প্রকৃতি নিয়ে শব্দ সাজাতে ভালবাসে এই বাঙালি কন্যা, আমেরিকা এখন বুঁদ লগ্নজিতার কবিতায়
আমার কবিতায় প্রকৃতি-র প্রভাব যেমন থাকে, তেমনি থাকে কলকাতার কথাও। আমি ছয় বছর বয়স পর্যন্ত কলকাতাতেই ছিলাম। ওখানেই তো আমার জন্ম।
আমার কবিতায় প্রকৃতি-র প্রভাব যেমন থাকে, তেমনি থাকে কলকাতার কথাও। আমি ছয় বছর বয়স পর্যন্ত কলকাতাতেই ছিলাম। ওখানেই তো আমার জন্ম। সে জন্য আমার দ্বিতীয় কবিতার বইটা ২০১৯ সালের একদম শুরুতে কলকাতা থেকেই বের হচ্ছে। আমার প্রথম কবিতার বইটি অবশ্য বেরিছিল আমেরিকাতেই।
কলকাতাতে কাটানো পুজোর কথা একটু মনে আছে। কিন্তু, পুজোর এই সময় আর দেশে যাওয়া হয় না আমাদের। দেশের পুজো শেষ দেখেছিলাম অন্তত দেড়-দশক আগে। খুব ছোট ছিলাম তখন। তাই দেশের পুজোর আমেজ বা তার মাত্রটাকে ঠিক করে অনুভব করে উঠতে পারিনি। প্রতিবার দেশে গিয়ে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাই। গত দু'বার গিয়েছি ডুয়ার্স ও শান্তিনিকেতনে। এবার দেশে গিয়ে যাবো রাজস্থানে। দেশের প্রাকতিক ঐশ্বর্য আমার ভালো লাগে প্রত্যক্ষ করতে। তবে আমেরিকাতেও আমরা প্রচুর বেড়াতে যাই। ইউরোপেও বেড়াতে গিয়েছি দু'বার। মেক্সিকো, কানাডা-তেও গিয়েছি। তাই আমি মনে করি, 'ন্য়াচরাল বিউটি' হল য়ে কোনও সীমারেখা ও গণ্ডীর উপরে। যে কোনও 'ন্যাচরাল সিনারি'-ও আমার খুব প্রিয়। তাই আলাদা করে দেশের নেচার-কে মিস করি না। আমি যদিও কবিতার চেয়ে আগে গান লেখা শুরু করেছিলাম। আমি পাঁচ ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারি।
২০১৪ সালে আমার লেখা, সুর-করা ও গাওয়া-গান নিয়ে অ্য়ালবাম বেরিয়েছে আমেরিকা-তে। কবিতা লেখা শুরু এরপর। এখন কবিতাটাই বেশি লিখি। আমার কবিতা লিখতে ও পড়তে ভাল লাগে। প্রতিটি শব্দ, লাইন আর 'মেটাফোর' আমার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি কবিতাতেই এই সব-কিছুর প্রভাব থাকে। তবে, আগে থেকে ভাব-টাকে ভেবে কবিতাটা লিখি না। লেখার পরে অনুভব করি। এই সব মিলে আমার কবিতা তৈরি হয়।
কবিতার 'কনসেপ্ট' বা 'ভাবনা' এবং কোনও লাইন আমাকে বেশি করে আকর্ষণ করে। আমার মনে হয় শুধু-শুধু 'ফিলিং' দিয়ে কবিতা লেখা যায় না। 'ফিলিং'-টা কীভাবে ব্যক্ত হচ্ছে তার উপরেই নির্ভর করে কবিতার কাঠামোটা। তাই 'ফিলিং' আর 'ল্যাঙ্গুয়েজ'- কবিতার ক্ষেত্রে এ দু'টো-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে আমার কবিতায় ভারত ও আমেরিকার সংস্কৃতির মিশ্রণের একটা প্রকাশ থাকে।
আমেরিকা ও ভারত এই দুই দেশের মধ্যে পার্থক্যটা মূলত হলো 'কালচারাল'। তাই এই দুই দেশের মধ্যে একটা বড় পার্থক্য আছে। দুই দেশেরই কিছু ভালো ও খারাপ দিক আছে। দুই দেশেরই সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যেও ওই দুটো দিক আছে। তাই, দুই দেশের মানুষের মধ্যেও ভালো ও খারাপ আছে। আমেরিকা ও ইন্ডিয়ার মধ্যেও সেটাই কমন। আমেরিকার অনেক নামকরা ম্যাগাজিনে আমার কবিতা বেরিয়েছে। আমার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পত্রিকাতেও। সম্প্রতি আমার তিনটা কবিতা বেরিয়েছে সাহিত্য অ্যাকাডেমির ইংলিশ জার্নাল ইন্ডিয়ান লিটারেচারে।
এবার এখানকার পুজো নিয়ে কিছু বলি। আমেরিকায় পুজো -তে স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে না। সপ্তাহ-এর শেষে তিন দিন পুজোর সময় বন্ধুদের সঙ্গে খুব আড্ডা হয়। আমরা 'কালচারাল প্রোগাম' -এর আয়োজন করি। বড়োদের মতো আমরাও খুব সাজগোজ করি। একটা বড়ো সোশ্যাল গ্যাদারিং ও একটা ফেস্টিভ মুড তো থাকেই। সেটাই 'সো-কলড' পুজো-পুজো ভাব কিনা বলতে পারবো না, কারণ দেশের ওই 'ফিলিং'-টার সঙ্গে আমি তেমন ফ্যামিলিয়ার নই।
আমার কবিতার বিষয় হল 'ডিসক্রিমিনেশন'। আমার মা ও বাবা দুজনেই 'আর্টিস্টিক'। ওরা গান, নাচ, পড়াশোনা, লেখালেখি, ছবি তোলা, ছবি আঁকা, নাটক - এ সব নিয়েই থাকে। এই পরিবেশটা আমাকে কবি হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। মা ও বাবা দু'জনেই আমার কাছের মানুষ। মা-এর 'গাইডেন্স' আর বাবা-র 'ফ্রেন্ডশিপ', দুটোই আমার কাছে 'ইক্যুয়ালি সিগনিফিক্যান্ট'।
আমি বাংলা ভালো পড়তে পারি না, লিখতেও পারি না। তবে বাংলা বুঝতে ও বলতে পারি মোটামুটি। বাংলা কবিতা একদমই পড়়া হয় না। বাবা-র কাছে শুনি, মাঝেমধ্যে। শেষে বলি শুধু কবি নয় যে কোনও 'ক্রিয়েটিভ পার্সন'-ই 'আনকনভেনশনাল ইন থিংকিং'। যার ফলে আমিও 'লাইক টু থিঙ্ক এভরিথিং ইন আ ডিফারেন্ট ওয়ে'। তবেই তো নতুন কিছু 'ক্রিয়েট' করার মতো সাবজেক্ট পাওয়া যাবে। আসলে কবিতা-তে যা কিছু থাকে সব-ই তো 'অলরেডি এক্সিট' করে, সেটাকে 'ডিফারেন্ট' দেখালে তবেই তা থেকে নতুন কিছু 'ক্রিয়েট' করা যাবে।
(লগ্নজিতা মুখোপাধ্যায়- আমেরিকার নবপ্রজন্মের কবিদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে লগ্নজিতা। ইতিমধ্যে আমেরিকার ইয়ুথ পোয়েট লরিয়েট-এর সম্মানেও সম্মানিত হয়েছে সে। বাবা শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় এবং মা সুতপা মুখোপাধ্যায় তার প্রেরণা। বছর তিন আগে খোদ হোয়াইট হাউসে গিয়ে তৎকালীন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা-কে কবিতা শুনিয়ে এসেছিল লগ্নজিতা। গান বানানো, সুর দেওয়া এবং গান গাওয়া ছিল লগ্নজিতার প্রথম পছন্দ। কিন্তু, শব্দের কারিকুরি নিয়ে খেলতে খেলতে কবিতার মায়াজালে বাঁধা পড়ে যায় লগ্নজিতা। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির 'জয়ং দেহি রূপং দেহি' বিভাগের জন্য আমেরিকা থেকে কলম ধরেছে লগ্নজিতা।)