নারী নির্যাতনের কারণ তাদের দুর্বল হিসাবে দেখা
সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা খাতুনের উপর হামলাকারী বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কিন্তু কেন বাংলাদেশে মাঝে মাঝেই নারীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিবিসি বাংলার জন্য বিশ্লেষণ করেছেন সেন্
বাংলাদেশে খাদিজা বেগম হত্যা চেষ্টার মামলায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর গত বছরের অক্টোবর মাসে সিলেটে কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগমকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র এবং ছাত্রলীগের স্থানীয় এক নেতা বদরুল আলম।
এই হামলার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এ নিয়ে সারাদেশে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিলো।
কিন্তু এটা বাংলাদেশে একেবারে নতুন কোন ঘটনা তো না। আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পুরুষকে শক্তিশালী আর নারীকে দুর্বল হিসাবে দেখা হয়। এটা স্বল্পশিক্ষিত থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত, সব শ্রেণির মধ্যেই দেখা যায়।
সমাজ ব্যবস্থা বা পরিবারের কারণে অনেকেই এমন মানসিকতায় বড় হয় যে, নারীরা দুর্বল, তাদের উপর অত্যাচার করা যায়। এমন অত্যাচার সমাজেও যেন গৃহীত হয়ে আসছে। যেহেতু আইনের শাসন শক্তিশালীভাবে প্রয়োগ হয় না, এ ধরণের অপরাধে দায়ীদের শাস্তি হয় না, তাই ধারাবাহিকভাবে এটি চলে আসছে।
প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে বেশিরভাগ সময় ভুক্তভোগীরা সুবিচার পান না। আবার অনেক সময় শাস্তি দেয়া হলেও, সেটা নামমাত্র, যেন টোকেন হিসাবে একটি শাস্তি দেয়া হয়। ফলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবেও তাদের মধ্যে এ ধরনের কাজ করতে ভয় হয় না।
আসলে মূল্যবোধের ক্ষেত্রে একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দূরত্ব রয়েছে। নারীদের প্রতি মূল্যবোধের অভাবের যে পরিবেশ থেকে সে বড় হয়, সেই কারণেই কিন্তু এ ধরণের নির্যাতনের ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।
একটি পরিবারে মেয়েদের সাথে কিরকম ব্যবহার করা হচ্ছে, আচার আচরণ সে পরিবার থেকেই শেখে। আবার আমাদের যে পাঠ্যপুস্তকগুলো রয়েছে, সেখানেও মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বা সামাজিক মূল্যবোধগুলো সেভাবে শেখানো হয় না।
কিছুদিন আগেই একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ নারী কোন না কোন সহিংসতার শিকার হয়। এদের ৭২ শতাংশই সেটি প্রকাশ করে না। অনেক সময় সেটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় না। হয়তো এসব বলার সেই সংস্কৃতি বা অভ্যাস নেই। তাই এটা অব্যাহতভাবে চলছে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দুর্বলতা বা মূল্যবোধের অভাবের কারণেই আসলে এ ধরণের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে পরিবার থেকে যে দুর্বলতা বা মূল্যবোধ ধারণ করে বড় হয়, সেটা সবসময়েই রয়ে যায়। এবং সেজন্যই একজন অত্যাচারী, ধনী বা গরীব, সমাজের যে কোনো স্তর থেকেই আসতে পারে।