশ এখন তাঁর হাতে পুরোপুরি নেই। যিনি এই তৃণমূল সংগঠনটাকে হাতের তালুর মতো চিনতেন তিনি এখন বিপক্ষ শিবির বিজেপি-তে। আর নেত্রীর ভাইপো তৃণমূলের 'যুবরাজ' অভিষেক তো দলে নিজের লোক তৈরি করতেই ব্যস্ত।

দলের মধ্যে আদি ও নব্য তৃণমূলীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট। দলের পুরনো নেতৃত্ব অভিষেকের সঙ্গে সখ্য রেখে বশ্যতা মানতে নারাজ। পিসির ভাইপো বলে উপর উপর সম্মান দেখাতেই হবে। বাড়তি স্তাবকতা ও তোষামোদ করতে হবে। কিন্তু আড়ালে আবডাল তারা অত্যন্ত বিশ্বস্তদের কাছে অভিষেকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিতে কসুর করছেন না। এমনকী, নিচুতলার কর্মীরাও বেনজির সন্ত্রাসে হতভম্ভ এবং যারপরনাই হতাশ। ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য শাসকদলের মধ্যে 'দাদাগিরি' ভাবটা বজায় থাকে। কংগ্রেস আমলেও ছিল। বামেরাও সেটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেসের একশ্রেণীর নেতা ও তাঁদের অনুগামীরা যে একটা স্রেফ গুণ্ডামির জায়গায় নিয়ে গিয়েছে তা এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঠারেঠারে অনুভব করছিলাম। কিন্তু, এমন সন্ত্রাসের সৈনিক তো কোনওদিনই হতে চায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই কলেজ জীবন থেকে তাঁর অনুগামী। এর জন্য অনেক মূল্য চুকিয়েছি। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা ঘটল তা দেখে নিজের রাজনৈতিক জীবনের প্রারম্ভিক দিনগুলোর কথা খেয়াল পড়ে যাচ্ছিল। বামেরাও তো এমনই সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছিল, যার বিরুদ্ধে 'দিদি'-র সৈনিক হয়ে লড়াই করেছিলাম।

বিরোধী দেখলেই সন্ত্রাসের করাল ছায়া তাদের গুড়িয়ে ফেলতে হবে এই নির্দেশ কে দিল? কোথায় থেকে এল? কিছুই প্রথমে জানতাম না। বুঝতে পারছিলাম দলের শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ যারা পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার দায়ভার নিয়েছেন- তাঁদের সঙ্গে নিচুতলার কর্মীদের কাছে কোনও স্বচ্ছ বার্তালাপ নেই। দলের প্রশাসনিক ভাগের সঙ্গে কর্মীদের মধ্যে কোথাও যেন দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে।

[আরও পড়ুন:পুলিশকে ঘিরে কোথাও 'মুর্দাবাদ' স্লেগান ,কোথাও আক্রমণ! গণনার দিনের কিছু তথ্য][আরও পড়ুন:পুলিশকে ঘিরে কোথাও 'মুর্দাবাদ' স্লেগান ,কোথাও আক্রমণ! গণনার দিনের কিছু তথ্য]

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড হলেও তৃণমূলীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব একটা রয়েই গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হতেই এলাকা-এলাকায় 'হার্মাদ টার্ন টু জল্লাদ' তারাই ময়দানে নেমে পড়েছিল। কিছু তৃণমূলী এতে আবার ইন্ধন যুগিয়েছিল। প্রকাশ্যে বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিলমোহরও দিয়েছিল দল। এর নিট রেজাল্ট ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের জয় ৩৪ শতাংশেরও বেশি ভোটে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেষ ২০ বছরের জয়কেও যা ছাপিয়ে গিয়েছে।

[আরও পড়ুন:পদ্মশিবিরের জয়ের খবর আসতেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত বীরভূম][আরও পড়ুন:পদ্মশিবিরের জয়ের খবর আসতেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত বীরভূম]

স্বভাবতই বাংলা জুড়ে গণতন্ত্র নেই- এই বার্তা মাত্রাতিরিক্তভাবে ছড়িয়েছে। অনুব্রতর উন্নয়নের মডেলই চালু কথায় রসিকতার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ফলে 'উন্নয়ন' শব্দটাই ব্যাঙ্গাত্মক অর্থে ছড়িয়ে পড়েছে। আর বিরোধী থেকে স্তাবক মিডিয়াগুলো এই 'উন্নয়ন'-কে লুঠে নিয়েছে। আর ঠিক এই জায়গাতেই আমার মনে একটা প্রশ্ন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শাসক দল কীভাবে এই উন্নয়নকে মান্যতা দিল? দলের কোনও বড়-মোজ-সেজ কোনও নেতাই তো অনুব্রতর উন্নয়ন নিয়ে একটা ট্যাঁ-ফু করলেন না। তাহলে জনগণ কী বুঝলেন যে 'কেস্ট মডেল'-ই ভবিতব্য। গোটা রাজ্যে মুখ পুড়ল তৃণমূলের। এতে আদৌ কি তৃণমূলের কোনও লাভ হবে। গত কয়েক বছরে পঞ্চায়েতে কাজ হয়নি এই কথা বিরোধীরাও বলতে পারবেন না। তাহলে, শাসকের এত ভয় কীসের। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা চলে আসে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন থেকে চলা হিংসা এবং ভোটগ্রহণের দিনের হিংসা যদি না হত তাহলে কি ভালো ফল হত না? পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কোর্ট-কাছাড়ি, ভোটের দিনক্ষণ বদল, মনোনয়ন জমা দিনগুলি এবং ভোটগ্রহণের দিনের হিংসাকে বিশ্লেষণ করে যদি বলা যায় স্বচ্ছ ভোট হলে ভারসাম্য কতটা বদলাত? আমার মতে দু-চারটি জেলা বাদ দিলে আর কোথাও সেভাবে নির্বাচনী লড়াই হতই না। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের পঁচাশি শতাংশ আসনেই তৃণমূলের জয় ছিল নিশ্চিত। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় যে উন্নয়নের কাজ করেছেন তারই হাত ধরেই এই জয় ছিল নিশ্চিত। কিন্তু ভোটের দিনের সন্ত্রাস, বিরোধীদের হুমকি, বুথের নিয়ন্ত্রণ, ভোটের সার্বিক ছাপ্পা, বুথে ভোটারদের গণতন্ত্র হরণ- আখেরে ভবিষ্যতে তৃণমূলের ভোট রাজনীতিতে ধাক্কা দিল। বিশেষত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়ে গেল এক অবিশ্বাস। লোকসভা নির্বাচন ও পঞ্চায়েত নির্বাচন চরিত্রের দিক থেকে কোনওভাবেই মেলে না। এটা অন্তত বোঝা উচিত ছিল তৃণমূলের ভোট ম্য়ানেজারদের। মোদী, অমিত শাহদের পাখির চোখ বাংলা। তাঁরাও যথাসময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বাংলার বুকে ব্যবহার করবেন বলেই নানা সূত্রে খবর মিলছে। যে সব সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসের সামনে মাথা নোয়ালেন তারা সেই দিন ফের ভোট দেবেন। কিন্তু, তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধা তাঁদের মনে ছিল তা তখন বজায় থাকবে তো? মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় যে নিরলস পরিশ্রম করে উন্নয়নের কাণ্ডারি বনেছিলেন তাঁর নিজের দলের করা সন্ত্রাসে সেই ভাবমূর্তি আজ বিপন্ন। সময় অবশ্য এর সঠিক উত্তর দেবে। কিন্তু, তৃণমূলের ভোট ম্যানেজাররা কি কিছু শুনতে পেলেন?'

[আরও পড়ুন:গননা কেন্দ্রে প্রকাশ্যেই পড়েছিল ছাপ্পা, তাও এখানে পুনর্নির্বাচন চায় না কমিশন][আরও পড়ুন:গননা কেন্দ্রে প্রকাশ্যেই পড়েছিল ছাপ্পা, তাও এখানে পুনর্নির্বাচন চায় না কমিশন]

English summary
A brief account of a TMC worker who is disappointed with the Panchayat violence and blames the party for all this.
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X