কলকাতার ৬০ শতাংশ অঞ্চলে ঠাঁই নেই কোনও দলিত পরিবারের, বলছে গবেষণা
বিগত দশক থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত মুক্তি আন্দোলন গুলি ক্রমেই বড়সড় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে সামাজের বিভিন্ন অংশে। সংগঠিত হচ্ছে সরকার ও প্রতিষ্ঠান বিরোধী ছোটবড় আন্দোলন। কিন্তু এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েও কলকাতায় দলিতদের পরিসংখ্যান দেখলে ভ্রু-কুঞ্চিত হওয়া খানিক অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন সমাজতাত্ত্বিকেরা।

দেশব্যাপী মাথাচাড়া দিচ্ছে একাধিক দলিত মুক্তি আন্দোলন
শহুরে ভারতীয়ের মধ্যেও যে ব্যাপক অর্থে জাত-পাত ও শ্রেণি বৈষম্যের চারাগাছ অবাধে ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে তা এই তথ্য থেকেই খানিক পরিষ্কার হয়। বর্তমানে দলিত শব্দটি এখন খুবই জনপ্রিয় এক রাজনৈতিক শব্দ। একইসাথে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বৈপরীত্যে বর্তমানে গোটা দেশে দলিত আন্দোলন গুলি ক্রমেই মাথা চাড়া দিচ্ছে।

ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য
এমতাবস্থায় ২০১৮ সালে বেঙ্গালুরুর ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে আসছে দেশের দলিতদের সম্পর্কে একাধিক নতুন তথ্য। বেঙ্গালুরু আইআইএম-র তিন গবেষক নবীন ভারতী, দীপক মালহান ও আন্দালিব রহমানের ‘জাতের কারণে বিচ্ছিন্ন' শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রে চোখ রাখলে দেশের শহরাঞ্চলে তফসিলি জাতি উপজাতির মানুষদের আসল অবস্থাটা খানিক পরিষ্কার হয়।

রাজকোটের ৮০ শতাংশ অঞ্চলে নেই কোনও দলিত বাসিন্দা
সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতার ৬০ শতাংশ পাড়ায় ঠাঁই নেই কোনও দলিত পরিবারের। একইসাথে ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি শহর বেঙ্গালুরুর ২০ শতাংশ পাড়ায় একটিও দলিত পরিবারের দেখা মিলবে না। অন্যদিকে রাজকোটের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চলে কোনও দলিত (তফসিলি জাতি) বাসিন্দা নেই।

বেশ কিছু প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিল এই গবেষণা
এদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে গ্রামীণ ও অশিক্ষিত লোকেরা শহুরে ও শিক্ষিত মানুষদের থেকে বেশি বর্ণবিদ্বেষী। একইসাথে অনেকেই মনে করেন শহরে জাত-পাতের থেকে কাজের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সমাজের পূর্ণগঠনের ক্ষেত্রে। সর্বোপরি অনেককে এটাও বলতে শোনা যায় আধুনিকতা ও নগরায়ণের বিস্তারের সাথে সাথে বর্ণভেদও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু এটা যে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা তা আরও একবার পরিষ্কার করে দিল আআইএম বেঙ্গালুরুর এই গবেষণা, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

সময় এসেছে দলিত মুক্তি আন্দোলন গুলিতে সংহতি জানানোর
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও সমাজতাত্ত্বিকেরা বলছেন এই পরিসংখ্যান মাথায় রেখেই এখন সময় হয়েছে শহুরে ভারতীয়র মোড়ক ছেড়ে ফেলে দলিত সম্প্রদায় গুলির সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও পরিষ্কার করার। তাদের সামাজিক দাবী-দাওয়া ও আন্দোলন গুলির পক্ষে পাশে দাঁড়ানোর। অন্যথায় এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও জাত-পাতের কালাপাহাড় আমাদের ক্রমাণ্বয়ে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের দিকে ঠেলবে বলেই মনে করছেন তারা।