দেশে ফিরছে না সিরিয়ায় থাকা মার্কিন সেনারা, তাদের নতুন গন্তব্য জানিয়ে দিলেন সেদেশের প্রতিরক্ষা সচিব
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেনা ফিরিয়ে আনা হয়ে দেশে। তবে অন্য কথা বললেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সচিব মার্ক এসপার।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেনা ফিরিয়ে আনা হয়ে দেশে। তবে অন্য কথা বললেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সচিব মার্ক এসপার। এসপারের সঙ্গে আফগানিস্তান সফরে আসা সাংবাদিকরা গতকাল তাঁকে প্রশ্ন করেন, সিরিয়া থেকে যে মার্কিন সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তাদের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়। তখন তিনি বলেন, "নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের সৈন্যদের সিরিয়া থেকে সরিয়ে ইরাকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সেখানে অভিযান চালানো হবে।" অবশ্য ইরাক থেকে সিরিয়ার সীমান্তে অভিযান চলবে কি না সেটা এসপার তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেননি।
বাস্তবায়িত হচ্ছে না ট্রাম্পের ঘোষণা
সিরিয়া থেকে নিজেদের সকল সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর গত বুধবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, "এখন তাদের(মার্কিন সেনাদের) বাড়ি ফেরার সময়।" কিন্তু প্রতিরক্ষা সচিবের নতুন এই বক্তব্যের ফলে এটা স্পষ্ট যে, ট্রাম্পের ঘোষণা এই মুহূর্তেই রূপায়িত হচ্ছে না। এই বিষয়ে টুইট করে ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন যে আমেরিকান সেনারা নিরাবদ স্থানে থাকবেন। গতকালই তুরস্ক প্রস্তাবিত নিরাপদ অঞ্চলের নিকটস্থ ঘাঁটি থেকে রোববার ৭০টিরও বেশি সামরিক গাড়ি করে সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়া হয়। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আলেপ্পো ও রাকায় এই মুহূর্তে আর কোনও মার্কিন সেনা নেই। সেনা প্রত্যাহারের মধ্যেই কুর্দি বাহিনীর হামলায় তুরস্কের একজন সেনা নিহত ও অপরজন জখম হয়েছে বলে জানা যায়।
অপারেশন পিস স্প্রিং
এর আগে শুক্রবার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে 'অপারেশন পিস স্প্রিং' নামে চলা তুরস্কের আগ্রাসন বন্ধে পাঁচদিনব্যাপী সংঘর্ষ বিরতির মার্কিন প্রস্তাবে রাজি হয় তুরস্ক। এর মধ্যেও মার্কিন সমর্থিত কুর্দি যোদ্ধাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তুর্কি সেনাদের। রবিবার ওই অঞ্চল থেকে এক হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও আগেই হয়েছিল। ট্রাম্প তখন সেই সেনাদের আমেরিকায় ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই হাজারখানেক মার্কিন সেনা যাচ্ছেন ইরাক নিয়ন্ত্রণের বর্ধিত মিশনে।
সিরিয়ায় তুর্কি আগ্রাসন
চলতি মাসের প্রথম দিকে (৯ অক্টোবর) সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহীদের উৎখাতে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণার পরেই তুরস্ক সেদেশে অভিযান শুরু করে। ওই অঞ্চল থেকে সেনা তুলে নেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ফোন করে হামলা বন্ধের আর্জি জানান ট্রাম্প। তবে সেই আর্জিতে কাজ না হওয়ায় কড়া পদক্ষেপের পথে হাটেন ট্রাম্প। তবে এতে বন্ধু রাষ্ট্র খোয়ানোর ভয় জাকিয়ে বসে আমেরিকার উপরও। তাই পরিস্থিতি স্বাভাক করতে উদ্যোগ নেয় আমেরিকা। এর ফলস্বরূপ তুরস্কের উদ্দেশে রওয়ানা দেন মাইক পেন্স ও পম্পেও।
কোন পথে তুরস্কের সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে চলতে থাকা তুর্কি আগ্রাসন থামাতে বুধবার তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে আঙ্কারা যান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও। মূলত সংঘর্ষবিরতির ব্যাপারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে রাজি করানোর প্রচেষ্টা চালাতেই সেখানে পৌঁছান তাঁরা। এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক সফল হওয়ার ফলেই তুরস্ক সংঘর্ষ বিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। চারঘণ্টার সেই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মাইক পেন্স বলেন, "একসপ্তাহ আগে তুরস্কের সামরিক বাহিনী সীমান্ত পার করে সিরিয়াতে প্রবেশ করেছিল। আমেরিকা তুরস্ককে এই আগ্রাসন থামাতে অনুরোধ কেরছিল। সেই মত তুরস্ক আপাতত সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে।"
সিরিয়া আগ্রাসনের জেরে আমেরিকার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের অবনতি
ঐতিহাসিক ভাবে বন্ধু রাষ্ট্র হলেও সেদেশের উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ঘোষণা করে আমেরিকা। ই ঘোষণার পর দীর্ঘদিনের ন্যাটো সঙ্গী তুরস্কের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকিও দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সেনা অভিযানের জেরে দেশটির তিনজন মন্ত্রী এবং কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
৮০০০ বছরের পুরনো মুক্তো উদ্ধার আরবে