বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক, মৃত বেড়ে ৩৩৮৬! কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
করোনা ভাইরাস নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। এই আবহে বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাঢনম ঘেরিবাইসাস।
করোনা ভাইরাস নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। এই আবহে বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাঢনম ঘেরিবাইসাস। সেখানে তিনি বিশ্বের সব দেশের সরকার ও সংবাদমাধ্যমের প্রতি বিশেষ আহ্বান ও আবেদন রাখেন। করোনা ভাইরাসকে মারাত্মক বললেও তিনি দাবি করেন, এই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়ালে আমরা তা থেকে রক্ষা পাব।
গুজব এবং ভুল তথ্য থেকে দূরে থাকতে হবে
তিনি বলেন, 'করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য যেটা সব থেকে বেশি প্রয়োজন তা হল গুজব এবং ভুল তথ্য রোধ করা। আমরা সংবাদমাধ্যমের কাছে এই বিষয়ে সাহায্য চাই। আমরা সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমেই মানুষকে এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার উপায় বাতলে দিতে চাই। তারা যে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং কীভাবে নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষা দিতে পারে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে সংবাদমাধ্যমই।'
চিনে নতুন করে ১৪৩ জন আক্রান্ত
গত ২৪ ঘণ্টার পরিস্থিতির বিষয়ে বলতে গিয়ে টেড্রোস বলেন, 'এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৯৫ হাজার ২৬৫ জন এই ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় চিনে ১৪৩ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চিন ছাড়া ৩৩টি দেশে মোট ২০৫৫ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর মিলেছে। তবে চিন ছাড়া বাকি বিশ্বের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তিনটি মাত্র দেশ থেকে।'
১১৫টি দেশ এখনও করোনা ভাইরাস মুক্ত
টেড্রোস আরও বলেন, 'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত পরিস্থিতি ক্রমে শুধরাচ্ছে। এটা আশার খবর। নতুন করে আক্রান্তদের সংখ্যা কমেছে সেই দেশে। তবে অন্যান্য দেশে আবার হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর মিলছে। তবে এখনও পর্যন্ত ১১৫টি দেশ কোনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিষয়ক খবর আমাদের জানায়নি।'
ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে
অনেক দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, 'এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি আমরা ২১টি দেশের থেকে মাত্র একটি করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। ৫টি এমন দেশ রয়েছে যারা গত ১৪ দিনে কোনও নতুন আক্রান্তের খবর জানায়নি। চিন এবং এসকল দেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আমরা নিশ্চিত যে এই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব।'
করোনা আতঙ্ক ঠেকাতে হু-এর উপদেশ
এই আতঙ্ক ঠেকাতে তিনি বলেন, 'এই মহামারীটিকে অনায়াসে ঠেকানো যেতে পারে, তবে কেবলমাত্র সম্মিলিত, সমন্বিত ভাবে আমরা এটিকে রুখতে পারি। সংশ্লিষ্ট সরকারের মদতেই এসব করা সম্ভব। যদিও এখনও পর্যন্ত গুটিকয়েক দেশেই এই প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে তবে নতুন দেশ থেকে আরও আক্রান্তের খবর আসায় আমরা বেশ চিন্তিত।'
করোনা ভাইরাস প্রতিটি দেশের জন্য হুমকি
সবার জন্য এই ভাইরাস হুমকি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'এই মহামারীটি প্রতিটি দেশের ধনী ও দরিদ্রের জন্য সমান ভাবে হুমকি। আমরা উদ্বিগ্ন যে কিছু দেশ আছে যারা এই ভাইরাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে না, বা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা কিছুই করতে পারবে না। রাজনৈতিক ভাবে সরকাররা যেভাবে অতি তৎপরতা দেখায়, সেরকম ভাবে তৎপরতা এই ক্ষেত্রে দেখাচ্ছে না।'
সরকারগুলিকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান
বিভিন্ন দেশের সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'সরকারের প্রতিটি অংশকে সমন্বিত করে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উপর দায়িত্ব দিলে হবে না। সুরক্ষা, কূটনীতি, অর্থ, বাণিজ্য, পরিবহন, বাণিজ্য, তথ্য এই সব কিছুর মাধ্যমেই সরকারকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আপনার জনসাধারণকে শিক্ষিত করুন, যাতে লোকেরা জানতে পারে যে লক্ষণগুলি কী এবং কীভাবে নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষা দিতে হয়। হাসপাতালগুলিকে তৈরি রাখুন।'
একসঙ্গে কাজ করার আবেদন
শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন, 'বর্তমানে করোনা ভাইরাস তীব্র হুমকি। তবে সবাই মিলে কসঙ্গে কাজ করলে এই হুমকি থেকে আমরা রক্ষা পাব। শেষ পর্যন্ত, এই ভাইরাসটি কতটা মারাত্মক হবে তা কেবল ভাইরাসের উপরই নির্ভর করে না, বরং তা নির্ভর করবে কীভাবে আমরা এর প্রতিক্রিয়াকে আটকাব। এটি একটি মারাত্মক রোগ। তবে এটি বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে মারাত্মক নয়, তবে এর জেরে মানুষ মরতে পারে।'