বাংলাদেশে দুর্গম এলাকায় ভ্রমণে গিয়ে বিপদে পড়লে উদ্ধার করবে কে?
থাইল্যান্ডে গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের উদ্ধারে এখন ব্যাপক তৎপরতা চলছে। বাংলাদেশে এমন দুর্গম জায়গা না থাকলেও ভ্রমণপ্রিয় মানুষ পাহাড়ে বা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন।
বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা, কক্সবাজার, সিলেট ও সুন্দরবন ছাড়াও সীতাকুণ্ডসহ কয়েকটি এলাকার সমুদ্র সৈকতেও ভিড় করে অনেক মানুষ।
কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা কতটা আছে?
সীতাকুণ্ড সৈকতেই শুক্রবার গোসলে নেমে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিন যুবক এবং একদিন পর তাদের দুজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে গত মাসেও সেখানে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছিলো।
দেশের বিভিন্ন দুর্গম স্থানে পাহাড়, ঝর্ণা, জলপ্রপাতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তৌফিক মাহমুদের। ট্র্যাকিং করেই বান্দরবনের দুর্গম অমিয়খুম, নাফাখুমের মতো এলাকায় গেছেন।
এসব দুর্গম এলাকায় যারা ভ্রমণে যান তারা বিপদে পড়লে বা কোন দুর্ঘটনা হলে উদ্ধার বা সহায়তার কোন ব্যবস্থা কখনো দেখা গেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "গাইডের সহায়তায় কয়েকদিন ধরে হেঁটে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এসব এলাকায় গেছি আমরা। কোন দুর্ঘটনা বিপদ হলে এসব এলাকায় একমাত্র ভরসা গাইড। কাছাকাছি আদিবাসী পাড়া থাকলেও তাদের সহায়তাও পাওয়া যায়"।
'পর্যটকদের অসাবধানতা'
তবে দুর্গম অনেক এলাকাতেই যাওয়ার আগে বিজিবি বা আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হয়। ফলে তাদের হয়তো ধারণা থাকে যে কারা কোন দিকে গেছে।
"কিন্তু বিপদে পড়লে বিজিবি বা আর্মির সহায়তা পেতে হলে তাদের ক্যাম্প পর্যন্ত কাউকে না কাউকে গিয়ে খবর তো দিতে হবে। তথ্য না পেলে তারাই বা কীভাবে উদ্ধার করতে আসবে"।
মি: মাহমুদ অবশ্য বলেন কক্সবাজার ও সীতাকুণ্ডসহ কয়েকটি জায়গায় দুর্ঘটনার জন্য পর্যটকদের অসাবধানতাও দায়ী বলে মনে করেন তিনি।
"অনেকে জোয়ার ভাটার সময় না বুঝে পানিতে নেমে চোরাবালিতে আটকে পড়ে। কেউ কেউ পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি নেন। এমনকি নেশাগ্রস্ত হয়েও অনেকে পানিতে নামেন"।
তবে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকরা বিপদে পড়লে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা আছে বলে জানালেন টুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা মো: আলতাফ হোসেন।
এখন সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছেন এই কর্মকর্তা। এই অঞ্চলেই এখন বিছানাকান্দি, রাতারগুলো ও লালাখাল অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভ্রমণ করছে এসব এলাকায়।
বেড়ানোর নতুন জায়গাগুলো কতটা নিরাপদ?
পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ভিড় আছে, নেই সুযোগ-সুবিধা
পর্যটনের এক সার্কিটে পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ
মি: হোসেন বলছেন, কেউ কোন দুর্ঘটনায় পড়ার খবর পেলে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার কাজ চালান তারা।
"নৌকা ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে আমার লোক আছে। তারাও সতর্ক থাকে পর্যটকের নৌকায় নেয়ার সময়।তাই সাধারণত এ অঞ্চলে দুর্ঘটনা কম ঘটে"।
তবে অনেক সময় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তরুণদের মধ্যে নৌকা চালক বা স্থানীয়দের পরামর্শ না শুনে ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতাও দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি অবশ্য বলেন, এখন নজরদারি অনেক বেড়েছে, আবার পর্যটনের সাথে স্থানীয় জনসাধারণের জীবনজীবীকার বিষয় জড়িয়ে গেছে, তাই তারাও সতর্ক হয়ে উঠেছে নিরাপত্তার বিষয়ে।
"নৌকা চালকরাই এখন পর্যটকদের নিরাপদে নেয়া ও আনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। কোন ঘটনা ঘটলে তাই আমরা দ্রুত খবর পেয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি"।
মেয়েদের দল নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্র্যাকিং কিংবা বেড়াতে যান সাকিয়া হক।
নিজের একটি অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, "রাঙ্গামাটিতে চিম্বুকে পাহাড়ের দিকে গিয়েছিলাম এক মারমা বন্ধুর বাড়ি যাবো বলে। সন্ধ্যা হওয়ায় পথে একটি মারমা বাসায় ঢোকার পর পুলিশের ফোন পেলাম। তারা বললো আপনারা ওখানেই থাকেন পুলিশ এসে নিয়ে যাবে আপনাদের। পরে অবশ্য তাদের বুঝিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় আরও কয়েকটি পাহাড় অতিক্রম করে আমরা সেই বন্ধুর বাসায় পৌঁছেছিলাম"।
'তাৎক্ষণিকভাবে গাইডই একমাত্র ভরসা'
তবে বান্দরবন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এলাকায় বা দুর্গম এলাকায় যেতে হলে পর্যটকদের এখন তাদের নাম পরিচয় ও গাইডের নাম পরিচয় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প বা আর্মি ক্যাম্পে দিতে হয়।
একই সাথে তারা কোন পথে কোথায় যেতে চান সেটি জানাতে হয়।
তৌফিক মাহমুদ বলছেন, চলতি পথে কোন বিপদে এখন গাইডই আসলে একমাত্র উদ্ধারকারী বা সহায়তাকারী। তাই পর্যটকদেরও উচিত গাইডের পরামর্শ মতো চলাচল করা ও কোন ঝুঁকি না নেয়া।
"কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা কোথাও নেই"।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন:
থাই গুহায় উদ্ধার অভিযান শুরু: ঝুঁকি কতোটা?
থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের উদ্ধার অভিযান
থাইল্যান্ডের গুহা থেকে বাবা-মায়ের কাছে চিঠি