ভারতকে মার্কিনিদের 'নেটো সঙ্গী'র তকমা দেওয়ার হিড়িক; ভারসাম্য ঠিক রাখাটা জরুরি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর ছয় প্রভাবশালী সদস্য ভারতের সঙ্গে সেদেশের কৌশলগত সম্পর্ককে দৃঢ় করতে একটি বিল পুনরায় পেশ করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর ছয় প্রভাবশালী সদস্য ভারতের সঙ্গে সেদেশের কৌশলগত সম্পর্ককে দৃঢ় করতে একটি বিল পুনরায় পেশ করেছেন।'এইচ আর ২১২৩' নামক এই বিলটি পাশ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ দফতর নয়াদিল্লিকে তাদের নেটো জোটসঙ্গীদের সঙ্গে সম আসনে বসাতে পারবে।এর ফলে ইউ এস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম-এর মতানুযায়ী প্রতিরক্ষা খাতে ভারতকে অস্ত্র সরবরাহের উপরে জোর দেবে মার্কিন প্রশাসন।
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য জো উইলসন, যিনি আবার হাউস ফরেন এফেয়ার্স কমিটিরও এক অভিজ্ঞ সদস্য, এই বিলটি পেশ করে বলেন যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র হিসেবে ভারত এক স্থিতিশীলতার প্রতীক তো বটেই, পাশাপাশি শক্ত রফতানি নিয়ন্ত্রণ-মূলক নীতিতে তার ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য।উইলসন বলেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বলিষ্ঠ হওয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুরক্ষা ক্ষেত্রেও আরও মনোনিবেশ করতে পারবে।তিনি ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক ফোরামকেও এব্যাপারে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই বিলটিকে সমর্থন করার জন্যে, পিটিআই জানিয়েছে।
একই সময়ে, পাকিস্তানকে সাহায্য করার কথা পুনর্বিবেচনা করছে ওয়াশিংটন
আর একদিকে যখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তপোক্ত করার কথা বলছে মার্কিন প্রশাসন, ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানকে সাহায্য করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখছে বলে জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক আধিকারিক।এখানে বলে রাখা ভালো যে গত সেপ্টেম্বর মাসেই ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানকে ৩০০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলারের সামরিক সাহায্য বাতিল করে তার নিজের মাটিতে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগে।স্পষ্টবাক রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প গতবছর পাকিস্তানকে তুলোধোনা করে বলেন যে মুখে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিলেও আদতে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বোকা বানানো ছাড়া কিছুই করেনি।
আমূল বদলে গিয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট
এই দু'টি ঘটনাই বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ।ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার পরিপ্রেক্ষিতের ভাবলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত এবং পাকিস্তান দু'পক্ষেরই সম্পর্ক এখন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে।ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়াকে কোনঠাসা করতে পাকিস্তান এবং চীনের মতো দেশগুলির সহযোগিতা দরকার হত আমেরিকার।অন্যদিকে, আদর্শগত তফাৎ এবং মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সখ্য থাকার ফলে ভারতের সঙ্গে মার্কিন নেতৃত্বের বিশেষ বনিবনা হত না।একাত্তরের যুদ্ধে তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধাচরণই করেছিল|
ভারতকে নিজের স্বার্থেই চাই আমেরিকার, কিন্তু নয়াদিল্লির ভারসাম্যতা রক্ষা জরুরি
কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে, কেন না এশিয়াতে মার্কিন স্বার্থও এখন ভিন্ন।কমিউনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়া নয়, মার্কিনিদের এখন দুশমন এখন একাধিক।একদিকে আফগানিস্তানে তালিবান, অন্যদিকে চীনের ক্রমাগত উত্থান -- এই সমস্ত কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন এক সমমনোভাবাপন্ন বন্ধুর প্রয়োজন আর দক্ষিণ এশিয়াতে সে ভূমিকা সবচেয়ে ভাল পালন করতে পারে ভারতই|
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'নেটোর ন্যায় জোটসঙ্গী'র আখ্যা পাওয়ার বিষয়ে ভারতের সাবধানী হওয়া প্রয়োজন।নয়াদিল্লি চিরকালই 'পাওয়ার গেম' থেকে দূরে থেকেছে নির্জোট আন্দোলনের মতো নীতি অবলম্বন করে।আজকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সখ্য হলেও নিজের বিদেশনীতির ভিত্তি থেকে যেন তারা দূরে সরে না যায় সেটা ভারতকে নিশ্চিত করতে হবে।অন্যথায় বর্তমানের খামখেয়ালি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বেশি মাখামাখি করতে গেলে নিজেরই ক্ষতির আশঙ্কা|