সহিংসতার দোষারোপ মাথায় নিয়ে এখন কী করবে হেফাজত
বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
এসব সমাবেশে তারা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় সহিংস বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তবে সে সময় হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন অফিস এবং রেলষ্টেশন বা থানায়, তার জন্য সরকার তাদেরকেই দায়ী করছে।
এই পরিস্থিতিতে এখন হেফাজতের কৌশল কী হচ্ছে? আর সরকারই বা তাদের কীভাবে মোকাবেলা করতে পারে, এসব প্রশ্নে এখন নানা আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন:
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৃতীয় দিনেও সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে
- মোদীবিরোধী বিক্ষোভে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫ জনের মৃত্যু
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে শনিবার আরও ৫ জনের মৃত্যু
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের ভেতরে চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বিক্ষোভ সমাবেশ করে জুম্মার নামাজের পর।
ঢাকার এই সমাবেশে মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য রাখেন।
তাদের অনেকের বক্তব্যে ছিল সরকার এবং গণমাধ্যমের কড়া সমালোচনা।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে চট্টগ্রামে হাটহাজারিতে সমাবেশে হেফাজতের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, তারা দেশ বা সরকার-বিরোধী নন। তারা তাদের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠন এবং পুলিশের হামলায় হতাহতের ঘটনাগুলোর বিচার চান।
গত ২৬শে মার্চ থেকে তিন দিন ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়। সে সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে, পুলিশের থানায় এবং রেলষ্টেশনে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে।
সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সহিংসতার জন্য হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করছে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বিবিসিকে বলেছেন, সহিংস ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে তাদের সংগঠনের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে তিনি মনে করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ খন্ডন করে তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরার কৌশল নিয়ে এগুচ্ছেন।
তবে শুক্রবারের সমাবেশের পর হেফাজতে ইসলাম নতুন করে কর্মসূচি দেয়নি। সংগঠনটির নেতারা আলোচনা করে পরে কর্মসূচি দেয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে, সহিংসতা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে মামুনুল হক বলেছেন, "কিছুটা ভুল প্রচার হচ্ছে। কিছুটা মিথ্যা বা অপপ্রচার হচ্ছে। এবং এভাবে হেফাজতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার একটা চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পিছনের ঘটনা বা ঘটনার সূত্রপাত-সেটা কীভাবে ভুলে যাব?"
মামুনুল হক অভিযোগ করেছেন, "ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকার দলের একজন এমপির নেতৃত্বে মাদ্রাসার ওপর হামলা হয়েছে।"
তিনি বলেছেন, "সেখানে (ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়) এই ঘটনার পিছনে আমাদের মাদ্রাসার বা হেফাজতের প্রত্যক্ষ কর্মী যতটা জড়িত, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে এখানে সাধারণ জনগণ, এলাকার মানুষ। এই বিষয়টার দায় কোনভাবেই হেফাজতের ওপর দেয়া যায় না," তিনি বলেন।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রথমে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করছে।
ইসলাম নিয়ে একজন লেখক শরীফ মোহাম্মদ মনে করেন, এই ঘটনারগুলোর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব হেফাজতের ওপর পড়তে পারে। তবে পরিস্থিতিটা সরকারের জন্যই বেশি ক্ষতিকর হয়েছে।
এক সময় হেফাজতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের সখ্যতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক আলোচনা ছিল।
বেশ কিছুদিন ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েও নানা আলোচনা চলছিল।
এখন হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক এবং আইনগত দিক থেকে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা বলা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বিবিসিকে বলেছেন, আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে তারা কোন ছাড় দেবেন না।
"চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে তান্ডব বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। এটা আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই," বলেন মি: হানিফ।
এদিকে হেফাজতের একাধিক নেতা বলেছেন, সহিংস ঘটনার ব্যাপারে অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে। এসব মামলাকে কেন্দ্র করে তাদের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা থাকতে পারে। তারা এমন ধারণা করছেন।
বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর:
- করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন রেকর্ড
- লোকলজ্জার ভয়ে এয়ারপোর্টে শিশুকে রেখে লাপাত্তা সৌদি ফেরত নারী
- বাংলাদেশিদের ব্রিটেনে ঢোকা নিষিদ্ধ হচ্ছে