শেখ হাসিনা: যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা আর রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘে যা বললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
"আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেয়া হয়। এর প্রভাব একটি দেশে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সব মানুষের জীবন জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়," বলছিলেন তিনি।
এই ভাষণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেছেন তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর রাতে) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
'রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার সমস্যা'
জাতিসংঘে হাসিনা: রোহিঙ্গা সংকট কি জটিলতর হলো?
রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার প্রস্তাব কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে
প্রসঙ্গ: ইউক্রেন রাশিয়া
শেখ হাসিনা বলেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং জ্বালানি, খাদ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের মত অর্থনীতি মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে এ অবস্থা মোকাবেলায় তার সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
"বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।"
প্রসঙ্গ: রোহিঙ্গা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি।
"মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তু ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরও দুরূহ করে তুলেছে। আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে," শেখ হাসিনা বলছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। ওই বছর অগাস্টের শেষ দিকে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ১১ লক্ষের মত রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে রয়েছে।
এরপর থেকে প্রতি বছেই জাতিসংঘে শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু।
শেখ হাসিনা এবারের ভাষনেও বলেন যে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়ত উপস্থিতি দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। মানবপাচার ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে। এ সঙ্কট প্রলম্বিত হতে থাকলে তা এই উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে ভাষণে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার পরিবেশ কি আছে রাখাইনে?
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যেসব চাপে পড়ছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা
সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে এসেছে নতুন নিয়ম, লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা