For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

সৌদি আরবের আজওয়া, বেরহি ও মরিয়ম খেজুর যেভাবে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে

একটা সময় পর্যন্ত দেশি খেজুরের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি আদরণীয় ছিল বিদেশি খেজুর, বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে আসা খেজুর। গত কয়েক বছর ধরে সেই সৌদি আরবের বিভিন্ন জাতের খেজুর বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে।

  • By Bbc Bengali

সৌদি খেজুর
Getty Images
সৌদি খেজুর

বাংলাদেশে রোজার মাসে ইফতারে খেজুরের জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা বিপুল। সেখানে একটা সময় পর্যন্ত দেশি খেজুরের চেয়ে বেশি আদরণীয় ছিল বিদেশি খেজুর, বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে আসা খেজুর।

কেবল রোজার মাসকে উপলক্ষ করে টনকে টন খেজুর আমদানি হত প্রতি বছর। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেই সৌদি আরবের বিভিন্ন জাতের খেজুর বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে চাষিদের কাছে এসব খেজুর 'আরবি খেজুর' বা 'সৌদি খেজুর' নামে পরিচিত।

স্থানীয় বাজার এবং সুপার শপে এখন বছরজুড়ে এই খেজুর পাওয়া যায়।

আরবি খেজুর কী আর কেমন?

বাংলাদেশে এক সময় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান এবং ভারত থেকে খেজুর আমদানি হত।

ভারতের মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূমে চাষ হওয়া খেজুরটি দেশি খেজুরের চেয়ে মাংসল ও মিষ্টি হত।

কিন্তু বাজারে জনপ্রিয় ছিল মধ্যপ্রাচ্যের খেজুরের কয়েকটি জাত। কিন্তু এগুলো বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যেত এবং সেটি দামী হবার কারণে সবার নাগালে ছিল না।

পৃথিবীতে প্রায় এক হাজারের বেশি খেজুরের জাত রয়েছে, এর মধ্যে সৌদি আরবে চারশো'র বেশি জাতের খেজুর উৎপাদন হয়।

বাংলাদেশে জনপ্রিয় জাতের মধ্যে আজওয়া, বেরহি, সামরান, জাহেদি, মরিয়ম, আনবারাহ, আসমাউলহাসনা, ইয়াবনি অন্যতম।

এর মধ্যে আজওয়া, বেরহি এবং মরিয়ম জাতের খেজুর বেশি চাষ হচ্ছে।

কৃষিবিজ্ঞানী এবং চাষিরা বলছেন, সৌদি খেজুর মূলত দেশি খেজুরের চেয়ে দেখতে কিছুটা লম্বা এবং মাংসল হয়ে থাকে।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সৌদি খেজুর আমদানি হওয়া সৌদি খেজুরের চেয়ে কিছুটা কম মিষ্টি।

অন্যদিকে আমদানি হওয়া সৌদি খেজুরের চেয়ে কম শুষ্ক হয় দেশে উৎপাদন হওয়া এসব সৌদি খেজুর।

আরবী খেজুর
Getty Images
আরবী খেজুর

দেশে উৎপাদন শুরু যেভাবে

কৃষি গবেষকেরা বলছেন, মূলত মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাত ধরেই দেশে সৌদি খেজুরের উৎপাদন শুরু।

বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ যারা শুরু করেছেন শুরুর দিকে তাদের প্রায় সবাই সৌদি আরব থেকে বীজ এবং চারা এনে গাছ লাগিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে প্রথম যারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সৌদি খেজুর চাষ শুরু করেন তাদের একজন মানিকগঞ্জের শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম।

সিংগাইরে ২০১৪ সালে তিনি প্রথম উৎপাদন শুরু করেন।

বাংলাদেশে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩-১৪ সালের দিকেই বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুরের চাষ শুরু হয়।

বিবিসিকে মি. হালিম বলছেন, কোন প্রযুক্তি বা রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই প্রক্রিয়াজাত করে সারা বছর বিক্রি করা যায়---এই ধারণা থেকে তিনি খেজুর চাষে উৎসাহী হন।

"আর বাজারে দেশি খেজুরের জনপ্রিয়তা কম, তাই সৌদি খেজুরের কথা চিন্তা করছিলাম।"

তিনি শুরুতে সৌদি আরব থেকে বীজ এনে চারা তৈরি করেন। আর এখন গাছ থেকে 'অফস্যুট' করা হয়, মানে গাছ থেকে নতুন চারা তৈরি করা হয়।

তবে চারা রোপণের পর অন্তত চার-পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়, তার আগে গাছে ফল আসে না।

কেন বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে সৌদি খেজুরের চাষ

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানা নিজাম বলেছেন, মূলত দুইটি কারণে বাংলাদেশে সৌদি খেজুরের চাষ দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এক, বাংলাদেশের আবহাওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক উষ্ণ হয়ে উঠেছে, অর্থাৎ গ্রীষ্মের ভাব বেশি সময় ধরে থাকে, যে কারণে সৌদি আরবের আবহাওয়া সহিষ্ণু ফল এখানে এখন সহজে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।

দুই, বাংলাদেশের মাটিতে এখন আগের চেয়ে লবনাক্ততার পরিমাণও অনেক বেড়েছে, যে কারণে এ ফলের ফলন ভালো হচ্ছে।

মূলত সেকারণেই দেশের কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে সৌদি খেজুর চাষ দ্রুত খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আরেকটি কারণ হচ্ছে খেজুর গাছ সাধারণত সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়।

যদিও বেলে ও বেলে-দো-আঁশ মাটিতে সহজে চাষ করা যায় এই খেজুর। কেবল নিশ্চিত করতে হবে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা যেন থাকে।

এখন কেবল মানিকগঞ্জ নয়, মাগুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের প্রায় ২০টি জেলায় এ খেজুর বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে, বিশেষ করে যেসব জায়গায় মাটি বেলে এবং দো-আঁশ ধরণের সেখানে।

সেই সঙ্গে সরকারের কৃষি বিভাগও জেলায় জেলায় এই খেজুর চাষে উৎসাহী করছে নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের।

কৃষি বিভাগ নিজেরাও বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ১৭টি আধুনিক উন্নত জাতের খেজুরের চারা আমদানি করে হর্টিকালচার সেন্টারে চাষ করছে এই খেজুর।

মজার বিষয় হচ্ছে, খেজুর গাছে নারী ও পুরুষ ভেদ আছে, পুরুষ গাছে ফল হয় না।

কিন্তু পরাগায়ণের জন্য পুরুষ গাছ দরকার হয়। খেজুর গাছের পরাগায়ণ পোকা-মাকড়, মৌমাছি কিংবা বাতাসের মাধ্যমে কমই হয়ে থাকে।

খেজুর
Getty Images
খেজুর

উচ্চ ফলন

ঢাকার বাজারে আজওয়া এবং মরিয়ম খেজুরের দাম মানভেদে ৮৫০-১২০০ টাকা।

মি. হালিম বলছিলেন, সৌদি খেজুরের একেকটি গাছে এক মৌসুমে জাতভেদে ১০০-৩০০ কেজি খেজুর ধরে।

তার বাগানে এই মূহুর্তে ১০ হাজার সৌদি খেজুরের গাছ রয়েছে।

এই লাভের সম্ভাবনাকে পুঁজি করে জনপ্রিয় হয়েছে এর চাষাবাদ।

মি. হালিম বলেছেন, চাহিদা কারণে সৌদি খেজুরের বীজ এবং চারার দামও অনেক।

তবে বীজ থেকে তৈরি চারায় প্রকৃত জাতের গুণাগুণ থাকে না বা কম থাকে বলে মনে করেন চাষিরা।

এ কারণে বীজের চেয়ে চারার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

একেকটি চারা দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়, তবে দাম নির্ধারিত হয় জাতের ওপর নির্ভর করে।

খেজুরের পুষ্টিগুণ

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসে দেয়া তথ্য বলছে, খেজুরে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস গুণাবলী রয়েছে। খেজুর হজম শক্তি বাড়ায়, রক্ত স্বল্পতা দূর করে, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়।

রক্তশূন্যতা, ডায়রিয়া এবং সুস্থ গর্ভধারণে এ ফল উপকারী বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

English summary
The way Azwa, Berhi and Maryam dates from Saudi Arabia are being cultivated in Bangladesh
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X