লকডাউনের প্রশংসা করলেও দেশবাসীকে মিথ্যা আশা নয়, ভারতকে সতর্ক করল দ্য ল্যানসেট
করোনা ভাইরাস মহামারি ভারত কেমন নিয়ন্ত্রণ করছে, সে প্রসঙ্গ জানাতে গিয়ে ল্যানসেট তথ্য প্রচারের বিষয়ে এই দেশের প্রশংসা করতে পারেনি। ল্যানসেট জানিয়েছে, কোভিড–১৯ পরিস্থিতিতে ভারত কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক বার্তা দিলেও মহামারির শুরুর দিকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানের ওপর বিশ্বাস না করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি মোটেও ভালো পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
তবে ভারতের বহু ভালো দিকও রয়েছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী ভারত যে কোভিড-১৯ সংক্রমণে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম দেশ সে বিষয়ে জানাতে ভোলেনি ব্রিটিশ জার্নাল। ভারতে ইতিমধ্যেই সংক্রমণের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৬ লক্ষ, যা জুন মাসের পর থেকে লকডাউন তুলে নেওযার পরই বৃদ্ধি হয়েছে। তবে জার্নালের পক্ষ থেকে এও জানানো হয়েছে যে বিশেষত এত বড় ও বৈচিত্র্যময় দেশে অনেক ক্ষেত্রেই ভালো সাড়া ফেলেছে। ভারতে দেশজুড়ে লকডাউন কার্যকর করা হয় মার্চ মাসে, যা হু-এর প্রশংসা পেয়েছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে তৃতীয় যত্নের বিধান বৃদ্ধি পেয়েছিল, যার মধ্যে ভেন্টিলেটর সহ বিশেষ যন্ত্র নিয়ে আসা। টেস্টিংয়ের সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারতই প্রথম যারা পুল টেস্টিংয়ের মতো উদ্ভাবনী চিন্তাকে নিয়ে আসে। এছাড়াও ভারত ভ্যাকসিন বিকাশ ও উৎপাদনের প্রচেষ্টায় রয়েছে, দেশীয় ভ্যাকসিন প্রার্থীর পাশাপাশি বিদেশি ভ্যাকসিনের উৎপাদনেও সিরাম ইনস্টিটিউটের মতো ফার্মা সংস্থাকে দেশ পাশে পেয়েছে।
ভারত বেশ কিছু বিষয় অদেখা করছে
কিন্তু অনেক অসুবিধা রয়ে গিয়েছে। করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি পতনশীল আয় এবং ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার সমান্তরাল সঙ্কটের সমাধান হয়নি। পরিযায়ী শ্রমিকরা দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। কোভিড-১৯-এর আগেই ভারতের জিডিপির পতন ঘটেছে। ল্যানসেট জানিয়েছে, তবে বছরের এপ্রিল-জুন মাসে প্রান্তিকে প্রায় ২৫ শতাংশ সঙ্কোচনের ফলে ভারত অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির একটিতে পরিণত হতে পারে। করোনার প্রকোপ শহরের প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে ছোট শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। তার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ত্রুটিগুলিও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। গ্রামের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অবনতি ও কয়েকটি ছোট বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষত অক্সিজেনের সঙ্কট দেখা দেয়।
জনস্বাস্থ্যের সতর্কতা মানতে হবে
ল্যানসেট জার্নাল জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে বহু মিথ্যে তথ্য এমনভাবে প্রচার হচ্ছে যার জন্য মাস্ক ও সামাজিক দুরত্বের মতো ওষুধবিহীন কার্যকর ব্যবহারকে হ্রাস করে। ভারতে এই মহামারিটি খুব বেশি দূরে নেই, যদি জনস্বাস্থ্যের সর্কতাগুলি মেনে না চলা হয় হয় তবে এ দেশেও হু হু করে মানুষ মরতে শুরু করবে ও অসুস্থতার এক সম্ভাব্য বোঝা দেশের ওপর চাপবে। জনগণের কাছে করোনা ভাইরাস নিয় সুস্পষ্ট ও সৎ যোগাযোগ ছাড়া এই মহামারিকে রোধ করা অসম্ভব।
নেতিবাচক খবর রোধে উদ্যোগ নিতে হবে মোদীকে
ল্যানসেটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচিত সংবাদমাধ্যমের কর্নধার ও সম্পাদকদের সতর্ক করে বলা যে নেতিবাচক খবর যেন সম্প্রচার না করা হয় কারণ বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট চাপের মধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন। ল্যানসেন আইসিএমআরের বৈজ্ঞানিক দাবি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ল্যানসেট জানিয়েছে, আইসিএমআরের অধ্যাপক বলরাম ভার্গবের চিঠিতে এ বছরের ১৫ অগাস্ট ভ্যাকসিন আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এই চিঠি রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত ও দেশবাসীর মনে অহেতুক আশা জাগিয়ে তুলেছিল। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারত যাতে স্বচ্ছতা রাখে সে বিষয়ে বারংবার বলেছে ল্যানসেট।