বিস্ফোরণ কিলাউয়ার প্রধান জ্বালামুখে! বাসিন্দারা খুঁজছেন পর্যটক
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টের সময় হাওয়াইয়ের কিলাউয়া আগ্নেয়গিরির মূল জ্বালামুখটি বিস্ফোরিত হয়েছে। ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের জেরে অন্তত ২৬ টি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।
গ্যাস মাস্ক-এ মুখ ঢেকে রাখতে হচ্ছে হাওয়াইবাসীদের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রশাসন থেকে সাবধান করা চলছিল। প্রায় প্রতিদিন নিত্যনতুন জ্বালামুখ প্রকাশিত হচ্ছিল হাওয়াই উপকূলের কিলাউয়া আগ্নেয়গিরির। আকাশ ঢেকে গিয়েছিল অগ্নুৎপাতের ছাইতে। বালির মতো গুঁড়ো সে ছাইতে মিশে ছিল শিলা, কাচ এবং স্ফটিক। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টের সময় আগ্নেয়গিরির মূল শিখরটিই বিস্ফোরিত হয়েছে। ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের জেরে অন্তত ২৬ টি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী অগ্ন্যুত্পাত। যদিও মাত্র কয়েক মিনিটই তার স্থায়ীত্ব ছিল। এরপরই সমগ্র এলাকাটি ঝাঁঝালো সালফারের গন্ধে ছেয়ে গিয়েছে। জানলা-দরজা বন্ধ রেখেও তার হাত থেকে মুক্তি মিলছে না বাসিন্দাদের। শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শিশু ও বৃদ্ধদের। সালফার গ্যাসের হাত থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করতে প্রশাসন থেকে গ্যাস মাস্ক বিলি করা হচ্ছে। ইতিমধ্য়েই প্রায় ২ হাজার মাস্ক দেওয়া হয়েছে বিগ আইল্যান্ডে আগ্নেয়গিরিটির আশপাশের এলাকায়।
কিন্তু ভূতাত্ত্বিকরা বলছেন, এভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে না। কারণ আগ্নেয়গিরির ধ্বংসলীলার এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু বলা যেতে পারে। তাঁদের দাবি এটির আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাসে ভাসমান ছাইয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে, এমনকী আরও বড় বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে। যাতে অনেক বড় বড় মাপের বোল্ডার ছিটকে আসতে পারে।
এত সাবধানতা সত্ত্বেও বাসিন্দারা বিশেষ ঘাবড়াচ্ছেন না। আসলে বৃহস্পতিবারের বড় মাপের বিস্ফোরণের পরও, যেরকম মনে করা হয়েছিল সেভাবে অগ্নুতপাতের ছাইতে চাপা পড়েনি বসত এলাকাগুলি। আসলে বেশিরভাগ ছাইই উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে জোরালো হাওয়া। সামান্য যে টুকু ছাই জমা হয়েছে জানলার কার্ণিশে, বা দেওয়ালের ফাটলে বাসিন্দাদের অনেকেই তা ছুঁয়ে দেখেছন সামান্য জ্বলুনি ছাড়া বিশেষ ক্ষতি হয়নি। তাই এলাকা ছাড়ার নামগন্ধ নেই তাদের মধ্যে। বরং তাঁরা অপেক্ষা করছেন, আবার কবে থেকে আসা শুরু করবেন পর্যটকরা।
একের পর এক ধারাবাহিক ভূমিকম্পে জেগে উঠেছে কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিটি। স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো ফুটেজেও দেখা গিয়েছিল, রাস্তার মাঝেই ফাটল থেকে ফোয়ারার মতো লাভা বেরোতে। ড্রোন-ফুটেজে ধরা পডে়ছিল আশপাশের জঙ্গল দিয়ে লাভা-স্রোত বয়ে যাওয়ার দৃশ্য। আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ ভাগে একটি ৪.৬ কম্পাঙ্কের ভূমিকম্পে কিলাউয়া আগ্নেয়গিরির 'পিউ ও' জ্বালামুখটি ধসে যায়। সেই থেকে সমানে অগ্নুৎপাত হয়ে চলেছে।
১৯২৪ সালে এক অগ্ন্যুৎপাতে প্রায় ১০ টন ওজনের ছাই ও পাথর উদগিরণ হয়েছিল। এই ঘটনায় এক ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন। সেই থেকে মাঝে মাঝেই গা ঝাড়া দিয়েছে এই আগ্নেয়গিরি।