ভাসমান নগরী ভেনিসের ঐতিহাসিক স্থান ভেসে যাচ্ছে বন্যায়
ইতালির সেরা পর্যটন নগরীগুলোর একটি ভেনিস প্রবল বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ভেনিসকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই ভেনিস শহর। শত শত সেতু দ্বীপগুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে।
পুরো শহর জুড়ে রয়েছে অনেকগুলো খাল, যেগুলো যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
ভেনিসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর বাড়িঘর, যেগুলো কাঠের খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফলে দেখে মনে হয় পুরো শহরটি পানিতে ভেসে আছে।
কিন্তু এখন শহরটির ৮০% এলাকা চলতি সপ্তাহে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মেয়র লুইগি ব্রুনারো সেখানে জরুরি অবস্থা আইন জারি করেছেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার জলে শহরের বিখ্যাত আকর্ষণগুলো এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্যায় এপর্যন্ত দু'ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখন হিসেব করা সম্ভব হয়নি।
তবে ইতালির সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সালভানো নাস্তাসি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, পরিস্থিতি "বেশ জটিল ও উদ্বেগজনক" এবং বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনার জন্য একটি সঙ্কটকালীন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সেন্ট মার্কস স্কয়ার
পর্যটকদের কাছে শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা এটি। একে বলা হয় 'ইউরোপের বৈঠকখানা'।
এটি মূলত একটি বিশাল চত্বর - যার চারপাশে রয়েছে নানা ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন - সেন্ট মার্কস ব্যাসিলিকা ক্যাথলিক গির্জা এবং ডোজের প্রাসাদ।
ভেনিস শহরটি যখন একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ছিল তখন এর শাসক, যাকে ডাকা হতো ডোজে নামে - তিনি এই প্রাসাদেই বসবাস করতেন।
কিন্তু শহরের সবচেয়ে নিচু এলাকার একটি এই চত্বর এক মিটার (৩.২ ফুট) জলে ডুবে গেছে।
গির্জা কর্তৃপক্ষের সংরক্ষিত নথি থেকে জানা যাচ্ছে, গত ১২০০ বছরের মধ্যে এবার নিয়ে গির্জাটি মোট ছয়বার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
গির্জা ভবন এবং ১২শ শতাব্দীর ক্রিপ্ট বা মাটির তলার কবরখানা থেকে জোয়ারের পানি সরিয়ে নেয়ার জন্য পাম্প ব্যবহার করতে হয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে বন্যার জলে গির্জার থামগুলোর ক্ষতি হয়েছে।
লা ফেনিচে থিয়েটার
তিয়াত্রো লা ফেনিচে (ফিনিক্স পাখি) হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান অপেরা হাউসগুলোর অন্যতম।
১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে এই থিয়েটার ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
ভের্দি কিংবা রাসিনির মতো অপেরা জগতের সেরা ক'জন ব্যক্তিত্বের তৈরি অপেরা এখানে দেখানো হয়েছে। এটি তিন তিনবার আগুনে পুড়েছিল।
কিন্তু এই থিয়েটার ভবনটির ভেতরের বেশিরভাগ অংশ বন্যার জন্য থেকে রক্ষা পেলেও এর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, যেখানে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং অগ্নি-নির্বাপন যন্ত্র থাকে - সেটি জলে ডুবে গিয়েছে।
গেরিত্তি প্রাসাদ
ভেনিসের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল হচ্ছে গেরিত্তি প্রাসাদ, যেটি দাঁড়িয়ে আছে গ্র্যান্ড ক্যানেলের ওপর।
এই প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৪৭৫ সালে। একসময় এটি ব্যক্তিগত বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন এটি একটি দামি হোটেল।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ও আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে থেকে শুরু করে নানা দেশের রাজাবাদশাহ্, রাজনীতিবিদ এবং সেলেব্রিটিরা এই হোটেলে থেকেছেন।
আরো পড়তে পারেন:
ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা কি সত্যি সম্ভব?
তাজমহল বা কাশী-মথুরার মসজিদ কি অক্ষত থাকবে?
পেঁয়াজ: বাঙালির রান্নাঘরে এর কেন এত দাপট?
কা পেজারো আর্ট গ্যালারি
ভেনিসের আরেকটি দর্শনীয় স্থান আধুনিক চিত্রকলার গ্যালারি - কা পেজারো।
বন্যার জলের কারণে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন ধরে গেলে কা পেজারো গ্যালারির ক্ষতি হয় বলে জানানো হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করেনি।
আঠারোশো শতকে মর্মর পাথর দিয়ে তৈরি এক প্রাসাদে এই গ্যালারির অবস্থান। আধুনিক চিত্র ও স্থাপত্যকলার বহু নিদর্শন এই গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে।
এই গ্যালারির ওপর তলাগুলোতে রয়েছে প্রাচ্যদেশীয় শিল্পকলা জাদুঘর। চীন, জাপান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা ৩০ হাজারেরও বেশি দর্শনীয় বস্তু এখানে রাখা আছে।
ভ্যাপোরেত্তি
ভেনিসের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা হচ্ছে নৌকা-ভিত্তিক। শহরের বাসিন্দারা এজন্য যেসব নৌকা ব্যবহার করেন তাকে বলা হয় ভ্যাপোরেত্তি।
এই বন্যায় এই নৌকার অনেকগুলোই বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে বেশ ক'টি 'ওয়াটার বাস' ঝড়ো বাতাস আর জোয়ারের পানিতে ভেসে রাস্তার ওপর উঠে গিয়েছে।
প্যালেসট্রিনা
ভেনিস লেগুনের পূর্বপাশ ধরে সরু একখণ্ড জমি রয়েছে যাকে বলা হয় প্যালেসট্রিনা। এটি ভেনিস আর এড্রিয়াটিক সাগরের মধ্যে দেয়াল হিসেবে কাজ করে।
এই জায়গাটিও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওখানে বাড়ির মধ্যে বৈদ্যুতিক পাম্প চালাতে গিয়ে এক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।
দ্বীপের অন্য অংশেও একজন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়।