কলকাতার হোটেলে ভয়াবহ আগুন, পুড়ে মৃত ২ আবাসিক, আটক হোটেলের মালিক
হোটেলে রহস্য আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল দু'জনের। আহতও হয়েছেন পাঁচ জন। বুধবার ভোররাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে কলকাতার হো চি মিন সরণির গোল্ডেন পার্ক হোটেলে। নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা হোটেলে।
কলকাতা, ৩০ মার্চ : হোটেলে রহস্য আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল দু'জনের। আহতও হয়েছেন পাঁচ জন। বুধবার ভোররাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে কলকাতার হো চি মিন সরণির গোল্ডেন পার্ক হোটেলে। নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা হোটেলে। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় শেক্সপিয়ার সরণি থানায় দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধায়ের নির্দেশে এফআইআর দায়ের করা হয়। হোটেল মালিক ও ম্যানেজারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই আবাসিকের নাম চমার কিষাণ (৫২) ও অনুপ আগরওয়াল (৫২)। চমার ওড়িশার বাসিন্দা ও অনুপের বাড়ি গুজরাটে। তারা ব্যবসার কাজে কলকাতায় এসেছিলেন। উঠেছিলেন হো চি মিন সরণির ওই হোটেলে। কলকাতা পুলিশের তরফে খবর দেওয়া হয়েছে তাঁদের বাড়িতে। দেহ ময়নাতদন্ত পাঠানো হয়েছে। এদিনই ফরেনসিক দল তদন্ত আসে।
অগ্নিকাণ্ডের পরেই কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় হোটেল। সেন্ট্রাল্ড এসি। ধোঁয়া বের হতে না পেরে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হোটেল আবাসিকের মধ্যে। কিন্তু বেরিয়ে আসার কোনও পথ খুঁজে পাননি আবাসিকরা। বাধ্য হয়েই কেউ কেউ পাইপ বেয়ে নিচে নামে। কেউ জানলা থেকে ঝাঁপ দেয়। অনেকেই হাত-পায়ে চোট পেয়েছেন। অনেকেই আটকে পড়েন দীর্ঘক্ষণ। বেরিয়ে আসার কোনও পথই পাননি তারা।
অবশেষে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের লোকজন উদ্ধারকার্যে নেমে আটকে পড়া যাত্রীদের নামিয়ে আনে মোট ২৯টি ঘরে আবাসিকরা ছিলেন। ৩১ জন আবাসিককে উদ্ধার করা হয়েছে। দমবন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ কাটাতে হয় তাদের। ফিরে আসে আমরি-আতঙ্ক। প্রায় সকলকেই সুরিক্ষতভাবে উদ্ধার করা গেলেও দু'জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে কী কারণে গোল্ডেন পার্ক হোটেলে আগুন লাগল তা স্পষ্ট করে বোঝা না গেলেও প্রাথমিক তদন্ত দমকল মনে করছে রান্নাঘর থেকে আগুন লাগে। হোটেলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাতেও গলদ রয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক অনুমান। এই মর্মে দমকলের তরফে এফআইআরও দায়ের করা হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দেন এফআইআর করতে। তিনি বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের গাফিলতি অস্বীকার করতে পারে না। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও, তা আদৌ কাজ করেছিল কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়। ঠিকমতো মেন্টেনেন্স হত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য হোটেল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, হোটেলে অগ্নিনির্বাপণ বা অগ্নি সুরক্ষার যাবতীয় বন্দোবস্ত মজুত ছিল। স্প্রিংলার, ফায়ার অ্যালার্ম ঠিক মতোই কাজ করেছে। আগুন নেভানোর সমস্ত ব্যবস্থা ছিল হোটেলে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কেউই তা ব্যবহার করতে পারেনি। তারপর আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে লোডশেডিং হয়ে গিয়েছিল বলেও দাবি আবাসিকদের। তারপর রাত তিনটে নাগাদ অনেকেই হোটেলের ঘরে নিদ্রাচ্ছন্ন ছিলেন। হঠাৎ আগুনে কী করবেন কেউই বুঝে উঠতে পারেননি।
হো চি মিন সরণির গোল্ডেন পার্ক হোটেলে আগুন লাগার পর কালো ধোঁয়ায় সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। আগুন লাগার পরও কেউ বেরিয়ে আসতে পারেননি। কোনও রাস্তা খুঁজে পাননি আবাসিকরা। ভাঙতে পারেননি কাচ। ফলে আরও বড় বিপত্তি ঘটতে পারত। কাচের ঘরের এসি রুমে ধোঁয়ার কুণ্ডলি তৈরি হয়। এই ধোঁয়ার জেরে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। তাতেই দু'জনের মৃত্যু হয় বলে মনে করা হচ্ছে। আহতদের ভর্তি করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে।
দমকল ও পুলিশ পৃথক তদন্ত শুরু করেছে। কী কারণে এই আগুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে হোটেল অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত ছিল কি না খতিয়ে দেখা হবে। এদিনই ফরেনসিক দল আসবে ঘটনাস্থলে।