এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়াতে আমূল পরিবর্তন, নয়া নির্দেশিকায় কী জানাল মার্কিন কর্তৃপক্ষ?
নির্বাচনী প্রচারের সময়ই জো বাইডেন জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ফের চালু করবেন এইচ১বি ভিসা। এবার জানা গেল, জো বাইডেন হোয়াইট হাউজে আসার আগেই বদল হতে চলেছে এইচ১বি ভিসার নিয়মাবলী। আগের লটারি পদ্ধতিতে বদল এনে এবার থেকে দক্ষতা ও পারিশ্রমিকের নিরিখে ভিসা ইস্যু করা হবে বলে জানানো হল মার্কিন কর্তৃপক্ষের তরফে।
অভিবাসী ভিসা পেতে আমেরিকায় পাঁচটি বিভাগ আছে
নাগরিকত্বের জন্য অভিবাসী ভিসা পেতে আমেরিকায় পাঁচটি বিভাগ আছে। যেমন-রাষ্ট্রের তরফে স্বাভাবিকভাবে নাগরিক অধিকার দান, স্থায়ী নিবাস (গ্রিন কার্ড), পরিবার, শরণার্থী ও দত্তক। অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক শ্রেণিতে আমেরিকায় অভিবাসী নয় যারা তাদের স্বল্পমেয়াদী প্রবেশের অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় এইচ১বি, এইচ২বি, জে ও এল ভিসার মাধ্যমে। এই শ্রেণিতেই ট্রাম্প প্রশাসন ২৪ জুন, ২০২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে।
ইউএস ইমিগ্রেসন অ্যাক্টের আওতায় এইচি১বি ভিসা দেওয়া হয়
১৯৯০ সালের ইউএস ইমিগ্রেসন অ্যাক্টের আওতায় আমেরিকায় নিয়োগকারীদের এইচি১বি ভিসা দেওয়া হয়, যাতে তারা অস্থায়ীভাবে বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ডিগ্রিপ্রাপ্ত, কর্মচারীদের নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়োগ করতে পারে। সাধারণত, এই ভিসা ৩ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে, আর ভিসাধারী যে পদে কাজ করছিল, সেই পদে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাকে আমেরিকা ছাড়তে হয় না।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিরোধী নীতি
তবে বিগত ৩ বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিরোধী নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। আমেরিকায় আফ্রিকান ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অধিবাসীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়৷ এর জেরে যারা আমেরিকায় শরণার্থী হিসাবে প্রবেশ করতে চান, তাদের পক্ষেও তা করা নিতান্তই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আমেরিকায় প্রবেশের জন্য ইতিমধ্যে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছিল, তার দেখাশোনার কাজও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে।
ভারতের উপর প্রভাব পড়ে
আমেরিকার এই পদক্ষেপের প্রভাব ভারতের উপর পড়তে দেখা যেতে শুরু করে। প্রতি বছর আমেরিকা ৮৫ হাজার এইচি১বি ভিসা ইস্যু করে৷ যার মধ্যে তিন চতুর্থাংশই পান ভারতীয়রা, যারা প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে কাজ করেন। ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এইচ১বি ভিসা ইস্যুর যে ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে, তা অনুযায়ী ৫ লক্ষ ভিসা ভারতীয়দেরই দেওয়া হয়েছে৷ যার মধ্যে এদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। আমেরিকার ৩ মিলিয়ন প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ভিসাধারীদের সংখ্যা অন্তত ৭ লক্ষ ৫০ হাজার। আর এই প্রবাসী ভারতীয়রাই বর্তমানে আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে।
অভিবাসন নীতি বদল অত্যন্ত জরুরি
পণ্য ও পরিষেবায় অ্যামেরিকা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যসঙ্গী। দক্ষ শ্রমশক্তি হিসাবে অ্যামেরিকার ভারতীয় সংস্থাগুলিতে ভারত থেকে আসা এইচ১বি ভিসাধারীদের সংখ্যা হঠাৎ করে কমিয়ে দিলে অবশ্যই তার প্রভাব পড়বে৷ প্রভাব দেখা যাবে আমেরিকার অর্থনীতির প্রযুক্তি, অর্থ ও উৎপাদনক্ষেত্রে। করোনা প্যানডেমিকের প্রভাবে আমেরিকার বিপর্যস্ত অর্থনীতির হাল ফেরাতে নেওয়া যে কোনও জাতীয় উদ্যোগই এই ৩টি ক্ষেত্র অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কাজেই আমেরিকায় অর্থনীতিকে সচল করে তুলতে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বদল অত্যন্ত জরুরি।