For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

এভারেস্টে যে চারটি কারণে এতো আরোহীর মৃত্যু

গত দুই দশকের হিসেবে দেখা যায় হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করতে গিয়ে প্রতি বছর গড়ে ছ'জন আরোহী মারা যায়।

  • By Bbc Bengali

আরোহীরা এভারেস্টে আরোহণ করছেন।
Reuters
আরোহীরা এভারেস্টে আরোহণ করছেন।

গত দুই দশকের হিসেবে দেখা যায় হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করতে গিয়ে প্রতি বছর গড়ে ছ'জন আরোহী মারা যায়।

কিন্তু এবছর, শুধু এই বসন্ত মওসুমে, ইতোমধ্যেই এভারেস্টে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, কিম্বা নিখোঁজ হয়ে গেছেন।

এছাড়াও এবার রেকর্ড সংখ্যক আরোহীকে এভারেস্টে উঠার অনুমতি দিয়েছে নেপাল সরকার। তাদের সংখ্যা ৩৮১।

তার অর্থ এই মওসুমে প্রায় ৬০০ মানুষ এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করবে। কারণ আরোহীদের সাথে গাইড ছাড়া আরো কিছু কর্মকর্তাও রয়েছেন।

এসব মৃত্যুর জন্যে এভারেস্টে আরোহীদের ভিড় লেগে যাওয়াকে দায়ী করা হলেও বিবিসির পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক নাভীন সিং খাদকা আরো চারটি কারণের কথা উল্লেখ করছেন:

১. খারাপ আবহাওয়া

আরোহীদের অনেকেই মে মাসের শুরু থেকে এভারেস্টের বেইস ক্যাম্পে জড়ো হতে শুরু করে। এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবের কারণেও কর্তৃপক্ষের মধ্যে এভারেস্টে আরোহণের বিষয়ে কিছু শঙ্কা ছিল।

ঘূর্ণিঝড়ের পরের কয়েকদিন নেপালের হিমালয়ে আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। ফলে নেপাল সরকারকে অন্তত দু'দিনের জন্যে এভারেস্টে আরোহণের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিতে হয়।

ঝড়ো বাতাসে কমপক্ষে ২০টি তাবু উড়ে যায়। এছাড়াও খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ার পর বেশ কয়েকজন আরোহী, যারা ইতোমধ্যেই অনেক উপরের দিকে উঠে গিয়েছিলেন, তারা বেইস ক্যাম্পে নেমে আসেন।

এই খারাপ আবহাওয়ার কারণে আরোহীরা যেসব দড়ি ধরে উপরের দিকে উঠেন সেগুলো স্থাপন করতেও দেরি হয়ে হয়ে যায়।

ব্রিটিশ আরোহী রবিন হেইনেস ফিশার, নিহতদের একজন।
PA
ব্রিটিশ আরোহী রবিন হেইনেস ফিশার, নিহতদের একজন।

কিন্তু এর মধ্যে বেইস ক্যাম্পে আরোহীদের ভিড় বাড়তে থাকে।

নেপাল ও চীনের সীমান্তের মাঝখানে এই এভারেস্ট। চীনা দিক থেকেও এই পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করা যায়। চীন সরকারের পক্ষ থেকে এবার খুব কম সংখ্যক আরোহীকে পর্বতারোহণের অনুমতি দেওয়া হয়।

মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দড়ি বসানোর কাজ শেষ হয়। তার পর আরোহণের উপযোগী আবহাওয়া ছিল ১৯ এবং ২০শে মে।

কিন্তু পর্বতারোহীদের খুব কম সংখ্যক দলই সেসময় উপরে উঠার সিদ্ধান্ত নেয়। বেশিরভাগ আরোহীই ২২ থেকে ২৪শে মে পর্যন্ত দিনগুলোকে বেছে নেয় আরোহণের জন্যে। এই সময়েও আবহাওয়া ভাল থাকার পূর্বাভাস ছিল।

২. ভিড় সামলানোর অব্যবস্থাপনা

এবারের এতো প্রাণহানির জন্যে পর্বতারোহণ বিশেষজ্ঞরা অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, আরোহীরা যখন পরের সময়টিকে বেছে নেয় তখনই সেখানে ঝামেলা তৈরি হয়।

দিনটি ছিল ২৩শে মে। এই একদিনেই সর্বোচ্চ সংখ্যক আরোহী- ২৫০ জনেরও বেশি- সেদিন চূড়ার অভিমুখে যাত্রা করতে শুরু করে।

তখন এতোই ভিড় লেগে যায় যে উঠা ও নামার পথে আরোহীদেরকে চূড়ার নিচের ক্যাম্পে কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়।

তাদের অনেকেই ততোক্ষণে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং তাদের সিলিন্ডারের অক্সিজেনও ফুরিয়ে যেতে শুরু করে।

নেপালের পর্বতারোহণ আইন অনুসারে অভিযানকারী দলগুলোর সাথে লিয়াঁজো অফিসারকেও থাকতে হয়। এজন্যে এবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ৫৯ জনকে। কিন্তু তাদের মাত্র পাঁচজন শেষ পর্যন্ত আরোহণের চূড়ান্ত পর্বে আরোহীদের সাথে ছিলেন।

শুধু তাই নয়, তাদের কয়েকজন বেইস ক্যাম্পে অবস্থানের পর বাড়িতেও ফিরে গেছেন।

এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণে আরোহীদের ভিড়।
AFP/ Project Possible
এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণে আরোহীদের ভিড়।

আরো পড়তে পারেন:

এভারেস্টে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে যা বললো নেপাল

হিমালয়ের চূড়ায় পর্বতারোহীর এত ভিড় যে কারণে

পবর্তারোহীদের জন্য কতটা প্রাণঘাতী মাউন্ট এভারেস্ট?

এই লিয়াঁজো অফিসাররা হলেন সরকারি কর্মকর্তা যাদের পর্বতারোহণের কোন অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এভারেস্টের উচ্চতায় অবস্থান করতে তাদের অসুবিধা হচ্ছিল।

এভারেস্ট বেইস ক্যাম্পের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, এই লিয়াঁজো অফিসাররা যদি আরোহীদের সাথে থাকতেন, ভিড় সামাল দিতেন, তাহলে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

"আমরা আরোহীদেরকে বিভিন্ন সময়ে আরোহণের জন্যে ভাগ করে দিতে পারতাম। ফলে প্রথম দফায়, ১৯ ও ২০শে মে, আরো বেশি আরোহীকে আরোহণ করতে দেখা যেত। এবং দ্বিতীয় দফার উপরেও এতো চাপ তৈরি হতো না," বলেন তিনি।

তারা বলছেন, এই লিয়াঁজো অফিসারদের উপস্থিত না থাকাও নেপালের পর্বতারোহণ কর্তৃপক্ষের জন্যে গত কয়েক বছর ধরেই বড় রকমের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পর্বতারোহণ শাখার প্রধান মীরা আচার্য বলেছেন, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের ৮০ শতাংশ এবার বেইস ক্যাম্পে গিয়েছিলেন।

"আমি স্বীকার করছি তাদের বেশিরভাগই খুব বেশি সময় সেখানে ছিলেন না। এবিষয়ে আমরা অবহিত আছি এবং এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।"

"আমরা তো মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোতেও আরোহীদের মৃত্যুর কথা শুনি। শুধু এভারেস্টের কথা আলাদা করে বলা হচ্ছে কেন?" তার প্রশ্ন।

৩. অনভিজ্ঞ আরোহী

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সাথে অনভিজ্ঞ আরোহীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।

এবার কোন কোন দলের সাথে ছিল একজন মাত্র শেরপা গাইড।

"যখন কোন আরোহী এরকম বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন তখন একজন শেরপা তাকে খুব বেশি সাহায্য করতে পারবে না। কারণ নিজেকেও তো বাঁচতে হবে।"

মৃত্যুর জন্যে ভিড় দায়ী- এই বক্তব্য অস্বীকার করছে নেপাল সরকার।
Reuters
মৃত্যুর জন্যে ভিড় দায়ী- এই বক্তব্য অস্বীকার করছে নেপাল সরকার।

অনেক পর্বতারোহী যারা সফলভাবে এভারেস্ট থেকে নেমে এসেছেন তারা বলছেন, অক্সিজেনের অভাবে অনেক আরোহীর কষ্ট হচ্ছিল। লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করার জন্য তাদের অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছিল।

"এরা নতুন আরোহী। তারা খুব দ্রুত উপরে উঠেই নেমে যেতে চায়। অন্যান্য শিখরে উঠার সাথে যে এভারেস্টে আরোহণের একটা তফাৎ আছে সেটা তারা জানে না," বলেন অ্যালান আর্নেট, যিনি একজন অভিজ্ঞ আরোহী।

অভিজ্ঞ আরোহীরা বলছেন, আরোহণের ব্যাপারে এখন কিছু শর্ত আরোপ করার সময় এসেছে। যেমন যাদের ৬,০০০ মিটার উপরে উঠার অভিজ্ঞতা আছে শুধু তাদেরকেই এভারেস্টে আরোহণের অনুমতি দিতে হবে।

৪. অপারেটরদের প্রতিযোগিতা

এভারেস্টে আরোহণের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন কিছু অপারেটরও। তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা।

নতুন অপারেটররা আরোহীদের কাছ থেকে কম অর্থ নিচ্ছেন। এই প্রতিযোগিতার কারণে পুরনো অনেক প্রতিষ্ঠানও তাদের ফি কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।

ন্যাশনাল মাউন্টেন গাইডস এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট টিশেরিং পাণ্ডে ভোট বলেছেন, "এর ফলে এসব সংস্থা অনভিজ্ঞ লোকজনকে নিয়োগ দিচ্ছে গাইড হিসেবে। ফলে খারাপ পরিস্থিতিতে তারা আসলে তাদের মক্কেলকে খুব একটা সহযোগিতা করতে পারে না।"

"প্রতিযোগিতাটা গুণগত মান বাড়ানোর জন্যে নয়, প্রতিযোগিতা হচ্ছে সংখ্যায়," বলেন তিনি।

অপারেটররাও এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তারা বলছেন, তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়ানো দরকার।

অপারেটর সমিতির প্রধান ডাম্বার পারাজুলি বলেছেন, "আরোহীসহ আমাদের আরো দর্শনার্থী প্রয়োজন। আমরা যেভাবে ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকি ঠিক সেভাবেই এই আরোহীদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটাই আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।"

আরো পড়তে পারেন:

'নুসরাত হত্যা ছিল মিলিটারি প্লানের মত নিখুঁত'

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: দলে তুরুপের তাস হবেন যারা

পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি প্যাডের বিকল্প কী আছে বাজারে?

ব্যর্থতা কাটিয়ে জীবনে সফল হওয়ার আট মূলমন্ত্র

English summary
Why mountaineers dying at Everest
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X