জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিমদের উপর চিনের অত্যাচার ক্রমেই মাত্রা ছাড়াচ্ছে, আশঙ্কিত গোটা বিশ্ব
জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিমদের উপর চিনের অত্যাচার ক্রমেই মাত্রা ছাড়াচ্ছে, আশঙ্কিত গোটা বিশ্ব
চিনে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ইতিহাস এখন বহুল চর্চিত। বর্তমানে চিন সরকার চিন সরকার দশ লক্ষেরও বেশি মুসলমানকে আটক করে রেখেছে বলে জানা যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগই চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষ বলে জানা যাচ্ছে। মুসলিমদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে তাদের দেহে জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র বসানোরও অভিযোগ উঠেছে বেজিং-র বিরুদ্ধে। সম্প্রতি supchina.com –র রিপোর্টেও এই বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে কঠোর সমালোচনার মুখে চিন
এদিকে ভারচ-চিন সংঘাতের আবহে বারবারই খবরেই শিরোনামে এসেছে লাদাখ ঘেঁষা জিনজিয়াং প্রদেশের নাম। খাতায় কলমে জিনজিয়াং স্বায়ত্তশাসিত হলেও চিন প্রশাসনের কঠোর শাসন সারাক্ষণ জারি রয়েছে এই এলাকার মানুষের উপর। এদিকে উইঘুর জনগোষ্ঠীকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখায় বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যেই কঠোর সমালোচনার মধ্যে পড়েছে চিন।
উইঘুরদের উপর অত্যাচারের কথা অস্বীকার বেজিংয়ের
যদিও চিনের তরফে বারংবার এই তথ্য গুলিকে অস্বীকার করা হয়। বেইজিং প্রশাসন এই ডিটেনশন ক্যাম্প গুলিকে তাদের ভাষায় ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র' আখ্যা দিয়ে থাকে। সন্ত্রাস দমনে এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি তাদের। অন্যদিকে এই ক্যাম্পেই দীর্ঘদিন থেকে তাদের উপর অকথ্য ভাষায় অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে শি-জিনপিং প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গত চার বছরের বেশি সময় ধরে পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে চিন যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাকে অনেক বিশেষজ্ঞই ‘জনতাত্ত্বিক গণহত্যার' একটি ধরণ বলে মনে করেন।
ইতিহাস কি বলছে ?
এদিকে বিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে উইঘুর জনগোষ্ঠীর মানুষেরা প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করে। নিজেদের স্বায়ত্বশাসনও কায়েম হয। এরপর ১৯৪৯ সালে চিনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কিছুদিন পর চিনের কমিউনিস্ট সরকার উইঘুরদের বৃহত্তর চিনের সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয় বলে খবর। টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতে উইঘুরেরা চিনের প্রস্তাব মেনেও নেয়। আর তারপর থেকেই যত সময় গড়িয়েছে তত বেড়েছে নির্যাতন। শেষ দশকে এই অত্যাচার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যায়। আঘাত হানা হয় তাদের ধর্মী শিক্ষা দিক্ষার উপরেও। ভেঙে দেওয়া হয় উপাসনা স্থল।
জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু নারীদের উপর চলছে অকথ্য অত্যাচার, বাধ্য করা হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণে
সূত্রের খবর, নিয়মিতভাবে জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু নারীদের গর্ভ পরীক্ষা এবং বন্ধ্যাত্ব করতে বাধ্য করেছে চিনের প্রশাসন। বেশি সন্তান থাকার কারণে বহু মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর হয়েছে। তিন বা তার বেশি সন্তান থাকলে বিপুল পরিমাণ জরিমানাও ধার্য করা হয়। পাশাপাশি তা দিতে ব্যর্থ হলে বাবা-মায়েদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জিনজিয়াংয়ের তিন লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে ২০১৭ সাল থেকে দীর্ঘ কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
গত বছরই জিনজিয়াংয়ে জন্মহার কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ
এদিকে ভারত-চিন সংঘাতের আবহেও চিনের প্রধান পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জিনজিয়াং প্রদেশ। তিব্বত থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার অন্যতম সুগম পথ আকসাই। এই রাস্তায় যদি কোনোরকম বাধা পড়ে তবে চিনকে কারাকোরাম হয়ে বিকল্প পথে পৌঁছতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা ভারত যদি আকসাই চিনের দিকে এগোয়, জিনজিয়াং প্রদেশের উপর চিনের ক্ষমতা কমে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে চিন সরকারের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এই প্রবল অত্যাচারের জেরে উইঘুর অধ্যুষিত হোতান ও কাসগার অঞ্চলে জন্মহার ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। জিনজিয়াং প্রদেশে গত বছরই জন্মহার কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। এমতাবস্থায় জিনজিয়াংয়ের উইঘুরদের উপর চিনের অত্যাচার নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্বই।
দখলদারির যুগ শেষ! লাদাখের মাটিতে দাঁড়িয়ে চিনকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর