ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ: পরমাণু যুদ্ধের উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য পশ্চিমকে দায়ী করলেন রুশ গুপ্তচর প্রধান
ইউক্রেন 'ডার্টি বম্ব' নামে পরিচিত এক ধরনের শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় বোমা ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে রাশিয়া দাবি করার পর জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ বলছে তারা ইউক্রেনের দুটি পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়মিত পরিদর্শন করছে এবং এই দাবির পর তারা আবার কেন্দ্র দুটি পরিদর্শনে যাবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শইগুর আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউক্রেন, এছাড়াও ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং আমেরিকা।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন পশ্চিমা দেশগুলো যাতে ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা না দেয়, রাশিয়া তার জন্য নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
পশ্চিমা নেতারা বলছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যেসব হুমকি দিচ্ছেন তা গভীর উদ্বেগের।
কিন্তু পশ্চিমা নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য, উদ্বেগ ও অভিযোগের উত্তরে মস্কো কী বলছে?
বিবিসির রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব সমালোচনা নিয়ে কথা বলেন রাশিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর অন্যতম একজন কর্মকর্তা সের্গেই নারিশকিনের সঙ্গে। মি. নারিশকিন রাশিয়ার পররাষ্ট্র গোয়েন্দা দপ্তর এসভিআর-এর প্রধান।
রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে এমন কথা তিনি অস্বীকার করেন, যদিও রাশিয়ার দিক থেকে এধরনের কথা একাধিকবার শোনা গেছে।
মি. নারিশকিন এ ব্যাপারে উল্টে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পশ্চিমের দিকে।
আরও পড়তে পারেন:
পুতিনের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ধাপ্পা নয় : ইইউ
'অধিকৃত এলাকাগুলোর সুরক্ষায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া'
কত পারমাণবিক অস্ত্র আছে রাশিয়ার?
যেসব ভুল বিশ্বকে প্রায় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল
মি. রোজেনবার্গ সের্গেই নারিশকিনকে জিজ্ঞেস করেন, "আপনি কি সুনির্দিষ্টভাবে বলবেন যে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না, অথবা ডার্টি বোমার বিস্ফোরণ বা বাঁধ উড়িয়ে দেবার মত উস্কানিমূলক কোন হামলা চালাবে না?"
রাশিয়ার গুপ্তচর প্রধান একথা সরাসরি জবাব এড়িয়ে বলেন, "পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো যেসব বাগাড়ম্বর করছে, তাতে আমরা অবশ্যই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।"
তিনি বলেন, "রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তুরস্ক, আমেরিকা ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি তাদের জানিয়েছেন ইউক্রেনের নেতা তথাকথিত 'ডার্টি পরমাণু বোমা' ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে পরিকল্পনা করছেন।
রুশ সরকারের এই দাবি নিয়ে রবিবার ব্রিটেন, আমেরিকা ও ফ্রান্স সরকার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলেছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এটা "রাশিয়ার পরিষ্কার ভুয়া অভিযোগ"। এতে আরও বলা হয়েছ: "হামলার তীব্রতা আরও বৃদ্ধির জন্য এই অভিযোগকে রাশিয়া যে একটা ছুতো হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে তা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট।"
রাশিয়ার সামরিক যাদুঘরে এক অস্ত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় রুশ গুপ্তচর প্রধান সের্গেই নারিশকিনের সঙ্গে কথা বলেন বিবিসির সংবাদদাতা স্টিভ রেজেনবার্গ।
কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কটের ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল এই সমরাস্ত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনী কক্ষের দেওয়া তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেফ আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির বিশাল ছবি টাঙানো।
ষাট বছর আগে ১৯৬২র অক্টোবরে পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধার একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যখন আমেরিকার একটি গোয়েন্দা বিমান গোপনে কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি একটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির ছবি তোলে, যেখানে দেখা যায় রাশিয়ার মিসাইল, ট্রাক আর গোপন লঞ্চারের ছবি। ধারণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
তেরো দিন ধরে চলা সঙ্কটের অবসান ঘটে ক্রুশ্চেফ ও কেনেডির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে।
সেই ঘটনা ও অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য কোন পথে এগোতে চায় - মি. রোজেনবার্গের এই প্রশ্নের উত্তরে মি. নারিশকিন বলেন, "কিউবা মিসাইল সঙ্কট থেকে আমাদের শিক্ষা হল বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে হলে দু পক্ষেই রাজনৈতিক নেতাদের তাদের ভেতরকার শক্তি যাচাই করে তবেই আপোষের পথে যেতে হয়।"
বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক কীভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হলেন
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোথা থেকে এলো 'ভূতুড়ে জাহাজ'?
ফরিদপুরে হঠাৎ কুমির কোথা থেকে এলো?
কিউবার সঙ্কট অবসানে মি. কেনেডি আর মি. ক্রুশ্চেফ আপোষরফা করেছিলেন।
মি. ক্রুশ্চেফ কিউবা থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন। মি. কেনেডি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তুরস্ক থেকে আমেরিকান মিসাইল সরিয়ে নেয়া হবে।
ষাট বছর পর আবার একটা পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এবারের পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন - বলছেন মি. রোজেনবার্গ। "আট মাস ধরে ইউক্রেনে লড়াই চলছে।
ইউক্রেন এবং পশ্চিমা বিশ্ব দুয়ের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে মি. পুতিন কোন না কোন ভাবে জিততে চান। তাই তিনি কতটা আপোষের পথে যেতে চাইবেন, তার কোন স্পষ্ট ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।