বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর কেন পরিবর্তন করছে গ্রাহকরা
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নাম্বার পরিবর্তন না করে মোবাইল অপারেটর পরিবর্তনের সুযোগ চালু হওয়ার পর প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক তাদের অপারেটর পরিবর্তনের আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের সুবিধা দেয়ার জন্য নাম্বার নাম্বার পরিবর্তন না করে মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করার সুযোগ চালু হয়েছে গত পহেলা অক্টোবর থেকে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাহক অপারেটর পরিবর্তনের আবেদন করেছেন।
আর আবেদনকারীদের মধ্যে ২৬ হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যেই অপারেটর পরিবর্তন করে তাদের সিম কার্যকর করেছেন।
আর এই হিসেবের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক গ্রামীণ ফোন ছেড়ে গেছে।
যে ২৬ হাজার গ্রাহক অপারেটর পরিবর্তন করেছেন তাদের মধ্যে সাড়ে এগার হাজারই জিপির গ্রাহক ছিলেন।
আর রবি থেকে প্রায় ছয় হাজার আর বাংলালিংক থেকে প্রায় নয় হাজার অন্য অপারেটরে চলে গেছেন।
আপনার মোবাইল কি গোয়েন্দাগিরি করছে?
একই নম্বর রেখে কীভাবে বদলাবেন অপারেটর
মোবাইল ফোন আমাদের শরীরের কতটা ক্ষতির কারণ?
এসব গ্রাহকের মধ্যেই একজন হলেন ব্যাংক কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।
২০০৩ সালে তিনি গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।
কিন্তু পনের বছর একনাগাড়ে একটি অপারেটরের সিম ব্যবহারের পর তিনি অপারেটর পরিবর্তন করলেন কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই গ্রামীণ ফোনের সেবায় তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না।
"কিছুদিন ধরে এতো কল ড্রপ হচ্ছিলো যে আমি রীতিমত বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। জরুরী কথা বলছি এমন সময় দেখা গেলো কথা শুনছিনা। কেটে যাচ্ছে লাইন। পরিবর্তনের এটিই বড় কারণ"।
মিস্টার ইসলাম বলেন, তার কর্মস্থল থেকে একটি কর্পোরেট সংযোগ তাকে দেয়া হয়েছে সে কারণে তিনি দ্রুত তার ব্যক্তিগত ফোনের অপারেটর বদল করে নিয়েছেন।
আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান লাভলু প্রায় নয়বছর ছিলেন বাংলালিংকে।
সম্প্রতি তিনি অপারেটর পরিবর্তন করে অন্য অপারেটর বেছে নিয়েছেন।
অপারেটর পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে মিস্টার রহমান বলেন, "খুব নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভুগছিলাম। কল ড্রপ হতো অনেক বেশি। আর ইন্টারনেটের গতি ভালো ছিলোনা। এসব কারণে যখনি সুযোগ পেলাম তখনি অপারেটর পরিবর্তন করে ফেললাম"।
নতুন অপারেটরের সেবা নিয়ে আপাতত তিনি সন্তুষ্ট বলেই জানান তিনি।
অপারেটর পরিবর্তন নিয়ে আরও গ্রাহকদের মন্তব্য
বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় অপারেটর পরিবর্তনের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন অনেক সাধারণ গ্রাহক। তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে যে অপারেটরের সিম ব্যবহার করছেন তাদের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে অপারেটর পরিবর্তন করবেন বলে জানিয়েছেন।
মোঃ সোহেব লস্কর লিখেছেন, "আমি জিপি আজ দশ বছর ধরে ব্যবহার করতেছি। ..... আমি এখন বাংলালিংকে যাবো শুনেছি তাদের সার্ভিস অনেক ভালো"।
হারুণ উর রশীদ লিখেছেন, "প্রথমেই গ্রাহকের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য বিটিআরসি'কে ধন্যবাদ। অবশ্যই সুবিধা হেরফের করার জন্য অপারেটর পরিবর্তন। বিশেষ করে প্যাকেজের মেয়াদ কম গ্রামীণ ফোনের। এইটা একটা গ্রামীণ ফোন ছাড়ার অন্যতম কারণ"।
রাইসুল ইসলাম লিখেছেন, "আমি অচিরেই জিপি থেকে অন্য অপারেটরে চলে যাবো। জিপির কল রেইট, ইন্টারনেট রেইট অন্য অপারেটরদের তুলনায় বেশি"।
ইশা তালুকদার বলেন, "জিপি সিম এর মত ফালতু সিম দুনিয়ায় নাই।আমাদের বাড়ি থেকে ৫কিমি মধ্যে জিপি টাওয়ার।তারপরও বাসার ভিতর নেট পাই না।ওদের কল রেট সবথেকে বেশি।
গ্রামীণ ফোনের বক্তব্য
অপারেটর পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে। সে কারণেই অপারেটর পরিবর্তনকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাহকদের গ্রামীণ ফোন ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিবিসি বাংলা গ্রামীণ ফোনের বক্তব্য নিয়েছে।
গ্রামীণ ফোনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, "মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমরা গ্রাহকের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এমএনপি সেবা চালু হবার পরে কিছু গ্রাহককে আমাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত। আমরা মনে করি এমএনপির মাধ্যমে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি"।
দেশের সবচেয়ে বেশি গ্রাহক সমৃদ্ধ এই অপারেটর বলছে, "রেডিও প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবায় কল ড্রপ একটি স্বাভাবিক উপসর্গ। তবে এর একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে । গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্কে কল ড্রপের পরিমাণ সবমসময়ই বিটিআরসি নির্ধারিত মানদন্ডের অনেক নীচে রয়েছে। এমনকি বিটিআরসির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে গ্রাহক সংখ্যার বিচারে গ্রামীণ ফোনের কল ড়্রপের পরিমাণ গত এক বছরে অন্যান্য অপারেটর এর তুলনায় অনেক কমেছে"।