বাইশের ‘একুশে জুলাই’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ! এবার মমতা কী কী বার্তা দেবেন, তারই একঝলক
বাইশের ‘একুশে জুলাই’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ! এবার মমতা কী কী বার্তা দেবেন, তারই একঝলক
দু-বছর পর ধর্মতলায় ফিরছে তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ। একুশে বিরাট জয়ের এই প্রথম সমাবেশ ঘিরে আবেগ আর উন্মাদনায় টগবগ করে ফুটছে তৃণমূল। তৃণমূলের মেগা ইভেন্টের দিকে নজর এখন গোটা রাজ্যের। কার্শিয়াং থেকে কাকদ্বীপ এখন কলকাতামুখী হয়েছে ২১ জুলাই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, তা আস্বাদন করতে, দলকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে।
২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন
বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্যে। একুশের বিধানসভা ভোটের পর শতাধিক পুরসভার ভোট হয়ে গিয়েছে। সেখানেও পর্যুদস্ত হয়েছে বিজেপি। এখন পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরুর অপেক্ষা। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা আশা করে রয়েছেন, ২০২২-এর এই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকেই দলনেত্রী বার্তা দেবেন আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে চলার পথ স্থির করে দেবেন। আসন্ন নির্বাচনে সাফল্য আনতে তৃণমূল কোন পথে চলবে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোন কোন কাজে তৃণমূল অগ্রাধিকার দেবে সেই বার্তাও একুশের জুলাইয়ের মঞ্চে থেকে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বার্তা বিজেপি বিরোধিতায়
রাজ্যে এই মুহূর্তে বিজেপিই প্রধান বিরোধী তৃণমূলের। পক্ষান্তরে জাতীয় ক্ষেত্রেও বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে উঠতে চাইছে তৃণমূল। সেই আঙ্গিকে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করে দেবেন এই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে। সম্প্রতি গোটা দেশেই জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। হেঁসেলে আগুন লেগে গিয়েছে। পেট্রোপণ্য থেকে গ্যাসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। মূদ্রাস্ফীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত অসন্তোষ। সই অসন্তোষকে কাজে লাগাতে মরিয়া তৃণমূল। তৃণমূল নেত্রী তাই এই একুশের সমাবেশ থেকে প্রয়োজনীয় বার্তা দিতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের উদ্দেশে।
কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে বার্তা
শুধু বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে দেওয়াই নয়, কেন্দ্র যে বাংলার সরকারের প্রতি বঞ্চনা করছে, তাও তুলে ধরবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে বৈঠক বা নানা আলোচনায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ সরব হয়েছেন, রাজ্যের পাওনা দেয় কেন্দ্রে দি্চ্ছে না, একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে জিএসটি- কোনও পাওনাই রাজ্য পাচ্ছে না। রাজ্য থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র, কিন্তু কেন্দ্র রাজ্যের পাওনা না দেওয়ায় যুদ্ধ জারি রেখেছেন মমতা। একুশের সমাবেশ থেকে সেই যুদ্ধের বার্তা তিনি আরও দৃঢ় করবেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। বর্তমানে অগ্নিবীর নিয়ে যে তরজা চলছে, তা নিয়েও বিজেপিকে কড়া বার্তা দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দলীয় স্তরে দুর্নীতি
বিরোধী বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একুশের নির্বাচন থেকে স্থির করে দেবেন দলের অভিমুখ। দলে বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি। সেই দুর্নীতির অভিযোগে লড়াই লাগছে তৃণমূলে-তৃণমূলে। তারপর কয়লা থেকে গরু পাচার-সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিন্ডিকেট, তোলাবজির অভিযোগও উঠছে। এই প্রতিকূলতা দমনে দলনেত্রী হিসেবে তিনি দলের নেতা ও কর্মীদের প্রতি কী বার্তা দেন, কোন পথে দুর্নীতির কাঁটা উপড়ে ফেলেন, তার দিকেও নজর থাকবে একুশের সমাবেশে।
২৪-এর প্রস্তুতির বার্তা
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের এই মেগা ইভেন্ট থেকে মমতা বন্যোা পাধ্যায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন নিয়ে কী বার্তা দেন, সেদিকেই বেশি আগ্রহ রাজনৈতিক মহলের। ২০২৪-এ তৃণমূল কোন অবস্থান নেয়, বিজেপি বিরোধিতায় জোট গড়তে তিনি কী বার্তা দেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে। কংগ্রেসকে নিয়েই বা তিনি কী অবস্থান নেন, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কেননা তৃণমূল কংগ্রেস সাম্প্রতির অতীতে কংগ্রেসকে ছাপিয়ে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে চাইছে জাতীয় রাজনীতিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোদী-বিরোধী প্রধান মুখ করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই ২০২৪-এর দেড় বছর আগে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তিনি কী বার্তা দেন, তা অধীর আগ্রহে শোনার অপেক্ষায় দলের নেতা-নেত্রীরাও।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অবস্থান
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৮ বিরোধী রাজনৈতিক গল এক হয়ে একজন প্রার্থী স্থির করেছিলেন। বিরোধীদের একের বিরুদ্ধে এনডিএ-র এক প্রার্থী এবার সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন। একইভাবে বিরোধীরা উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে এক নামে সম্মত হলেও সেখানে মমতা বন্যোবেপাধ্যায়ের দলের গরহাজিরা রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি করেছে। তৃণমূল এ ব্যাপারে কী অবস্থান নেন, তা চূড়াব্ত হবে ২১ জুলাই-ই। এই মঞ্চ থেকে তিনি কোনও তাৎপর্যপূর্ণ ঘোষণা করেন কি না, সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। কেননা এবার এবনডিএর উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন বাংলার সদ্য প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আর বিরোধীদের প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের মার্গারেট আলভা। তাই মমতা কার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত কেন, সেদিকে তাকিয়ে রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল।
ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা
বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল যে সাম্প্রদায়িক তোপ দাগবে, সেটা ধরে নেওয়াই যায়। কারণ বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে বড় ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নুপূর শর্মার করা নবি মহম্মদ বিষক মন্তব্য। তা নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল হয়েছে। আবার রাজ্যে মমতার দলেরই সাসংদ মহুয়া মৈত্র কালী পুজো নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। বিজেপি আবার এই কালীপুজোকে রাজনৈতিক ইস্যু করে ফেলেছে। তারা কালীপুজো করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ধর্মীয় সম্রীপুতির বার্তা দেবেন মমতা। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই বার্তা তিনি যেমন দেবেন, তেমনই বিজেপির ধর্মীয় তাসও ছিন্ন করবেন। সম্প্রতি আদিবাসী ভোট নিয়ে যে তরজা শুরু হয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মুকে এনডি প্রার্থী করায়, তা নিয়েও তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দেবেন মমতা।
জনসংযোগের বার্তা
একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি বার্তা দেবেন জনসংযোগের। জনসংযোগের লক্ষ্যে কোন পথে হাঁটবে তৃণমূল, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তার সঠিক রূপায়ণে বার্তা দেবেন তিনি। ইতিমধ্যে দুয়ারে সরকার, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি নিয়েছে মমতা বন্যোিরপাধ্যায়ের সরকার। এবার দলের নেতৃত্বকে তিনি বার্তা দেবেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যস্তর থেকে তৃণমূলস্তরের নেতৃত্ব এখন তাকিয়ে তাঁদের নেত্রী কী বার্তা দেন। তৃণমূল মনে করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে আগামী এক বছরে দলের জন্য রোডম্যাপ স্থির করে দেবেন। সেই রোডম্যাপ ধরেই তৃণমূল এগিয়ে যাবে।
জনসংযোগের বার্তা
একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি বার্তা দেবেন জনসংযোগের। জনসংযোগের লক্ষ্যে কোন পথে হাঁটবে তৃণমূল, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তার সঠিক রূপায়ণে বার্তা দেবেন তিনি। ইতিমধ্যে দুয়ারে সরকার, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি নিয়েছে মমতা বন্যোিরপাধ্যায়ের সরকার। এবার দলের নেতৃত্বকে তিনি বার্তা দেবেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যস্তর থেকে তৃণমূলস্তরের নেতৃত্ব এখন তাকিয়ে তাঁদের নেত্রী কী বার্তা দেন। তৃণমূল মনে করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে আগামী এক বছরে দলের জন্য রোডম্যাপ স্থির করে দেবেন। সেই রোডম্যাপ ধরেই তৃণমূল এগিয়ে যাবে।
মমতার হ্যাটট্রিকের পর প্রথম একুশে জুলাই, কী কী কারণে এবারের সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ