করোনা সঙ্কটের জেরে গোটা বিশ্বে প্রায় ১০ লক্ষ শিশু শ্রমিক বাড়তে পারে, জানাচ্ছে জাতিসংঘ
করোনা সঙ্কটের জেরে গোটা বিশ্বে প্রায় ১০ লক্ষ শিশু শ্রমিক বাড়তে পারে, জানাচ্ছে জাতিসংঘ
করোনার জেরে ইতিমধ্যে চূড়ান্ত দারিদ্রের সীমার নীচে চলে গেছে বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ। এবার এই অর্থনৈতিক মন্দার আঁচ এসে পড়ল শিশুদের উপরেও। শিশু শ্রম বিরোধী দিবসের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে এবার নতুন আশঙ্কা বানী শোনা গেল জাতিসংঘের রিপোর্টে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুসারে, করোনা সঙ্কটের জেরে নতুন করে বিশ্ব জুড়ে আরও ১০ লক্ষের বেশি শিশু শ্রমিকের উদ্ভব হতে পারে বলছে জাতি সংঘ। এদিকে ইতিমধ্যেই ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকোর মত দেশে গত কুড়ি বছরে প্রায় ৯কোটি ৪০লক্ষ শিশু শ্রমিককে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানো হয়েছে। বর্তমানে মহামারির জেরে সেই কাজই যেন কয়েক যোজন পিছিয়ে যাচ্ছে।
কি বলছে আইএলও এবং ইউনিসেফের যৌথ রিপোর্ট?
শুক্রবার প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন(আইএলও) এবং ইউনিসেফের যৌথ রিপোর্ট 'কোভিড-১৯ অ্যান্ড চাইল্ড লেবার : এ টাইম অফ ক্রাইসিস, এ টাইম টু অ্যাক্ট' অনুযায়ী, করোনার কারণেই গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের জন্য শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। শিশু শ্রম বিরোধী দিবসে প্রকাশিত এই রিপোর্টে স্পষ্টতই বলা হচ্ছে, "বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত শিশু শ্রমিকদের অতিরিক্ত সময় ধরে খাটানো হচ্ছে। একইসাথে নতুন করে আরও শিশুকে শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানোও হচ্ছে এবং নজর দেওয়া হচ্ছে না তাদের স্বাস্থ্যের দিকেও।"
করোনার জেরে ভাঁড়ারে টান, কম খরচে কাজের জন্যই শিশু শ্রমিকের চাহিদা
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ লকডাউনের ইতিমধ্যেই ভাঁড়ারে টান পড়েছে অফিস থেকে গৃহস্থলী, সব ক্ষেত্রেই। ফলত অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র, কারখানা বা গৃহকর্ম, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সুলভে শ্রমের কারণে শিশু শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে। জাতিসংঘের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, "উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্রাজিলে বাবা-মায়ের চাকরি হারানোর দুর্দশা ঢাকতে শিশু শ্রমিক হিসেবে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছে ছেলেমেয়েরা। গুয়েতেমালা, ভারতবর্ষ, মেক্সিকো বা তানজানিয়ার অবস্থাও একইরকম।"
শিশু শ্রমিকদের সংখ্যায় জোয়ার আনছে দারিদ্র্য
কিছু সমীক্ষা নির্ভর গবেষণায় উঠে এসেছে, কিছু দেশে দারিদ্রের পরিমাণ ১% বৃদ্ধিতে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয় ০.৭% পর্যন্ত। ইউনিসেফের একজিকিউটিভ ডাইরেক্টর হেনরিয়েতা ফোরের কথায়, "করোনার আবহে শিশু শ্রম কিছু পরিবারের কাছে জীবনধারণের অঙ্গ। তাছাড়া দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণে স্কুল-ছুটের সংখ্যা বাড়ছে, পেট ভরানোর লক্ষ্যে শ্রমিক হচ্ছে শিশুরা।" রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা আবহ মিটে যাওয়ার পরে প্রত্যেক দেশের উচিত মানুষকে পুনরায় এমন ঝড়ঝাপটা সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা এবং এক্ষেত্রে সুশিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অভিবাসী শ্রমিকরা সর্বোচ্চ দুর্দশার শিকার
আইএলও ও ইউনিসেফের এই যৌথ রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার কারণে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিক এবং দিনমজুররা সর্বোচ্চ দুর্দশার শিকার হবেন। বেকারত্ব বৃদ্ধি, নিম্ন জীবনযাপনের মান, স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় ফাঁক এবং সামাজিক সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মত এক ঝাঁক সমস্যার মুখে পড়বেন এইসকল কর্মীরা। পাশাপাশি এই রিপোর্টে শিশু শ্রমিক ও অন্যান্য অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের সাহায্যার্থে নানারকম পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়তি নজরদারির কথা বলছে ইউনিসেফ ?
সামাজিক সুরক্ষা, সরাসরি আর্থিক সাহায্য, প্রাপ্ত বয়স্কদের নতুন কাজের সুযোগের মত পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবতে বলা হচ্ছে প্রতিটা দেশকে। তাছাড়া স্কুল-ছুটদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়াতে স্কুলের বেতন মকুব এবং আইনের সাহায্য নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। একইসাথে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে আইএলও এবং ইউনিসেফের তরফে সমস্ত দেশের কাছে সহযোগিতার আবেদনও জানানো হয়েছে।
নেপাল সেনার আগ্রাসন শুরু! ভারত সীমান্তে গোলা বর্ষণে নিহত বিহারের ১