For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

পান্তা ভাত যেভাবে জয় করেছিল বাংলার প্রথম ইংরেজ শাসকদের হৃদয়

ওয়ারেন হেস্টিংস যৌবনে চরম বিপদের মুখে লুকিয়ে ছিলেন এক বাঙালী বন্ধুর বাড়ি, আর তাকে পান্তা ভাত খাইয়ে পরবর্তী জীবনে রাজা বনে গিয়েছিলেন সেই বন্ধু।

  • By Bbc Bengali

গরীব কৃষকের গামছায় বাধা মাটির সানকির পান্তা ভাত একবিংশ শতাব্দীতে এসে পহেলা বৈশাখে ধনীর ডাইনিং টেবিলে যে কৌলীন্য অর্জণ করেছে, তা অতি সাম্প্রতিক এক ইতিহাস।

কিন্তু তার আগেই সাধারণ জলসিক্ত এই মামুলি খাবার অন্তত একজন ইংরেজ শাসকের মন হরণ করতে পেরেছিল। তিনি হলেন ব্রিটিশ আমলে বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস।

নবাব যখন সিরাজ-উদ-দৌলা

সতেরশো ছাপ্পান্ন সালের কথা। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব তখন সিরাজ-উদ-দৌলা।

ইতিহাসবিদ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া নবাব সিরাজের জীবনীমূলক এক বইতে লিখছেন, বাংলায় বাণিজ্য করতে আসা ইংরেজ বণিকরা সে সময় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছিল।

কলকাতা এবং কাশিমবাজার কুঠিতে তারা দুর্গ নির্মাণ করেছিল।

বিদেশি বণিকদের এধরনের আচরণে ক্ষুব্ধ সিরাজ বেশ কয়েকবার দূত পাঠিয়ে দুর্গ ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন।

কিন্তু ইংরেজ বণিকরা সে কথায় কর্ণপাত তো করেই নি, উপরন্তু তারা নবাবের দূতদের অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।

আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া লিখছেন, শেষ পর্যন্ত সিরাজ কলকাতা আক্রমণ করলেন।

কাশিমবাজার কুঠি আক্রমণ

তবে কলকাতা আক্রমণের আগে ১৭৫৬ সালের ২৪শে মে তিনি ৩,০০০ অশ্বারোহী সৈন্য পাঠিয়ে দিলেন কাশিমবাজারের ইংরেজ কুঠি (ফ্যাক্টরি) দখল করার জন্য।

সে সময় কাশিমবাজার কুঠিতে ছিল বেশ কয়েকজন ইংরেজ অফিসারসহ ৩৫ জন শ্বেতাঙ্গ সৈন্য, ৩৫ জন তেলেঙ্গা সৈন্য এবং ইংরেজ কর্মচারীদের পরিবার।

তবে নবাবের বাহিনীর ওপর নির্দেশ ছিল কাশিমবাজার কুঠি শুধু অবরোধ করে রাখতে। অন্য কিছু না করতে।

আরও পড়তে পারেন:

ওয়ারেন হেস্টিংস

শেষপর্যন্ত দুর্গের ভেতরে থাকা কাশিমবাজার কুঠির প্রধান ওয়াটস নবাবের কাছে মুচলেকা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।

জর্জ রবার্টস গ্লিগের লেখা ওয়ারেন হেস্টিংসের জীবনীসহ অন্যান্য বই থেকে জানা যাচ্ছে, ইংরেজ কর্মকর্তাদের সপরিবারে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ কারাগারে। মহিলাদের স্থান নবাবের জেনানা মহলে।

আটক ইংরেজদের একজন ছিলেন পরবর্তীকালে বাংলার গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস।

সে সময়ে কাশিমবাজারের ডাচ ফ্যাক্টরি বা কুঠির দায়িত্বে ছিলেন মি. ভার্নেট।

তিনি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে অনুরোধ করলেন হেস্টিংসকে ছেড়ে দিতে। কারণ তিনি ছিলেন কোম্পানির একজন সামান্য কর্মচারী।

সিরাজ ডাচ ফ্যাক্টরির প্রধানের এই অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে হেস্টিংসকে মুক্তি দিলেন।

কারাগার থেকে বেরিয়েই হেস্টিংস সোজা চলে যান কাশিমবাজারে।

ওদিকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশাল সামরিক বাহিনী কলকাতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শুনে ইংরেজ কোম্পানির সবাই পালিয়ে চলে যায় ফলতায়।

ওয়ারেন হেস্টিংস কাশিমবাজারে থেকে নবাব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে গোপনে তা পাঠাতে থাকেন ফলতায়।

কিন্তু তার গুপ্তচরবৃত্তির খবর ফাঁস হয়ে যায় এবং নবাব সিদ্ধান্ত নেন হেস্টিংসকে আবার গ্রেফতার করবেন।

এই খবর জানতে পেরে হেস্টিংস কাশিমবাজার ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু নবাবের রাজ্যে পালাবেন কোথায়? যাবেনই বা কতদূর?

বাঙালী বন্ধু কৃষ্ণকান্ত নন্দী

শেষ পর্যন্ত তিনি হাজির হলেন তার বাঙালী বন্ধু কৃষ্ণকান্ত নন্দীর কাছে।

উইকিপিডিয়ায় কৃষ্ণকান্ত নন্দী সম্পর্কে বলা হয়েছে, তার পরিবার বর্ধমানের সিজনা গ্রাম থেকে এসে বসবাস করছিলেন কাশিমবাজারের কাছে শ্রীপুরে। সে সময় কাশিমবাজার ছিল একটা প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র।

কাশিমবাজারে নন্দী পরিবার প্রথম দিকে মুদি দোকানদারি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও পরে তুলা, লবণ এবং রেশমের ব্যবসায় অর্থলগ্নি করেছিল।

ইংরেজদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে ইংরেজ কোম্পানিতে কৃষ্ণকান্ত নন্দী মুহুরির চাকরি পান।

ওয়ারেন হেস্টিংস, বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল (বড় লাট)
Getty Images
ওয়ারেন হেস্টিংস, বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল (বড় লাট)

প্রায় একই সময়ে নিম্নপদস্থ পদে চাকরি নিয়ে কাশিমবাজারে এসে হাজির হন ওয়ারেন হেস্টিংস।

কৃষ্ণকান্ত এবং ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন সমবয়সী। সেই থেকে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

কৃষ্ণকান্ত হেস্টিংসকে প্রথম ক'দিন লুকিয়ে রেখেছিলেন তাদের এক মুদি দোকানে।

এরপর নবাবের গুপ্তচরদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখান থেকে তাকে সরিয়ে নিয়ে তোলেন নিজের বাড়িতে।

পান্তা ভাত আর কুচো চিংড়ি

প্রথম দিন দোকানে কোন উপযুক্ত খাবার না পেয়ে কৃষ্ণকান্ত নন্দী ওয়ারেন হেস্টিংসকে খেতে দিয়েছিলেন পান্তা ভাত আর কুচো চিংড়ি।

লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স-এর অধ্যাপক তীর্থংকর রায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। এতে তিনি জানাচ্ছেন, ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর অধীনে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করা হয়।

ওয়ারেন হেস্টিংস নিযুক্ত হন কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল বা বড়লাট পদে।

কিন্তু ভারতের ভাগ্যবিধাতা হয়েও তিনি তার দুর্দিনের খাদ্য পান্তা ভাতের মাহাত্ম্য ভোলেননি। বড়লাট হয়েও নিয়মিত পান্তা ভাত আর কুচো চিংড়ি খেতেন।

হেস্টিংসের পলায়ন আর তার পান্তা ভাত খাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে সে কালের মানুষ মুখে মুখে যে ছড়া বেঁধেছিল তা ছিল এরকম:

হেস্টিংস সিরাজ ভয়ে হয়ে মহাভীত/ কাশিমবাজারে গিয়া হন উপনীত।

কোন স্থানে গিয়া আজ লইব আশ্রয় / হেস্টিংসের মনে এই নিদারুণ ভয়।

কান্তমুদি ছিল তার পূর্ব পরিচিত / তাহারি দোকানে গিয়া হন উপনীত।

মুস্কিলে পড়িয়া কান্ত করে হায় হায় / হেস্টিংসে কি খেতে দিয়া প্রাণ রাখা যায়?

ঘরে ছিল পান্তাভাত আর চিংড়ি মাছ / কাঁচা লঙ্কা, বড়ি পোড়া, কাছে কলাগাছ।

সূর্যোদয় হল আজি পশ্চিম গগনে হেস্টিংস ডিনার খান কান্তের ভবনে।

ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার বড়লাট হয়েও কিন্তু দুঃসময়ের বন্ধু কৃষ্ণকান্ত নন্দীকে ভুলে যাননি।

তিনি কৃষ্ণকান্তকে তার বানিয়া বা কমার্শিয়াল এজেন্ট নিয়োগ করেন। অর্থাৎ হেস্টিংস তার কাছ থেকেই টাকাপয়সা ধার করতেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে কাজ করে এবং রেশমের ব্যবসা করে কৃষ্ণকান্ত প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হন।

গাইবান্ধার জমিদার

বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, হেস্টিংসের পত্তনী ব্যবস্থার (১৭৭২-১৭৭৭) অধীনে কৃষ্ণকান্ত নন্দী প্রথমে বাহারবন্দ পরগণার (বর্তমান গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা) জমিদারি লাভ করেন।

বাহারবন্দসহ অনেক পরগণা তার কাছে পত্তন দেয়া হয়।

পরবর্তীকালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আওতায় সুবিধাজনক রাজস্ব দাবিতে তাঁকে পরগণাটির জমিদারি বন্দোবস্ত দেয়া হয়।

শুধু তাই না, চিরস্থায়ী প্রথার সুযোগ নিয়ে হেস্টিংস তাকে উত্তর ও পশ্চিম বাংলায় বহু জমিদারি কিনতে সাহায্য করেন।

এমনকি নাটোরের রানি ভবানীর সম্পত্তির একাংশ দখল করে হেস্টিংস সেটি বন্ধু কৃষ্ণকান্তের হাতে তুলে দেন।

কৃষ্ণকান্ত নন্দী এতটাই ধনশালী হয়েছিলেন যে তাকে কাশিমবাজারের রাজা খেতাব দেয়া হয়।

ওয়ারেন হেস্টিংস যখন বাংলা ছেড়ে চলে যান তখন তার সুপারিশ অনুযায়ী কাশিমবাজারের গভর্নর স্যার ফ্রান্সিস সাইকস্ও কৃষ্ণকান্তকে তার কমার্শিয়াল এজেন্ট বা বানিয়া নিয়োগ করেন।

এভাবেই সামান্য পান্তাভাতের বদৌলতে বদলে যায় কিছু মানুষের ভাগ্য।

ভিডিও দেখতে পারেন:

English summary
The way Panta Bhat won the hearts of the first English rulers of Bengal
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X