রাজনৈতিক অরাজকতা চলবে আমেরিকায়? নির্বাচনে হারলে যা যা করতে পারেন ট্রাম্প
মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী প্রচারে নেমে ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবর বলেছেন যে তিনি মসৃণ এবং সুন্দর ভাবে প্রশাসনের ক্ষমতা হস্তান্তর চান। তবে সেই ক্ষেত্রেও 'শর্তাবলী' দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, 'এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হতে হবে 'সৎ' হতে হবে।' এবং ট্রাম্পের এহেন মন্তব্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
নির্বাচনে নয়া রেকর্ড বিজেপির! ফলাফল প্রকাশের আগেই বিহারে ইতিহাস সৃষ্টি পদ্ম শিবিরের
'দেখা যাক কী হয়'
ভোটের পর পরাজিত পক্ষ ফলাফল মেনে নিচ্ছে না, এমন ঘটনা শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশেই হয়তো ঘটতে পারে বলে মনে করা হয়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেখানে এমন অনেক কিছুই ঘটে গেছে যা দেশটির ইতিহাসে প্রায় নজিরবিহীন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন জবাবে সেপ্টেম্বরে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, নির্বাচনে যদি তিনি পরাজিত হন তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, এমন নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারছেন না। তাঁর জবাব ছিল, দেখা যাক কী হয়।
ট্রাম্পকে সরাতে সেনা ডাকা হবে
নভেম্বরের ৩ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে ট্রাম্প হেরে গেলে কি তিনি কি আদৌ ফলাফল মেনে নেবেন? এবং ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন? তাঁর প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, সে ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পকে সরিয়ে দিতে সামরিক বাহিনী ডাকা হতে পারে।
বিতর্কে জড়াবে কংগ্রেসের দুই কক্ষ ও আদালত
এদিকে যদি নির্বাচনে পপুলার ভোটের নিরিখে ট্রাম্প এগিয়ে গিয়েও যদি ইলোক্টোরেট ভোটে হেরে যান অথবা খুব কম ব্যবধানে হারেন, তাহলে নিয়ি এই ফলাফল হয়ত মানবেন না। সেই ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে প্রেসিডেন্ট মনে করতে পারেন, যদিও জো বাইডেন মনে করতে পারেন তিনিই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের দুই কক্ষ ও আদালত সবাই জড়িয়ে পড়বে তিক্ত বিতর্কে।
রাজনৈতিক চূড়ায় ট্রাম্প
প্রাথমিক ভাবে ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রিপাবলিকানদের তরফে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন অনেক বিশেষজ্ঞই অবাক হয়েছিলেন। ট্রাম্প নিজেও রাজনৈতিক ভাবে এই চূড়ায় পৌঁছানোর স্বপ্ন হয়ত দেখেছিলেন অনেক পরে। তবে ৪ বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পর এই ব্যবসায়ী যে আরও ৪ বছর নিজের পদে বহাল থাকতে চাইবেন, তা বলাই বাহু্ল্য। এবং ট্রাম্পের যা চরিত্র, তাতে হেরে গেলেও যে তিনি খুব সহজেই প্রতিপক্ষ জো বাইডেনকে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।
নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মার্কিনিদের মনে সংশয়ের বীজ অনেক আগেই বপণ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং বিভিন্ন সময় মার্কিন নির্বাচনে, ইরান, রাশিয়া, চিনের হস্তক্ষেপের খবর উঠে আসায় ক্রমেই সেই দাবির অনেকাংশই মানুষ বিশ্বাস করতেও শুরু করেছেন আমেরিকাতে। এদিকে মেইল-ইন ব্যালট নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও করোনা কালে মেইল-এ প্রচুর ভোট পড়ার কথা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মেইল-ইন ভোট পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প
তবে মেইল-ইন ভোট পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প একটি আগাম আভাস দিয়ে রেখেছেন যে তিনি নির্বাচনে হারলে তা নিয়ে সাংবিধানিক আইনি লড়াইতে নামবেন তিনি। তাই আগেভাগেই সুপ্রিমকোর্টেও রিপাবলিকান হিসাবে পরিচিত বিচারপতিকে নিযুক্ত করেছেন একজন বিচারপতির মৃত্যুতে। এবং বর্তমানে ৯ বিচারপতির বেঞ্চ ঝুঁকে রিপাবলিকানদের তরফে।
শান্তি বজায় রাখবেন তো ট্রাম্প?
৩ নভেম্বরের নির্বাচনে যেই জিতুক, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর অভিষেক ঘটবে ২০২১ সালে। এর মাঝে ২ মাস দেশের দায়িত্বে থাকবে পূর্বতন প্রেসিডেন্টই, এই ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে হেরে গেলে ২০২১ সালে বাইডেনের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার আগে যে ট্রাম্প রাজনৈতিক ভাবে শান্তি বজায় রাখবেন, তার গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেউ।
যদি জো বাইডেন জেতেন...
৩ নভেম্বরের নির্বাচনে যদি জো বাইডেন জেতেন, তাহলে ২০২০ সালের শেষ দুই মাস তাঁর মনোনীত হোয়াইট হাউজ কর্মীরা ট্রাম্পের দলের থেকে কাজকর্ম বুঝে নেবে। এই সময় সব ক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ চলবে। তবে এহেন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অরাজকতা দেখা যেতে পারে আমেরিকায়। এমনই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
হোয়াইট হাউজে জো বাইডেনের কাজ
৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর জো বাইডেনের কাজ হবে হোয়াইট হাউজের সব কর্মী নিয়োগ করা। এছাড়া ৪ হাজার কর্মী নিয়োগ করতে হবে প্রেসিডেন্টকে। যার মধ্যে প্রায় ১২০০ পদের নিযুক্তির জন্যে সেনেটের অনুমোদন লাগবে। এছাড়া ১০০টি বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থার কর্ম পদ্ধতির বিষয়ে অবগত হতে হবে জো বাইডেনকে। প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিনের রূপরেখা তৈরি করতে হবে বাইডেনকে। সূত্রের খবর, জো বাইডেন ইতিমধ্যেই সেই কাজের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
বাইডেনকে নিয়ে ট্রাম্পের মনোভাব
তবে হেরে গেলে ট্রাম্প কী করবেন? এই প্রশ্নের জবাব এখন পাওয়া খুবই কঠিন। এই প্রশ্নের জবাব পেতে অবশ্য ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে, যেখানে কখনও তিনি বলছেন যে বাইডেনে কাছে হারলে তিনি দেশ ছাড়বেন। বা নির্বাচনী পদ্ধতির উপর প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। এদিকে বাইডেনকে মাদকাশক্ত বলেও অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
হারলেও ৭৭ দিন ক্ষমতায় থাকবেন ট্রাম্প
ট্রাম্প যদি হেরে যান তবে তাঁর প্রশাসনের শেষ ৭৭ দিনে ট্রাম্প যে কোনও একটি সাংবিধানিক ঝামেলা বাঁধাতে পারেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ১২টি এনজিও। এর আগে বিল ক্লিংটনের পরে যখন জর্জ ডাব্লিইউ বুশ হোয়াইট হাউজে আসেন, তখন এই ক্ষমতা হস্তান্তর মসৃণ ভাবে হয়নি। যদিও বুশের থেকে ওবামার হাতে ক্ষমতা উঠেছিল খুবই মসৃণ ভাবে। তবে এবারে ট্রাম্প হারলে যে তিনি বাইডেনকে মসৃণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না, তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। এমনকি যদি নির্বাচনের মার্জিন কম হয়, সেই ক্ষেত্রে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাতে পারেন ট্রাম্প। সেক্ষেত্রে আদালতে গড়াবে নির্বাচনী লড়াই।