এবার এক ক্রিকেটার প্রধানমন্ত্রীকেই কি পেতে চলেছে পাকিস্তান, আজ রাতের মধ্যেই পরিষ্কার হবে ছবি
পাকিস্তানকে ক্রিকেটে বিশ্বসেরা করেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা পাকিস্তানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলেই মনে করা হয়।
পাকিস্তানকে ক্রিকেটে বিশ্বসেরা করেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা পাকিস্তানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলেই মনে করা হয়। সন্ত্রাস আর জাতি-হিংসা, জঙ্গিপনায় ডুবে থাকা পাকিস্তানকে ইমরান ও তাঁর ছেলেরা বিশ্বের সামনে আলাদা এক ভাবমূর্তি তুলে ধরেছিলেন। এহেন ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খান দু'দশক ধরে রাজনীতির আঙিনায়। আর এবার পাকিস্তানের নির্বাচনে যা পরিস্থিতি তাতে ইমরান প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ধরেই নেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজ শরিফের অপসারণের পর সে ভাবে কোনও গ্রহণযোগ্য মুখ নেই। নওয়াজের অপসারণের পর তাঁরই দলের শাহিদ খাকোয়ান আব্বাসি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মাত্র কয়েক মাসের জন্য।
পাকিস্তানের ভোট সমীক্ষার যা ফল তাতে নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এন-এর এবারের ভোটে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন। তারমধ্যে খোদ পাকিস্তানের বিচারবিভাগ, মিলিটারি, ইনটেলিজেন্স এজেন্সি নওয়াজদের বিরোধিতা করছে।
ইমরান খানের পক্ষে কেন ঝুলে অঙ্ক?
পাকিস্তানের রাজনীতির সবচেয়ে বড় বিষয় হল ভারত বিরোধিতা। ইমরান ও তাঁর দল গত কয়েক বছরে বিগত পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন। কাশ্মীর ইস্যুতে বারবার আক্রমণ করেছেন ইমরান। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাশ্মীর ও পাকিস্তান নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিভিন্ন স্থানে মুখ খুলেছেন ইমরান। ইমরান খানের এই স্টান্টবাজি পাকিস্তানের কট্টরপন্থীদের মন কেড়েছে। এর সঙ্গে ইমরান তাঁর দলের সঙ্গে পাকিস্তানের বিভিন্ন কট্টরপন্থী ধর্মীয় সংগঠনগুলিরও আঁতাত বাড়িয়েছেন। জিতেছেন এই কট্টরপন্থীদের ভরসা। পাশাপাশি নওয়াজ শরিফের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। পঞ্জাব প্রদেশ নওয়াজ শরিফদের নির্বাচন জেতার সবচেয়ে বড় দূর্গ। সেখানেও ইমরানের রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ নওয়াজদের বিরুদ্ধে অল-আউট আক্রমণে গিয়ে সাফল্য পেয়েছেন। যার ফলে পঞ্জাবের বেশকিছু আসনে ইমরানের দল পিটিআই-এর জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সর্বোপরি ইমরানের হয়ে ব্যাটিং শুরু করেছে সেদেশের সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের শাসনযন্ত্রে টিকে থাকাটা এই সেনাবাহিনীর হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয়। সেনাবাহিনীও মনে করছে ভারত বিদ্বেষ নিয়ে ইমরান যে ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন তা আখেরে দেশের শাসন যন্ত্রকে অক্সিজেন জোগাবে। এমনকী, ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে দেশে সন্ত্রাসের পরিবেশ অনেকটাই কমে যাবে বলেও মনে করছে সেনাবাহিনী।
নওয়াজের সম্ভাবনা নেই
দুর্নীতির দায়ের জেলে গিয়ে নওয়াজ শরিফের পক্ষে রাজনীতিতে কামব্যাক করাটা এখন কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, নওয়াজ জেল থেকে ছাড়া পেলেও ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। ক্ষমতায় না থাকতে পারলে পিএমএল-এন-এর সংগঠন যে আবার তলানিতে গিয়ে ঠেকবে তা বোঝেন দুধে রাজনীতিক নওয়াজ। এর আগেরবার দীর্ঘদিন বিদেশে নির্বাসন কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। দেশে ফিরে অনেক মেহনত করে দলের সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছিলেন। এই নির্বাচনে পিএমএল-এন ভালো ফল করতে না পারলে সমস্য়া বাড়বে। তাই নওয়াজ তাঁর মেয়ে মারিয়াম যিনিও দুর্নীতির দায়ের জেলে রয়েছেন এক জুয়া খেলেছেন। এই জুয়ার চাল হিসাবেই আদালত শাস্তি ঘোষণা করতেই লন্ডন থেকে মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন জেল খাটতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই জুয়া কতটা কাজে লাগবে সন্দেহ আছে। কারণ, নওয়াজের উদারবাদ এবং ভারতপ্রীতিকে কোনওভাবেই মানতে রাজি নয় পাকিস্তানের মৌলবাদী ও কট্টরপন্থীরা। এই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি। ফলতই ইমরানকে পিছনে ফেলে পিএমএল-এন-এর কারোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া কঠিন।
শাহবাজ শরিফ- রয়েছেন দ্বিতীয় অপশনে
নওয়াজ শরিফের ভাই এবং দীর্ঘদিন ধরে পঞ্জাব প্রদেশের মন্ত্রী। অনেকেই মনে করেছিলেন নওয়াজ জেলে গেলে এই শাহবাজই প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। শাহবাজের সঙ্গে নওয়াজ শরিফের অবশ্য কিছু মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। আর এই পার্থক্য়ের জন্যই ইমরানের পর সেকেন্ড অপশন হিসাবে প্রধানমন্ত্রী পদে শাহবাজের নামটা নাকি রেখেছে পাক সেনাবাহিনীর কর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে কতটা এগিয়ে বিলাওয়াল
বেনজির ভুট্টোর ছেলে এখন ২৯ বছরের যুবক। পাকিস্তান পিপলস পার্টির মাথা তিনি। ভোট সমীক্ষায় ইঙ্গিত বিলাওয়ালের পক্ষেএখনই প্রধানমন্ত্রী পদে আসিন হওয়া কঠিন। কারণ পাক জনমানসে এখনও তিনি গ্রহণযোগ্য নন। তবে, পিপিপি যে এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে তা ভোট সমীক্ষায় বলা হয়েছে। সরকার গঠনে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল অন্য সমীকরণ তৈরি করে দিতে পারেই বলে মনে করা হচ্ছে। পিটিআই এবং পিএমএল-এন সংখ্য়াগরিষ্ঠতা না পেলে এই পিপিপি-র সমর্থন নিতে হতে পারে তাঁদের। সেক্ষেত্রে কোনও দড়াদড়িতে সফল হলে বিলাওয়ালার কপালে প্রধানমন্ত্রীর তখতে বসার সুযোগ খুললেও খুলতে পারে। যদিও, এই অঙ্ক বড়ই অনিশ্চয়তায় ভরা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।