টেস্ট সিরিজ: বিসিবির ওপর কেন চটেছে পাকিস্তান বোর্ড
টেস্ট সিরিজ: বিসিবির ওপর কেন চটেছে পাকিস্তান বোর্ড
তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হতে হবে পাকিস্তানের একই শহরে, পাকিস্তানের ভেতর বেশি ঘোরাফেরা করবে না বাংলাদেশের ক্রিকেট দল এবং কম দিনে সফর শেষ করতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে এমন কিছু শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
বিসিবির এই কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, "পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে, আমরা জানিয়ে দিয়েছি সেখানে আমরা বেশি সময় সেখানে অবস্থান করার পক্ষপাতী নই।"
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছে, যে তিনটি টি-টোয়েন্টি আছে সেগুলোর বাইরে টেস্ট ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতেই খেলতে চায় তারা।
কিন্তু যদি টি-টোয়েন্টি খেলতে যাওয়া যায় তবে টেস্ট খেলতে সমস্যা কোথায় এমন প্রশ্ন উঠেছে তার প্রেক্ষিতে মি: চৌধুরী বলেন, "কেউ কেউ বলছে যদি কম সময়ের জন্য যাই তবে লম্বা সময়ের জন্য যেতে সমস্যা কী? যেকোনো নিরাপত্তা বিশ্লেষকই বুঝতে পারবেন, কম সময় থাকা ও বেশি সময় থাকায় কিছুটা হলেও পার্থক্য রয়েছে।"
বিসিবির এই মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
"যেমন একটা গন্ডির মধ্যে থাকতে হবে, চলাফেরায় কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এসব বিষয়ে আমরা ছাড় দিচ্ছি।"
কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এহসান মানি বলেন, "পাকিস্তানের ঘরের টেস্ট কোথায় হবে, এটি নিয়ে কারও কোনো ভ্রান্ত ধারণা থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশ হোক বা অন্য যে কোনো দলের বিপক্ষে, পাকিস্তানের সব ম্যাচ পাকিস্তানেই হবে। আমি এখনও আশা করি, বিসিবি বিষয়টি বিবেচনা করবে এবং মেনে নেবে যে, তাদের পাকিস্তান সফরে না আসার কোনো কারণ নেই।"
এহসান মানি চলতি বছরের শুরুর দিকে ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনার উদাহরণ দেন।
ক্রিকেট নিয়ে কিছু খবর:
নিজের বয়স নিয়ে যা বললেন আফগান বোলার রশিদ খান
আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের নেপথ্যে
ক্রিকেট বিনোদনের খোরাক মেটাতে ব্যর্থ বিপিএল?
তিনি বলেন, "ক্রাইস্টচার্চে যা হয়েছিল, সেটা ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় হতে পারে। ভারতেই এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। নিরাপত্তার দিক থেকে পাকিস্তান এখন ভালো অবস্থানেই আছে।"
তবে সিরিজকে অনিশ্চিত করতে চাননা মি: মানি, "আমি এখনই কোনো নেতিবাচক কিছু বলবো না, বিসিবির সাথে আমাদের আলোচনা চলছে। তাদের নারী ক্রিকেট দল এখানে এসেছিল, তাদের অনূর্ধ্ব ১৬ দল এসেছিল। তারা বেশ ভালোভাবেই ফেরত গিয়েছে।
পিসিবির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী বলেন, "অবশ্যই পিসিবি চাইবে পুরো সিরিজটা খেলার জন্য আমরাও আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের দিক থেকে বিবেচনা করছে আমরা আমাদের অবস্থান নিয়েছি।"
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নির্দিষ্ট ভেন্যুর কথাও বলেছে।
"ভেন্যুর ক্ষেত্রে আমরা একটা ভেন্যুতেই খেলার কথা বলেছি। সে ব্যাপারেও আমাদের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আমরা পাঠিয়েছি।"
সরকারি একটা দল পাকিস্তান সফর করেছে, তাদের একটা প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। বাংলাদেশ হাইকমিশনও কাজ করছে।
এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি বল ঠেলে দিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কোর্টে এবং পিসিবি চাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এই বিষয়টির সুরাহা করুক, যেহেতু এর আগে আইসিসি পাকিস্তানকে ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ বলে অনুমোদন দিয়েছে।
বিবিসি বাংলায় কিছু সংবাদ যা আপনি পড়তে পারেন:
রাজনীতির তৃণমূলে নারী নেতৃত্ব উঠে আসছে না কেন?
জাপানে বহু শিশু স্কুলে যেতে অনাগ্রহী
মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণে বাংলাদেশে মিল্ক ব্যাংক
মিসবাহ ও আজহার ক্ষুব্ধ
পিসিবির প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান কয়েকদিন আগে বলেছেন, বাংলাদেশকে কড়া জবাব দিয়েছেন তারা।
বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধান কোচ ও প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে আছেন সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের শেষে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, "টেস্ট ক্রিকেট চালু থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা না এলে পাকিস্তানের জন্য সেটি হবে ভীষণ হতাশাজনক।"
মিসবাহ'র মতে, এই সময়ে পাকিস্তানে না আসার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।
"আন্তর্জাতিক সিরিজ এখন এখানে হচ্ছে, দলগুলি আসছে ও খেলছে। বাংলাদেশও টি-টোয়েন্টি খেলতে চাইছে, কিন্তু টেস্ট কেন খেলতে চাইছে না, তা আমি বুঝতে পারছি না।"
বাংলাদেশ পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলতে না চাইলে সেটা পাকিস্তানের প্রতি অন্যায় হবে বলে মনে করেন মিসবাহ।
পাকিস্তানের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক আজহার আলীও এই বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন।
"আমি নিশ্চিত পিসিবি ব্যাপারটি দেখছে। তবে আমি বুঝতে পারছি না, সফরে না আসার কারণ কী হতে পারে। এটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। অনেক দলই এখানে আসছে-যাচ্ছে।"
আজহার আলীর মতে এশিয়ার এক দেশের উচিৎ আরেক দেশের পাশে দাঁড়ানো, "যদি এশিয়ার এক দেশ আরেক দেশকে সমর্থন না করে, এশিয়ার এক বোর্ড আরেক বোর্ডের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে আমরা কোন পথে এগোব।"