ইরানকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার: আমেরিকার একমুখী দুনিয়া এখন অতীত
হরমুজ প্রণালীর উপরে মার্কিন ড্রোনকে ইরানের সেনা গুলি করে নামানোর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার দেশটির সম্পর্কে আরও অবনতি দেখা গিয়েছে।
হরমুজ প্রণালীর উপরে মার্কিন ড্রোনকে ইরানের সেনা গুলি করে নামানোর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার দেশটির সম্পর্কে আরও অবনতি দেখা গিয়েছে। অবস্থা তো এতটাই গম্ভীর যে বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের উপরে সামরিক হানার ছক তৈরী করে ফেলার পরেও পিছিয়ে আসে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কেন ঠিক অভিযান পিছোনো হল তার কোনও সদুত্তর পাওয়া না গেলেও ট্রাম্প শুক্রবার ভোরে একটি টুইট জানান যে ড্রোন আক্রমণের পাল্টা দিতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিলে তাঁর সেনা আধিকারিকরা বলেন যে দেড়শ মতো লোকের প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে মার্কিন প্রত্যাঘাতে। ট্রাম্পের মনে হয়েছে তা আনুপাতিকভাবে সঠিক নয় এবং তাই তিনি নিষেধ করেন শেষ পর্যন্ত আক্রমণে যেতে। মার্কিন যুদ্ধবিমান এবং রণতরীরা বেরিয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত আর হামলা হয়নি।
আসলে কি ট্রাম্প এক্সিট রুট খোঁজার চেষ্টা করলেন?
কিন্তু সত্যিই কি ইরানের বিভিন্ন সামরিক কেন্দ্রে আঘাত না হানার কারণ আনুপাতিক বৈষম্য? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ বিদেশনীতি কর্তারা কবেই বা অনুপাতের নিরিখে অন্য দেশ আক্রমণ করেছেন? নাকি অনুপাতের দোহাই দিয়ে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত তাঁর যাবতীয় তর্জন গর্জন বন্ধ করে 'এক্সিট রুট' খুঁজলেন?
পরের সম্ভাবনাটি উড়য়ে দেওয়া যায় না। আসলে ট্রাম্প মুখে 'মারিতং জগৎ' হলেও অন্যান্য যুদ্ধবাজ মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের থেকে তিনি একটু আলাদা। ট্রাম্প সাধারণত অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ-সংঘাতে জড়ানোর পক্ষপাতী নন। এমনকি শান্তির সময়েও তিনি অন্য দেশের সঙ্গে সংস্পর্শে থাকতে চান না, নিজের মিত্র হলেও না। আমেরিকা-কেন্দ্রিক মানসিকতা তাঁর। সুতরাং, মুখে গর্জন করলেও চট করে কারও সঙ্গে যুদ্ধে তিনি জড়াতে চাইবেন বলে মনে হয় না।
ইরান ইরাক বা আফগানিস্তান নয়
তবে, নিজের চরিত্রগত কারণে যুদ্ধ-বিমুখ হলেও ট্রাম্প বাস্তব-বিমুখ নন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জানেন যে ইরান আফগানিস্তান বা ইরাক নয় যে দমাদম বোমা ফেলে সে দেশকে ঠুঁটো করে রাখা যাবে। ইরানের সামরিক শক্তি হেলাফেলার নয় এবং সর্বোপরি, চিন বা রাশিয়ার মতো আমেরিকার দুশমন দেশগুলি ইরানের উপরে নজর রাখছে সেটাও তিনি জানেন। যদি আগে বাড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনও ঝামেলা বাধায়, তাহলে নৈতিক এবং রাজনৈতিক -- দু'ভাবেই ইরানের প্রতি বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরী হবে। এর আগে আফগানিস্তান এবং ইরাকে একপেশে আক্রমণ চালিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী করেছে তা সবাই জানে। আর এখন চিন এবং রাশিয়ার প্রভাব খাটো করার মতো নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন একমুখী থেকে ক্রমেই বহুমুখী হয়ে উঠেছে মার্কিন অর্থনৈতিক শক্তির দাপট থাকা সত্ত্বেও। আর তাই হুট করে ইরানে আক্রমণ করে বসলে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, তা ট্রাম্প জানেন বিলক্ষণ।
ইরান প্রসঙ্গে ট্রাম্প খামখেয়ালি আচরণ করেননি
ট্রাম্পকে খামখেয়ালি নেতা বলা হলেও ইরানের উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করে তিনি বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন। যদিও এতে তাঁর সমালোচকদের মনে হতে পারে যে তাঁর তর্জন-গর্জনই সার। কাজের সময়ে তিনি বিল্লি বনে যান। কিন্তু রিয়ালপলিটিক-এর ক্ষেত্রে দু'পা পিছোনো যে হেরে যাওয়া নয়, তা ট্রাম্প বুঝেছেন।