গল্প হলেও সত্যি! সোশ্যাল সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে চাঁদা তুলে গোটা দ্বীপ কিনে ফেললেন দুই বন্ধু
গল্প হলেও সত্যি! সোশ্যাল সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে চাঁদা তুলে গোটা দ্বীপ কিনে ফেললেন দুই বন্ধু
আপনি কখনও স্বপ্ন দেখেছেন কোনও উষ্ণপ্রধান দ্বীপের মালিক হওয়ার? হয়ত দেখেছেন, কিন্তু বাস্তবে তার রূপ দিতে পারেননি। কিন্তু নিজেদের সেই স্বপ্নকে বাস্তবে আকার দিয়ে ফেললেন একদল বিনিয়োগকারী। তাঁরা কিনে ফেলেছেন গোটা আস্ত একটা দ্বীপ যার নাম কফি কায়ে, বিশ্বের প্রথম চাঁদা দিয়ে কেনা কোনও দ্বীপ, ক্যারিবিয়ানের দ্বীপপুঞ্জের অজস্র দ্বীপের মধ্যে এটি একটি, যা বেলিজ উপকূলে অবস্থিত। প্রবাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই দ্বীপে আসার জন্য বেলিজ শহর থেকে নৌকা ভ্রমণ করেই চলে আসা যায়। ১.২ একরের ওপর এই দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এক ব্যক্তির হেঁটে যেতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লাগবে।
চাঁদা তুলে দ্বীপ কিনলেন দুই বন্ধু
জানা গিয়েছে, এই দ্বীপটি কেনার জন্য দুই বিনিয়োগকারী বন্ধু অনলাইনে 'আসুন একটি দ্বীপ কিনি' এই পোস্ট দিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে নামেন। আর ৯৬ জন বিনিয়োগকারী এই পোস্টে সাড়া দিয়ে বিনিয়োগও করেছেন এবং এই দ্বীপে মাত্র ২৪৯ জন রয়েছেন যাঁরা নিজেদের এখানকার নাগরিক হিসাবে মনে করেন। তবে এই বিনিয়োগ গোষ্ঠীর লক্ষ্য হল অদূর ভবিষ্যতে এই দ্বীপে ৫ হাজার নাগরিক বসবাস করবেন।
ফেব্রুয়ারিতে প্রথম পর্যটকের দল
তাঁদের অনলাইন সাইটে গেলে প্রথমেই যে স্বাগত বার্তা আপনাকে আকর্ষণ করবে তা হল, 'বিশ্বের প্রথম চাঁদা তুলে ব্যক্তিগত দ্বীপে বাড়ি।' ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কফি কায়েতে প্রথম পর্যটকদের দল আসেন। বিশ্বের নতুন ক্ষুদ্র-দেশকে চালনা করার জন্য এই বিনিয়োগকারীদের দলে রয়েছে ১৩ জন পর্যটক ও মালিকরা। অনুদানের মাধ্যমে দ্বীপ কেনার এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালের মধ্যে এই দলটি আড়াই লক্ষ মার্কিন ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি টাকার সমান, তা সংগ্রহ করে ফেলে। এরপরই বেলিজ উপকূলের কফি কায়ে দ্বীপটি কিনে ফেলা হয়।
কফি কায়ে এখনও পূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়নি
ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছিল যে এই দ্বীপের মালিক হতে চাইলে সেই ব্যক্তিকে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা অনুদান দিতে হবে। তাছাড়াও, সেই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার একটি অংশ হবে কারণ বিনিয়োগকারীরা দ্বীপটিকে একটি লাভজনক উদ্যোগ হিসাবে গড়ে তুলবেন। আসলে বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র বেলিজিয়ানের একটি অংশ কেনেননি, তাঁরা একটি জাতি গঠন প্রকল্পেও বিনিয়োগ করেছিলেন। বিনিয়োগকারীরা এই দ্বীপকে দেশ বানানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোলেও বলতে গেলে সমূদ্রের মাঝামাঝি এখনও একরকম অরক্ষিতই রয়েছে দেশটি। তবে ইতিমধ্যেই প্রিন্সিপালিটি অফ আইল্যান্ডিয়া নামে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠাও করে ফেলেছে কফি কায়ে। শুধু তাই নয়, কফি কায়ের রয়েছে নিজস্ব জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং নিজস্ব সরকার। বিশ্বের নতুন 'ক্ষুদ্রতম দেশ' যা নিজেদের স্বাধীনতা দাবি করলেও এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পূর্ণ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়নি। এই দেশের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী নেই। জলে ঘেরা দেশটিতে নেই কোনও নৌবাহিনীও।
দুই বন্ধুর দ্বীপ কেনার স্বপ্ন পূরণ
'আসুন দ্বীপ কিনি'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্শাল মায়ের বলেন, 'নিজের বিনিয়োগ করা ও নিজস্ব দ্বীপে পা দেওয়ার অনুভূতি সত্যিই শিহরণ জাগানোর মতো। আর এক সহ-প্রতিষ্ঠাতা গ্যারেথ জনসন জানিয়েছেন যে অনুদান বা চাঁদা দিয়ে দ্বীপ কেনার ধারণাটি জন্ম নিয়েছিল ১৮ বছর আগে। গ্যারেথ 'লেটসবাইঅ্যানআইল্যান্ড ডট কম'-এর সিইও। গ্যারেথ ও মার্শাল এই দ্বীপ কেনার স্বপ্ন দেখেন এবং তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য চাঁদা তুলতে শুরু করেন। এরপর ২০১৮ সালে, যখন ফিলিপাইনের একটি দ্বীপ বিক্রির জন্য উপলভ্য হয়ে ওঠে, জনসনের একটি দ্বীপকে চাঁদা তুলে ক্রয় করার ধারণাটি পুনরায় চালু হয়।
কফি কায়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অসাধারণ
কফি কায়ে আকারে ছোট হলেও এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নাকি দেখার মতো। তাই আগামী দিনে কফি কায়েকে পর্যটন ক্ষেত্র বানানোর কথাও ভাবছেন গ্যারেথ আর মার্শাল। তবে সবার আগে দ্বীপটিকে দেশ বানাতে চান তাঁরা।
একপ্রান্তে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টি, অন্যপ্রান্তে তাপপ্রবাহ! রঙের উৎসবের আগে বাংলার আবহাওয়ার আপডেট একনজরে