গাজায় ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতে এত মৃত্যু কেন?
গাজা-ইসরায়েল সীমান্ত এলাকায় শুক্রবার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে ১৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে শত শত লোক। এত প্রাণহানি হলো কেন?
গাজা-ইসরায়েল সীমান্ত এলাকায় শুক্রবার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে ১৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে শত শত লোক।
২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের কারণে একদিনে এত প্রাণহানির ঘটনা আর ঘটেনি।
প্রশ্ন উঠছে, এত প্রাণহানি হলো কেন?
ফিলিস্তিনিদের এই বিক্ষোভের পেছনে ছিল ইসরায়েলের সীমানার ভেতরে তাদের হারানো বাড়িঘরে ফিরতে দেবার দাবি, এবং তারা ঘোষণা করেছিল - ৬ সপ্তাহ ধরে এই আন্দোলন চলবে।
ফিলিস্তিনিরা মনে করছে, এই বিক্ষোভ হচ্ছে তাদের এক অব্যাহত আন্দোলনের সূচনা - যার মূল কথা হলো: যেসব শহর ও গ্রাম এখন ইসরায়েলের সীমানার মধ্যে আছে, সেই জায়গাগুলোর পুরোনো বাসিন্দা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সেখানে ফিরতে দিতে হবে।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
আরব-ইসরায়েল সংঘাত শুরু যে ৬৭ শব্দের অনুচ্ছেদে
আরবদের হটিয়ে যেভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল
হারাম আল-শরিফ কেন এত স্পর্শকাতর একটি স্থান?
বলা হয়, এই 'প্রত্যাবর্তনের পদযাত্রা' বা 'মার্চ অব রিটার্ন' অন্তত ৬ সপ্তাহ ধরে চলবে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে এ কমসূচি নেয়া হয়।
অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনী এখানে সীমান্ত বরাবর একটি নো-গো জোন অর্থাৎ যেখানে ফিলিস্তিনিরা ঢুকতে পারে না - তার তত্বাবধান করে। এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে তারা তাদের সৈন্যসংখ্যা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে ট্যাংক এবং চোরাগোপ্তা বন্দুকধারী বসিয়েছিল
কড়া নিরাপত্তার এই গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনিরা তাদের বিক্ষোভের প্রস্তুতি হিসেবে উত্তরের বেইত হানুন থেকে মিশর সীমান্তবর্তী রাফাহ পর্যন্ত পাঁচটি ক্যাম্প বসায় ।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই সমাবেশকে ইসরায়েলের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করার একটি পরিকল্পিত উস্কানি বলে আখ্যায়িত করে এবং বলে যে এখানে সংঘর্ষ হলে তার দায় নিতে হবে ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীকে।
গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীরই ডাকা এই আন্দোলনে প্রায় ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি যোগ দিয়েছে। তবে এর সাথে অন্যান্য ফিলিস্তিনি গ্রুপও আছে। সীমান্ত বরাবর ওই শিবিরগুলোতে যে জনসভা হয়েছে তাতে হামাসের নেতারা বক্তৃতা করেছেন। তাদের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলকে কখনোই স্বীকৃতি দেয়া হবে না ।
ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তারা গাজার চারদিকে একটি আবদ্ধ সামরিক এলাকা বলবৎ করেছিল । বেশির ভাগ বিক্ষোভকারী তাদের শিবিরের এলাকাতেই ছিল। কিন্তু কিছু যুবক সীমান্তের বেড়া থেকে দূরে থাকার জন্য বিক্ষোভকারীদের আহ্বান উপেক্ষা করে, এবং তারা ইসরায়েলি সেনা অবস্থানগুলোর কাছাকাছি চলে যায়।
ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে তারা 'প্রধান উস্কানিদাতাদের উদ্দেশ্যে' গুলি ছুঁড়েছে। জেরুসালেম পোস্ট লিখেছে, যারা নিহত হয়েছে তারা সীমান্তের বেড়া টপকাতে বা এর ক্ষতিসাধন করতে চেষ্টা করছিল।
কিন্ত ফিলিস্তিনিরা বলছে, ইসরায়েল বাড়াবাড়ি রকমের শক্তি প্রয়োগ করেছে । এমন কি ড্রোন ব্যবহার করে টিয়ার গ্যাস শেল ফেলার ঘটনাও ঘটেছে বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন।
ছয়টি এলাকায় দাঙ্গা হয়। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা টায়ার পোড়ায়, আগুনে বোমা এবং পাথর নিক্ষেপ করে - এবং তাদের সীমান্তের বেড়ার কাছাকাছি আসা ঠেকাতে ইসরায়েলি বাহিনী টিয়ারগ্যাস ও গুলি ব্যবহার করেছে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, ১৪০০-রও বেশি বেসামরিক মানুষ এতে আহত হয়েছে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত এ রক্তপাতের জন্য হামাসকে দোষ দিয়েছেন।
কিন্তু ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, শুক্রবারের প্রাণহানির সম্পূর্ণ দায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের।
জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিষয়ক ডেপুটি প্রধান তায়ে-ব্রুক জেরিহুন বলেছেন, ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং আইনের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি আরো বলেছেন, পরিস্থিতি আগামি কদিনে আরো খারাপ হতে পারে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক জরুরি অধিবেশনে এ ঘটনার নিন্দা করলেও একটি বিবৃতির ব্যাপারে একমত হতে পারে নি।