আগামী বছরেই বিশ্ব জুড়ে প্রবল খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা, সতর্ক করলেন রাষ্ট্র সংঘের মহাসচিব
আগামী বছরেই বিশ্ব জুড়ে প্রবল খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা, সতর্ক করলেন রাষ্ট্র সংঘের মহাসচিব
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্কট চরম আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
বার্লিনে একটি বৈঠকে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব ভিডিও বার্তায় বলেন, ২০২২ সালে একাধিক জায়গায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৩ সালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে তিনি আশঙ্কা করেছেন। মহাসচিব বলেন, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকায় কৃষি ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ হিসেবে বিশ্বজুড়ে সার ও বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান দামকে দায়ী করেছেন তিনি। যার প্রভাব সরাসরি কৃষকদের ওপর পড়ছে। বিদ্যুত ও সারের দামের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কৃষিজপণ্যের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। কোনও বছর উৎপাদন কম হলে, প্রভাব কয়েক বছর পর্যন্ত থাকে। ইতিমধ্যে বিশ্বের একাধিক দেশে খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব মনে করছেন, ক্রমেই সেই ঘাটতি চরম আকার নেবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও এর প্রভাব পড়বে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে কৃষ্ণসাগরে বানিজ্যিক তরী প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এরফলে ইউক্রেন খাদ্যপণ্য ও সার রফতানি করতে পারছে না। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বিশ্বে। গুতেরেস জানান, এমন একটি চুক্তি করতে হবে, যেখানে রাশিয়ার কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে খাদ্যপণ্য ও সার রফতানি করতে পারবে। না হলে বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়াও রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব দরিদ্রদেশগুলোর অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ও কৃষির ওপর জোর দিতে বেসরকারি ঋণ ও ত্রাণের পরামর্শ দিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি উন্নত ও ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছেন। বার্লিনে এই বৈঠকে বিশ্বের একাধিক দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিনা উসকানিতে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা করেছে। হামলার বিরোধিতা করে পশ্চিমি দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রুশ প্রশাসনের দাবি, সেই কারণেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জার্মান বিদেশমন্ত্রী আনালোনা বেয়ারবক রাশিয়ার এই দাবিকে 'মিথ্যা' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বৈঠকে তিনি বলেন, পশ্চিমি দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পরেও রাশিয়ার খাদ্যপণ্য রফতানিতে কোনও ঘাটতি হয়নি। ২০২১ সালের মে-জুন মাসে রাশিয়া যে পরিমাণ গম রফতানি করেছিল, চলতি বছরেও তার পরিমাণ এক রয়েছে।
জার্মান বিদেশমন্ত্রী আনালোনা বেয়ারবক বিশ্বজুড়ে খাদ্যের ঘাটতির জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, খাদ্যপণ্যের দিক থেকে বিশ্বের অনেক দেশ সরাসরি ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করে। রুশ আগ্রাসনের জেরে ইউক্রেনের রফতানি তলাতিতে ঠেকেছে। যার জেরে ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গুতেরেসের মন্তব্যকে সমর্থন করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে, সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালে বিশ্ব জুড়ে প্রবল খাদ্যসঙ্কট দেখা দিতে পারে।
জি ৭ বৈঠকে গেলেন মোদী, ফেরার পথে যাবেন আরব আমিরশাহি সফরে
মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও এই সঙ্কটের জেরে রাশিয়াকে দায়ি করেছেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার জন্য নয় রাশিয়া ইউক্রেনের রফতানি আটকে দিয়েছে। যার জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মন্তব্য করেছেন, ইউক্রেনের হামলার জন্য রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু খাদ্যপণ্য রফতানিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।