অশান্ত ইউক্রেনে দুরু দুরু বুকে বিয়ে সারলেন যুগল, মধুচন্দ্রিমা নয়, বিয়ের পর যোগ দেবেন যুদ্ধক্ষেত্রে
অশান্ত ইউক্রেনে দুরু দুরু বুকে বিয়ে সারলেন যুগল, মধুচন্দ্রিমা নয়, বিয়ের পর যোগ দেবেন যুদ্ধক্ষেত্রে
একদিকে যুদ্ধের দামামা, মূর্হু মূর্হু বিস্ফোরণের শব্দ, পুলিশ–অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের এই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত গোটা বিশ্ব। এরই মাঝে এক প্রেমিক যুগল তাঁদের স্বপ্নের বিয়েকে বিসর্জন দিয়ে সাদামাটাভাবে বিয়ে সারলেন। ইয়ারিনা আরিয়েভা এবং তাঁর সঙ্গী স্যাভিয়াতোস্লাভ ফুরসিন পরিকল্পনা করেছিলেন যে তাঁরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক রেস্তোরাঁর ছাদে রাজকীয় বিয়ে সারবেন এই বছরের মে মাসে। এই রেস্তোরাঁটি নিপার নদীর ধারে অবস্থিত, যার উৎস এসেছে রাশিয়ার ভল্দাই পাহাড় থেকে। কিন্তু এই যুগলকে তাঁদের বিয়ের পুরো পরিকল্পনা ত্যাগ করে তড়িঘড়ি বিয়ে সারতে হয় এই সপ্তাহে এক বৌদ্ধ গুম্ফায়। শান্ত নদীর তীর ও সুন্দর আলোকময় পরিবেশের বদলে তাঁদের বিয়ের সময় দূর থেকে ভেসে আসছিল ভয়ানক সাইরেন ও আকাশে উড়ছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান।
তড়িঘড়ি বিয়ে সারলেন যুগল
বেজে চলেছে যুদ্ধবিমানের অস্তিত্ব বোঝাতে সাইরেন। শহরটা খাঁ খাঁ করছে। রাস্তায় শুধু সেনা। মানুষজন কোনওক্রমে বাঙ্কারে পরিবার নিয়ে মাথা গুঁজেছেন। পেটে খাবার নেই। তার মধ্যে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। দেশের সরকার সাধারণ মানুষকেও অস্ত্র তুলে নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার আহ্বান জানিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রাণটা বাঁচবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে আরিয়েভা ও ফুরসিন জানেন না তাঁদের ভবিষ্যত কি, তাই তাঁরা দুরু দুরু বুকে বিয়েটা সেরে নিলেন। প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল এবং ইউক্রেনবাসী যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলেন ঠিক সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। রুশ বাহিনী, যাঁরা সীমান্তে ঘোরাঘুরি করছিলেন, আচমকা শহরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং একাধিক মিসাইলের বৃষ্টি হচ্ছে কিয়েভ সহ দেশের প্রধান শহরগুলিতে।
ইউক্রেনের ভয়াবহ পরিস্থিতি
ইউক্রেনের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ ভয়ের রূপ নিয়েছে এবং তাঁরা সুরক্ষিত জায়গার আশায় শহর ছাড়তে শুরু করেছেন। রাস্তা এবং সাবওয়েগুলিতে শুধুই মানুষের ভিড় এবং যাঁরা শহরে বাস করতে পারছেন না তাঁরা আশ্রয় খুঁজছেন। আর ইউক্রেনের এই দৃশ্য সামনে আসার পরই এই যুগল তড়িঘড়ি বিয়ে সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।
বিয়ের পরই যুদ্ধক্ষেত্রে যোগ দেবেন তাঁরা
২১ বছরের আরিয়েভা, যিনি কিয়েভ সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি বিয়ে করেন ২৪ বছরের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ফুরসিনকে। তাঁরা কিয়েভের সেন্ট মাইকেল বৌদ্ধ গুম্ফাতে এই বিয়ে করেন। ২০১৯ সালে কিয়েভে এক প্রতিবাদ চলাকালীন এই যুগলের পরিচয় হয়েছিল। আরিয়েভা বলেন, ‘এটা খুবই ভয়ানক। এটা আপনার জীবনে সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এবং আপনি বাইরে বেরিয়ে এই সাইরেন-বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন।' তিনি দেশের জন্য লড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আরিয়েভা বলেন, ‘যেহেতু যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, তাই আমরা দেশের জন্য লড়াই করতে যাচ্ছি। আমরা হয়তো মারা যেতে পারি, তবে সবকিছুর আগে একসঙ্গে থাকতে চাই আমরা।'
একদিন সব স্বাভাবিক হবে আশা নব দম্পতির
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা করেন, যার সূচনা হয় একগুচ্ছ মিসাইল হামলার মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় দিনে রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের আরও ভেতরে ঢুকে পড়েন, কিয়েভে বিস্ফোরণের শব্দ গুঞ্জরিত হয়। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে বৃহস্পতিবার থেকে এখনও পর্যন্ত ১৩৭ জন মানুষ মারা গিয়েছে। আরিয়েভা ও ফুরিন তাঁদের বিয়ের পর দেশকে রক্ষা করার প্রচেষ্টায় যোগ দিতে স্থানীয় টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে এই দম্পতিকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা তাঁরা এখনো জানেন না। আরিয়েভা বলেন, ‘আমরা যে সব মানুষদের ভালোবাসি এবং যে মাটিতে বাস করি তাকে রক্ষা করতে হবে।' আরিয়েভা তাঁর স্বামীকে তাঁর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা আশা করেন, একদিন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং তাঁরা তাদের বিয়ে উদযাপন করতে সক্ষম হবেন।
ছবি সৌ:অর্থোডক্স চার্চ অব ইউক্রেন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : সংঘাত নিয়ে কী কথা স্পষ্ট করলেন ন্যাটো প্রধান