চার বছরে তৃতীয়বারের জন্য নেপাল সফরে মোদী, জানেন কেন এত গুরুত্ব এই সফরের
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিবেশী দেশ নেপালে তৃতীয়বারের মতো সফর করছেন। নেপালে নতুন সরকার গঠনের পর থেকে এটি প্রথম উচ্চ পর্যায়ের ভারতীয় দলের সফর।
নেপাল সফর শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী। এনিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত চার বছরে তিন বার এলেন এই প্রতিবেশী দেশে। এর থেকেই নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক যে ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট হয়। তবে সম্প্রতি নেপালে একটি শক্তিশালী বামপন্থী সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের পর এই প্রথম মোদী এদেশে এলেন। নেপালের নয়া সংবিধান গঠনকে কেন্দ্র করে দুদেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কে মাঝখানে ছেদ পড়েছিল। মোদীর এই সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ নেপালের আরেক প্রতিবেশী চিন এই দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর নেপালের নতুন বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী ওলিও এর চিনের সাহায্য নিতে তাদের অসুবিধা নেই বলে জানিয়েছিলেন। তাই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই নেপালের সঙ্গে সম্পর্কটা ভাল করাটা ভআরতের প্রয়োজন।
অপরদিকে নেপালের দরকার নয়া সংবিধানে ভারতবর্ষের সমর্থন। প্রায় আড়াই বছর আগে তা গঠন করা হয়েছিল। সমবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ছিলেন ওলি। ২০১৫ সালে সংবিধান রচনার পর অবশ্য ভারত সেই নয়া সংবিধানকে সমর্থন দেয়নি। বরং তাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে নেপালকে বানিজ্যক দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ভারত। সম্পর্ক খারাপ হয় দু'দেশের।
এদিন জনকপুর দিয়ে সফর শুরু করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। নেপালী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি রামায়ণ সার্কিট-এর সূচনা করেন। রামায়ণে বর্ণিত ভারত ও নেপালের মোট ১৫ টি জায়গা নিয়ে একটি ভ্রমণ প্যাকেজ গডা় হচ্ছে। তারই পোশাকি নাম রামায়ণ সার্কিট। এরমধ্যে আছে, অযোধ্য, নন্দীগ্রাম, শৃঙ্গারপুর, চিত্রকুট ইত্যাদি। এই দিক গুলির পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি কারণে, মোদীর এই নেপাল সফর দুদেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত,
ভারতের
উদ্যোগে
পুর্ব
নেপালের
শঙ্কুওয়াসাবা
জেলায়
৯০০
মেগা
ওয়াট
ক্ষমতা
সম্পন্ন
অরুন
৩
জলবিদ্যুত
কেন্দ্র
গড়া
হচ্ছে।
প্রকল্পটির
নির্মাণ
কাজ
ইতিমধ্যে
শুরু
হয়ে
গেলেও
সফরে
মোদী
ও
ওলি
যৌথভাবে
এর
ভিত্তি
প্রস্তর
স্থাপন
করবেন।
৬০০০
কোটি
টাকা
ব্যয়ে
এই
প্রকল্পটি
আগামী
পাঁচ
বছরের
মধ্যেই
কাজ
করতে
শুরু
করবে
বলে
মনে
করা
হচ্ছে।
এটি
চালু
হয়ে
গেলে
নেপালকে
আর
বিদ্যুত
কিনতে
হবে
না,
তাতে
কয়েক
বিলিয়ন
ডলার
সাশ্রয়
হবে
সেদেশের।
ভারতও
সে
বিদ্যুতের
ভাগ
পাবে,
কিন্তু
তারচেয়েও
বড়
কথা
নেপালের
অর্থনীতিতে
জাঁকিয়ে
বসবে
ভারত।
মোদীর সফরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও পরিকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ গতি পেবা বলে মনে করা হচ্ছে। বিহারের জন্য ত্বরান্বিত করবে - রক্সাল থেকে কাঠমান্ডু রেল যোগাযোগের এই প্রকল্পটির এই বছরের এপ্রিলে ওলির ভারত সফরের সময় ঘোষণা করা হয়েছিল। এটি হলে ভারত ও নেপাল রেল ব্যবস্থায় সংযুক্ত হবে। জনপরিবহন তো বটেই, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও এর বিশেষ ভূমিকা থাকবে। তবে এটি আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কারণ নেপালকে একই ধরণের একটি রেল প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে চিন। তিব্বতের লাসাকে কাঠমান্ডুর সঙ্গে যুক্ত করার কথা এই প্রকল্পেয সেক্ষেত্রে নেপালের ভারত-নির্ভরতা কমে চিনা প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নৌপথে দুদেশের যোগাযোগ গড়ার বিষয়েও কথা বলবেন দুদেশের প্রধানমন্ত্রীরা। ইতিমধ্যে বিহারের কালুঘাটকে ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নেপালের চারিদিকে স্থল। জলপথে যোগাযোগের উপায় না থাকায় পন্য পরিবহনে বাড়তি খরচ বইতে হয়। জলপথে ভারতের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ গড়ে উঠলে ক্রমে জলপথে পন্য পরিবহনের দিকে এগোতে পারবে দেশটি।
প্রতিবেশী দেশটিকে উন্নয়নে সহায়তা দেওয়াই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফরের প্রধআন অ্যাজেন্ডা। এর মধ্যে কৃষিক্ষেত্র, বিদ্যুৎ সহযোগিতার মতো বিষয়গুলি আছে। ভারত জৈব চাষ, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মতো বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্র গড়ার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, বন সাফাইয়ের মতো বিষয়ে নেপালকে যাতে তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করে তা নিয়েও কথা হবে।
কথা হতে পারে, পঞ্চেশ্বরের বহু-উদ্দেশ্য বাঁধ প্রকল্প নিয়েও। সূত্রের খবর প্রকল্পের বিস্তারিত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ হয়েছে। ২২ বছর আগে এই প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়েছিল। ৪,৮০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ, এবং দিল্লির ক্রমবর্ধমান জল চাহিদা মেটাতে শারদা ও যমুনা নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ করবে এই বাঁধ।