অন্যান্য নক্ষত্রের চেয়ে অনেকটাই কম জৌলুস সূর্যের, তারফলেই কি বেঁচে মনুষ্য জগৎ ?
অন্যান্য নক্ষত্রের চেয়ে অনেকটাই কম জৌলুস সূর্যের, তারফলেই কি বেঁচে মনুষ্য জগৎ ?
অন্যান্য মহাজাগতিক তারকার মত একেবারেই নয় আমাদের সূর্য। উজ্জ্বলতা হোক বা সূর্যের কলঙ্ক, যেকোনো তারকা ঘেঁষা বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে বেশ কয়েক কদম পিছিয়েই সে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এই কারণেই মানবজাতি এখনও টিকে আছে পৃথিবীর বুকে।
সৌরজগতের মধ্যমণির সম্পর্কে কি বলছেন বিজ্ঞানীরা
সৌরজগতের ঠিক মধ্যে নিউক্লিয়াসের ন্যায় বিরাজমান সূর্য। সূর্যের ব্যাস প্রায় ১.৪ মিলিয়ন কিলোমিটার। এর বহিরাবরণের উষ্ণতা প্রায় ৫,৫০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই চরম উষ্ণ হাইড্রোজেন-হিলিয়াম বল আজ থেকে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সৃষ্ট এবং বর্তমান সময়ে এটি সবে এর জীবনের অর্ধেক সময় পার করে এসেছে। ফলত সৌরজগতের স্থায়িত্ব যে এখনও বহু বছর, সে সম্বন্ধে সন্দেহ নেই।
কি বলছেন বিজ্ঞানীরা?
সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা সূর্যের ন্যায় বহিরাবরণের উষ্ণতা, নিজ অক্ষের উপর আবর্তনের সময় ও একই মাপ বিশিষ্ট ৩৬৯ টি নক্ষত্রের উপর গবেষণা করেন। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সংস্থার গবেষক টিমো রেইনহোল্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, সবকটি নক্ষত্রই সূর্যের থেকে প্রায় পাঁচগুণ অধিক উজ্জ্বল এবং সূর্যের এই উজ্জ্বলতা সূর্যের কলঙ্কের সাথে সরাসরিভাবে যুক্ত। তিনি আরও জানিয়েছেন, "উষ্ণতা ও আবর্তনের সময়ই নক্ষত্রকে শক্তি যোগায়। এই শক্তিই নক্ষত্রের চারিপাশে চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। বহিরাবরণে কলঙ্কের সংখ্যার সাথে যে উজ্জ্বলতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, তা আমরা অন্যান্য নক্ষত্রের সাথে সূর্যের তুলনা করেই বুঝতে পারি।"
সূর্যের একঘেয়েমি বৈশিষ্ট্যই আমাদের সুখবর ?
রেইনহোল্ডের কথায়, "অতি চঞ্চল সূর্য আমাদের বেঁচে থাকার জন্য মোটেও উপযোগী হত না। সূর্যের শক্তির তারতম্য হলে বিশ্ব আর বাসযোগ্য থাকত না। ফলে বলাই যায় সূর্যের একঘেয়েমি আমাদের জন্য উপযুক্ত।" বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্য অতিসক্রিয় নক্ষত্র হলে সূর্যের বহিরাবরণের উষ্ণতা বৃদ্ধি হতে পারত, ভয়ংকর প্লাজমা রশ্মির নিঃসরণ ঘটতে পারত। ফলত কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে মহাকাশযান-মহাকাশচারী, সবই ধ্বংস হত নিমেষে এবং ক্রমে বিশ্ব থেকে প্রাণের অবলুপ্তি ঘটত।
চিন্তার কথা বিজ্ঞানীদের মুখে
রেইনহোল্ড জানিয়েছেন, "প্রায় ৪০০ বছরের সৌর-ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার আওতায় আনা হয়েছিল, সূর্যের কারণে সংঘটিত গাছের রিং ও বরফখন্ডের প্রায় ৯০০০ বছরের ইতিহাস। গবেষণার ফলাফল চমকপ্রদ।" জানা গেছে, বর্তমানের থেকে অধিক সক্রিয় সূর্য কোনোকালেই ছিল না তবে ভবিষ্যতে অধিক সক্রিয় সূর্যের বৈশিষ্ট্য কেমন হতে চলেছে, সে বিষয়ে ধোঁয়াশায় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।