আওয়ামী লীগ: মুরাদ হাসান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কী করবে তার দল এবং সরকার
বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসান নারী বিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মন্তব্য করার কয়েকদিন পরও মি: হাসানের বিরুদ্ধে সরকার এবং আওয়ামী লীগ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে বলেছেন, সেই মন্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ফাঁস হওয়া একটি টেলিফোন আলাপের সাথে মি: হাসানের নাম যুক্ত হয়েছে -এই দু'টি ঘটনা আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
তারা জানিয়েছেন, প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে টেলিফোন আলাপের বিষয়ে যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।
তবে ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মন্তব্যগুলো প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত।
একইসাথে তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে তারা এনিয়ে আলোচনা করবেন।
চিত্রনায়িকাকে হুমকি
তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসান নারী বিদ্বেষী এবং বর্ণবাদী মন্তব্য করেন কয়েকদিন আগে গত পহেলা নভেম্বর।
একটি ইউটিউব ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই ফেসবুকে একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপ ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে একজন চিত্রনায়িকাকে অশোভন কথাবার্তা ও হুমকি দিতে শোনা গেছে এক ব্যক্তিকে।
ওই ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে তাকে মুরাদ হাসান বলে মনে হচ্ছে।
এ নিয়ে মি. হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ বিব্রত
সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে এমন দু'টি ঘটনা সরকার এবং আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বলে দলটির নেতাদের অনেকে বলেছেন।
তবে দলটিতে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোন আলোচনা হয়নি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ জানিয়েছেন, তাদের দলে যখন আলোচনা হবে, তখন মি: হাসানের বক্তব্য নেয়া হবে।
মি: হানিফ বলেছেন, প্রতিমন্ত্রী মি: হাসানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য প্রমাণ হলে তারা ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবেন।
"তার যে কথোপকথনের অডিও'র কথা শোনা যাচ্ছে, এটা সত্য প্রমাণ হলে তার একটা নৈতিক স্খলন হিসাবে বিবেচিত হবে," তিনি বলেন।
মি: হানিফ বলেন, তারা দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করবে।
''মি: হাসান মন্ত্রিসভায় আছেন। সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হবে," মি. হানিফ বলেন।
আরও পড়ুন:
- তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পদত্যাগ চায় বিএনপি
- নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিধান বাতিল হবে
- পাঁচ দশক পরও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কেন 'লাভ-হেট' সম্পর্ক
মাঠপর্যায়ে প্রশ্নের মুখোমুখি
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন ফোরামে এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে এনিয়ে আলোচনা রয়েছে।
দলের নেতাকর্মিদের অনেকে বলেছেন, তাদের মাঠপর্যায়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
দলটিতে একটা বড় অংশ কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে বলে মনে হয়েছে। তারা তাকিয়ে আছেন তাদের দল এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দিকে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী সাবেক এমপি অপু উকিল বলেছেন, ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপসহ ঘটনা দু'টি খতিয়ে দেখে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন তিনি বিশ্বাস করেন।
"টেলিফোনে কথোপকনের যে বিষয় এসেছে, সেটি তিনি (প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান) বলেছেন কীনা-সেটি আমাদের দল খতিয়ে দেখবে। তিনি যদি বলে থাকেন, আমার বিশ্বাস অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটি দেখবেন" বলেন অপু উকিল।
বিএনপি ক্ষুব্ধ
বিএনপি নেতার মেয়েকে নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখেও মোহাম্মদ মুরাদ হাসান গত রাতে বিবিসিকে বলেছেন, তিনি মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন না এবং তিনি কোন ভুল করেননি।
কিন্তু ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিমন্ত্রী মি: হাসানের পদত্যাগ দাবি করেন।
তবে আওয়ামী লীগ সেই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ককে সেভাবে গুরুত্ব দিতে চায়নি বলে দলটির অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে।
এরইমাঝে একটি টেলিফোন আলাপ বের হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী মি: হাসানকে নিয়ে সমালোচনা ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলেছেন, টেলিফোন আলাপের ঘটনার সত্যতা এখনও প্রমাণ না হলেও পর পর দু'টি ঘটনা অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
মন্তব্যগুলো প্রতিমন্ত্রীর 'ব্যক্তিগত'
সিনিয়র মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, তাদের দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।
"যে কোন মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি এমন কিছু কথা বলে, যেটা রাজনৈতিক বা সামাজিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হয়-তা কোনদিনই গ্রহণযোগ্য না" বলেন ড: রাজ্জাক।
তিনি আরও বলেন, "এরকম হলে সরকার বিব্রত হয়। যিনি বলেন, তিনিও মানুষের কাছে ছোট হয়ে যান।"
এদিকে ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মন্তব্যগুলো প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত।
একইসাথে তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে তারা এনিয়ে আলোচনা করবেন।
তবে কবে নাগাদ দলটির শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে- তার সুনির্দিষ্ট সময় বলতে পারছেন না দলের নেতারা।
এখন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ে কবে আলোচনা হবে এবং শেষপর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত আসে-সেদিকেই সবার দৃষ্টি।