For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

আওরঙ্গজেব: ৩০০ বছর আগের এই মুঘল সম্রাটকে নিয়ে এখনও কেন সোশাল মিডিয়ায় বিতর্ক হচ্ছে

  • By Bbc Bengali

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব
Getty Images
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মারা গেছেন ৩০০ বছরেরও বেশি সময় আগে, কিন্তু তাকে নিয়ে ভারতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে।

আওরঙ্গজেবকে বলা হয় "সর্বশেষ কার্যকর মুঘল সম্রাট", যিনি ভারতকে ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ এই অর্ধ-শতাব্দী কাল ধরে শাসন করেছেন।

তবে তিনি ইতিহাসবিদদের কাছে কখনোই খুব একটা প্রিয় ছিলেন না।

প্রথমত তিনি তার পিতাকে বন্দী করে এবং নিজের বড় ভাইকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন।

অন্যান্য মুঘল শাসকদের তুলনায় তার খুব একটা সুনাম ছিল না - তার প্রপিতামহ আকবরকে দেখা হয় একজন ধর্মনিরপেক্ষ শাসক হিসেবে, তার দাদা জাহাঙ্গীর শিল্প-সাহিত্যের প্রতি আগ্রহের কারণে পরিচিত ছিলেন এবং পিতা শাহজাহান ছিলেন একজন রোমান্টিক শাসক যিনি তার স্ত্রীর নামে তাজমহল নির্মাণ করেছেন।

কিন্তু ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তাকে প্রায়শই একজন নিষ্ঠুর শাসক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্য বিস্তারকারী। তিনি কঠোর শরিয়া আইন চালু করেছিলেন। হিন্দুদের জন্য ফিরিয়ে এনেছিলেন বৈষম্যমূলক জিজিয়া কর যা তাদেরকে তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রদান করতে হতো।

বলা হয়ে থাকে যে তিনি সঙ্গীতসহ অন্যান্য শিল্পকলাকে ঘৃণা করতেন এবং তিনি বেশ কয়েকটি মন্দির ধ্বংস করে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এসবই ঘটেছে কয়েকশ বছর আগে। কিন্তু সম্প্রতি তার প্রতি যে ধরনের ঘৃণা দেখা যাচ্ছে সেটা নজিরবিহীন।

হিন্দুদের পবিত্র শহর বারাণসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মধ্য দিয়ে এটা শুরু হয়। বিশ্বনাথ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। আওরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৬৯ সালে ষোড়শ শতাব্দীর এই হিন্দু মন্দিরটি ধ্বংস করা হয়।

জ্ঞানবাপী মসজিদ।
Getty Images
জ্ঞানবাপী মসজিদ।

আরো পড়তে পারেন:

সম্রাট আওরঙ্গজেব কি সত্যিই হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন?

মুঘল সম্রাট আকবরের নামে সড়কের নাম বদলের চেষ্টা

বঙ্গাব্দ'র প্রবর্তক সম্রাট আকবর, না কি গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক?

এখন সোশাল মিডিয়াতে তাকে নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আওরঙ্গজেবের জন্য মর্যাদাহানিকর হাজার হাজার রেফারেন্স, আদালতের ফাইলেও এসব পাওয়া যাচ্ছে এবং ভারতের বর্তমান হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসকরাও এসব বক্তব্য তুলে ধরছেন।

ডিসেম্বর মাসে বারাণসীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি "আওরঙ্গজেবের নৃশংসতা এবং সন্ত্রাসের" বিষয়ে কথা বলেছেন। "তিনি তরবারির সাহায্যে সভ্যতা বদলানোর চেষ্টা করেছেন। গোঁড়ামির মাধ্যমে তিনি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছেন," বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

গত মাসেও শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি এই মুঘল সম্রাটের নাম উল্লেখ করেছেন। ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করলে তেগ বাহাদুরের শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, "যদিও আওরঙ্গজেব অনেক মস্তক বিচ্ছিন্ন করেছেন, তিনি আমাদের বিশ্বাসে নাড়া দিতে পারেন নি।"

তার এই মন্তব্যে ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন একজন কানাডীয়-আমেরিকান সাংবাদিক যিনি টুইটারে প্রশ্ন তুলেছিলেন "ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কেন ৩০০+ বছর আগে মারা যাওয়া একজন মুঘল সম্রাটকে আক্রমণ করে লম্বা বক্তৃতা দিচ্ছেন?"

https://twitter.com/davidfrum/status/1517185023769825280


বেশ কয়েকটি টুইটের মাধ্যমে ঐতিহাসিক অড্রে ট্রাশকি এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বাস করে যে "মুসলিমরা শত শত বছর ধরে হিন্দুদের পীড়িত করেছে, এবং একারণে আজকের দিনে অতীতের উচিত শাস্তি হিসেবে তাদেরও পীড়িত হতে হবে।"

তিনি বলেন, "বর্তমান কালের মুসলিমদের ঘৃণা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা গ্রহণযোগ্য এই ইঙ্গিত দিতেই আওরঙ্গজেবের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।"

টুইটারে এই আলোচনার পর আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে আরো অনেক ঘৃণা জমা হয়েছে।

আগ্রা শহরের মেয়র তাকে একজন "কসাই" হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন সব জায়গা থেকে তার চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে। টুইটারে মুঘল এই সম্রাটকে উল্লেখ করা হয়েছে "একজন দখলদার" হিসেবে যিনি হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চেয়েছিলেন।

একজন টুইটার ব্যবহারকারী এও বলেছেন হিন্দুদের পূজা করার জায়গায় মুঘলরা যেসব স্মৃতিস্তম্ভ এবং ভবন নির্মাণ করেছে সেগুলো বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলতে হবে।

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর:

ঢাকার এমপি হাজী সেলিমকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো এক পরিবারের তিন জনকে হত্যা

মাংকিপক্স - উদ্বেগের কারণ নাকি অগ্রাহ্য করার মত একটি রোগ?

ভারতের একজন আঞ্চলিক রাজনীতিবিদ আওরঙ্গজেবের সমাধির "অস্তিত্ব ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার" বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে তার সমাধিস্থল দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই নেতা আওরঙ্গজেবের সমাধি ধ্বংস করে ফেলারও আহবান জানিয়েছেন।

ইতিহাসবিদ, লেখক এবং আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাদিম রেজাভি বলেছেন, ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘু যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিন্দু জনরোষে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, তাদেরকে খারাপ হিসেবে তুলে ধরতে আওরঙ্গজেব "একটি সুবিধাজনক নামে" পরিণত হয়েছে।

অধ্যাপক রেজাভি বলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব বেশ কিছু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন এবং হিন্দুদের ওপর বৈষম্যমূলক কর আরোপ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ছিলেন জটিল একজন ব্যক্তি এবং তিনি পুরোপুরি শয়তান ছিলেন না।

"হিন্দু মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণে অনুদান দিয়েছেন, তার রক্তের দিক থেকেও তিনি নিজেও দুই-তৃতীয়াংশ হিন্দু ছিলেন কারণ তার প্রপিতামহ আকবর একজন রাজপুতকে (একটি হিন্দু সম্প্রদায়) বিয়ে করেছিলেন এবং তার শাসনামলে ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের মধ্যে আরো অনেক রাজপুত ছিলেন," বলেন তিনি।

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধিস্তম্ভ।
Getty Images
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধিস্তম্ভ।

অধ্যাপক রেজাভি বলেন আওরঙ্গজেব তার ব্যক্তিগত জীবনে মৌলবাদী ছিলেন না, যদিও এই ধারণাটি জনপ্রিয়, এবং "তিনি মদ্যপান উপভোগ করতেন, বীণা বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন এবং অন্য যে কোন মুঘল শাসকের সময়ের তুলনায় তার অধীনেই সঙ্গীতের ওপর অনেক বেশি বই রচিত হয়েছে।"

তবে তিনি বলেন "রাজনৈতিক ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে এবং কর্তৃত্ব জোরালো করতে আওরঙ্গজেব ধর্মের আশ্রয় নিয়েছেন- যা অনেকটাই বর্তমান সময়ের ভারতীয় নেতাদের মতো।

"তবে প্রশ্ন হচ্ছে আওরঙ্গজেব যদি খারাপ ও দুষ্ট প্রকৃতির হন, একজন সাম্প্রদায়িক এবং মৌলবাদী, যিনি মন্দির ধ্বংস করেছেন, আজকের দিনে কি আমাদেরকে তাকেও ছাড়িয়ে যেতে হবে?"

"তিনি একজন স্বৈরশাসক এবং সম্রাট ছিলেন যিনি ৩০০ বছর আগে বেঁচে ছিলেন। সেসময় আধুনিক গণতন্ত্র ছিল না, তাকে পরিচালনার জন্য কোন সংবিধান ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের ভারতীয় সংবিধান আছে এবং পার্লামেন্টের আইন আছে, তাহলে যেসব কাজ ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে করা হয়েছে সেগুলো এখন আমরা কিভাবে পুনরাবৃত্তি করতে পারি?" প্রশ্ন করেন ড. রেজাভি।

"সুতরাং কেউ যদি সপ্তদশ শতাব্দীর রাজনীতিকে আশকারা দেয়, তাহলে আওরঙ্গজেব সপ্তদশ শতাব্দীতে যেসব অপরাধ করেছিলেন, তারা এর চেয়েও আরো বড় অপরাধ করছে," বলেন তিনি।

English summary
Why there is debate on Aurangzeb in social media
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X