আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই কি লাকভিকে গ্রেফতার করলো পাকিস্তান?
দু'হাজার আট সালের মুম্বাই হামলার জন্য দায়ী করা হয় যে নিষিদ্ধ সংগঠনটিকে - সেই লশকর-এ-তৈয়বার কথিত নেতাকে দু'দিন আগে পাকিস্তানে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জাকিউর রেহমান লাকভি নামে এই নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ আনা হয়।
ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে এই লশকর-ই-তৈয়বা বা এলইটি-ই মুম্বাইয়ে একাধিক হামলার পরিকল্পনা করেছিল - যাতে ১৬৬ জন নিহত হয়।
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, সম্প্রতি পাকিস্তানের ওপর ফিনান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্ক-ফোর্সের মত আন্তর্জাতিক নজরদারি সংগঠনের চাপ বাড়ছিল - যেন জঙ্গী তৎপরতায় অথার্য়ন মোকাবিলায় পাকিস্তান আরো বেশি সক্রিয় হয়।
লাহোরের একটি ওষুধের দোকান
মি. .লাকভি ছিলেন জামাতুদ-দাওয়া নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী।
এ সংস্থাটির মূল ব্যক্তি হচ্ছেন হাফিজ সাইদ এবং লশকর-ই-তৈয়বাকে আড়াল করে রাখার জন্যই এটি গঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয় - এক রিপোর্টে বলছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট।
পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, লাহোর শহরে মি. লাকভি একটি ওষুধের দোকান চালাচ্ছিলেন - যা জঙ্গী তৎপরতায় অর্থায়নের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল।
জাতিসংঘের একটি কমিটি লশকরের এই নেতা জাকিউর রেহমান লাকভির বিরুদ্ধে আফগানিস্তান, ইরাক ও চেচনিয়াতেও বিভিন্ন আক্রমণের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল।
মুম্বাই হামলার 'পরিকল্পনাকারী' এলইটি
দু হাজার আট সালের ২৬শে নভেম্বর নৌকায় করে মুম্বাইতে আসা প্রায় ১০ জন জঙ্গীর একটি দল শহরের তাজ প্যালেস ও ওবেরয় হোটেলসহ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩০ জন ছিলেন বিদেশি যারা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক।
হামলাকারীদের মধ্যে মাত্র একজন জীবিত ধরা পড়েছিলেন। আজমল কাসাব নামের ওই পাকিস্তানী নাগরিককে পরে ভারতের আদালতে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল লশকর-ই-তৈয়বা।
মাস দুয়েক আগে নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের একটি আদালত লশকর-ই-তৈয়বার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাইদকে ১০ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করে।
'আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই' হাফিজ সাইদের কারাদণ্ড
ইসলামাবাদ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা ইলিয়াস খান তখন এক বিশ্লেষণে লেখেন, হাফিজ সাইদকে অনেক আগেই জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই 'একজন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী' হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তাকে ধরিয়ে দেবার জন্য এক কোটি ডলার পুরস্কারও ঘোষিত হয়েছিল।
"কিন্তু তাকে জেলে পাঠাতে এত দেরি হলো কেন - এ প্রশ্নের জবাব বেশ জটিল।"
"তার সাথে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা অনেকেরই জানা, তবে উত্তরটা হয়তো পাওয়া যাবে গত বছর দশেক সময়কালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের ওপর নজরদারির আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিনান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্ক-ফোর্সের দিক থেকে দেশটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি থেকে।"
সম্প্রতি জঙ্গী তৎপরতায় অর্থায়ন মোকাবিলায় আরো সক্রিয় হবার জন্য পাকিস্তানের ওপর এফএটিএফের চাপ বাড়ছিল।
এক্ষেত্রে পাকিস্তানের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য প্যারিসে তাদের একটি বৈঠকের আগে আগেই হাফিজ সাইদের কারাদন্ড হয়।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন:
পাকিস্তানে ১১ জন খনি শ্রমিককে অপহরণের পর হত্যা করেছে আইএস
মুম্বাই হামলার বিচারে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কী করেছে
দাঙ্গা-সহিংসতার তান্ডব কেন বারবার মুম্বাইতেই?
'এফএটিএফ সন্তুষ্ট না হলে পাকিস্তান গুরুতর সমস্যায় পড়বে'
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পাকিস্তান যদি এফএটিএফ-কে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়, এবং কালো তালিকায় তাদের অবস্থান আরো নিচের দিকে চলে যায় - তাহলে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ওপর গুরুতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।
পাকিস্তান এখন আইএমএফের কাছ থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য যে সহায়তা পাচ্ছে তাও এতে ব্যাহত হতে পারে।
২০১৮ সালে পাকিস্তানকে এফএটিএফ তাদের 'ধূসর' তালিকায় যোগ করে - যার অর্থ, অর্থপাচার ও জঙ্গী অর্থায়ন-বিরোধী পদক্ষেপের ক্ষেত্রে পাকিস্তান মানদণ্ড মেনে চলছে না।
এর পর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বহু সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে, নিষিদ্ধ গোষ্ঠী ব্যবহার করতো এমন অনেক বাড়িঘর সিল করে দিয়েছে।
তবে জামাতুদ্ দাওয়া বা জয়েশ-ই-মোহাম্মদের মত বড় গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোন কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয় নি।
হাফিজ সাইদকেও ৯/১১-র পর থেকে অনেকবার গ্রেফতার ও গৃহবন্দী করা হয়েছে কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কখনো অভিযুক্ত করা হয়নি। তিনি বরাবরই কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে গেছেন।
তবে এফএটিএফের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত হাফিজ সাইদকে গ্রেফতার ও বিচারের পর সাজা দেয়া হয়।
জাকিউর রেহমান লাকভিকেও এমন এক সময় গ্রেফতার করা হলো - যখন আর দু'মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এফএটিএফে'র পরবর্তী পাকিস্তান-বিষয়ক বৈঠক হবার কথা রয়েছে।